জার্মানি আর নেদারল্যান্ডসের মহাদ্বৈরথকে বোধহয় সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা করেছেন রাইনাস মিশেলস। ডাচদের জগদ্বিখ্যাত টোটাল ফুটবলের স্রষ্টা। কিংবদন্তি নেদারল্যান্ডস ম্যানেজারের এক লাইনের উক্তি: এই দু’দেশের ফুটবল হল যুদ্ধ!
গত চার দশকে যখনই এই দু’দেশ মুখোমুখি হয়েছে উপমা আর বাস্তবে তফাত ক্রমেই অস্পষ্ট হয়েছে। দুর্দান্ত লড়াইয়ের লাভাস্রোত, ব্যক্তিগত স্কিলের বর্ণচ্ছটা আর ঐতিহাসিক স্কোরলাইনের সৌজন্যে। পুরনো ক্ষত শুকিয়েছে দুই মেগাটিমই। দাগ পুরোপুরি মেলায়নি।
বুধবার খারকিভের মেটালিস্ট স্টেডিয়ামে জার্মানি বনাম নেদারল্যান্ডস তো আবার ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এর যুদ্ধ। যে গ্রুপে প্রথম ম্যাচে ডেনমার্কের কাছে অপ্রত্যাশিত হেরে ডাচরা এমনিতেই আধমরা হয়ে আছে। নেদারল্যান্ডস কোচ মারউইক কোনও ভনিতা না করে বলেছেন, “জার্মানি ম্যাচ আমাদের কাছে সব সময়ই স্পেশ্যাল। কিন্তু এ বার আর সে সব ভাবারও অবকাশ নেই। ইউরো কাপে টিকে থাকতে হলে ম্যাচটা স্রেফ জিততে হবে। অন্য আর কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু কাজটা কঠিনও।” |
‘কাজটা কঠিন’ অবশ্য ডাচ কোচ নিজেই করেছেন কিনা তা নিয়ে নেদারল্যান্ডস ড্রেসিংরুমে প্রশ্ন উঠছে। স্নাইডার তো বলেই দিয়েছেন, “দু’বছর আগের বিশ্বকাপের মতো পরিবেশ আর নেই আমাদের ড্রেসিংরুমে।” ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, শ্বশুর কোচ (মারউইক) আর জামাই অধিনায়ক (ফান বোমেল) দলের এই হালের জন্য দায়ী। ভাল না খেলা সত্ত্বেও বোমেলকে প্রথম দলে রাখার জন্য মারউইক বাদ দিয়েছেন ফান ডার ভার্টকে। ম্যাচ চলাকালীন বসিয়ে দেন নাইজেল দে জং-কে। যদিও ডাচ মিডিয়া মনে করছে, বসানো উচিত ছিল জামাই বোমেলকে। আবার ফান পার্সিকে খেলিয়ে যেতে গোলের মধ্যে থাকা হান্টেলারকে বসিয়ে রাখছেন। হারলে ইউরোয় গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় বিশ্বকাপ রানার্সদের এহেন বিপজ্জনক বাতাবরণে নেদারল্যান্ডস কোচের সাফ কথা, “ডেনমার্কের বিরুদ্ধে আমরা গোলের প্রচুর সুযোগ নষ্ট করে হেরেছি। তবে সেটা বাস্তব। খেলায় হতেই পারে। কিন্তু তার চেয়েও এখন বাস্তব, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই জার্মানির কাছে হার হজম করতে পারব না।”
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে ৯ বারের লড়াইয়ে জার্মানি জিতেছে ৩ বার। নেদারল্যান্ডস ২ বার। চারটে ম্যাচ ড্র। তবে এই দু’দেশের লড়াই মানে গোল হবেই। ০-০ ড্র আজ পর্যন্ত হয়নি এদের ম্যাচে। জার্মানি যদি ৫ বার ম্যাচে প্রথম গোল করে থাকে তো, নেদারল্যান্ডসও ম্যাচের শেষ গোল করেছে ৬ বার। যুদ্ধের তাপমাত্রাটা এতটাই চড়া!
আর সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন বলেই জার্মান কোচ জোয়াকিম লো যথেষ্ট সতর্ক। |
রোনাল্ডোর পর্তুগালের থেকে পুরো ৩ পয়েন্ট নিজেদের ঝুলিতে ভরতে পেরে ইউরোর ‘মারণ গ্রুপে’ মোটামুটি স্বস্তিতে আছে জার্মানি। লো-র মারউইকের মতো মরণবাঁচন পরিস্থিতি নয় বুধবারের মেগাম্যাচে। তবে জার্মান কোচ নাকি ডাচ-ডেনমার্ক ম্যাচে ড্র আশা করেছিলেন। লো-র ব্যাখ্যায়, তা হলে জার্মানিকে এতটা মরিয়া নেদারল্যান্ডসের মোকাবিলায় নামতে হত না।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ার থেকে জোহান ক্রুয়েফ। বার্তি ফোকস থেকে রুদ খুলিত দু’দেশের ফুটবল নক্ষত্ররা একমত। “জার্মানি বনাম নেদারল্যান্ডস মানে বিশুদ্ধ ফুটবল। স্কিল, বৈচিত্র, কল্পনাশক্তির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।”
বুধবারও যা দেখতে মুখিয়ে আছে ইউরোপ ছেড়ে গোটা বিশ্বফুটবল।
|
স্মরণীয় অতীত যুদ্ধ |
১৯৭৪: জার্মানি ২-১ জেতে। বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচটায় ক্রুয়েফের দল ফেভারিট হিসেবে শুরু করে দু’মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গেলেও পল ব্রাইটনার আর গার্ড মুলারের গোলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় বেকেনবাউয়ারের ।
১৯৭৮: ২-২ ড্র। বিশ্বকাপে গ্রুপের ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে জার্মানিকে আটকে দেয় নেদারল্যান্ডস।
১৯৮০: জার্মানি ৩-২ জেতে। ক্লাউস আলফসের হ্যাটট্রিকে জার্মানি ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে আরও এগিয়ে গিয়েছিল।
১৯৮৮: নেদারল্যান্ডস ২-১ জেতে। ইউরো সেমিফাইনালে মার্কো ফান বাস্তেন শেষ মিনিটে জার্মানজালে জয়ের বল ঢোকান।
১৯৯০: জার্মানি ২-১ জেতে। হামবুর্গের হাতাহাতির দু’বছর পর প্রথম মুখোমুখি। ক্লিন্সমান, ব্রেহমে গোলের পর সান্ত্বনা গোল কোমানের। |
|