তাদের ‘চেনা করিডর’ ধরে, মেচি নদী পার হয়ে নেপালের আলডাঙি এলাকায় সপ্তাহখানেক ধরেই ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটছিল তাদের। সোমবার রাতে সেই অনুপ্রবেশেরই ‘মূল্য’ চোকাতে হল ১১৮টি হাতির বিশাল দলটিকে।
সোমবার রাতে, নেপালের আলডাঙি গ্রামের কয়েকশো বাসিন্দা বাঁশ-লাঠির ঘায়ে শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, ভোজালির কোপে ছিন্নভিন্ন করল বছর দেড়েকের এক হস্তিশাবককে। গ্রামবাসীদের এক নলা বন্দুক থেকে নাগাড়ে ছোড়া গুলিতে গুরুতর জখম হয়েছে আরও অন্তত তিনটি হাতি। তাদের একটি আহত হয়ে নেপালের জঙ্গলেই পড়ে রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। কার্শিয়াঙের ডিএফও ওয়াই টি এডেন বলেন, “নেপাল বন দফতরের কর্তাদের কাছ থেকে একটি শাবককে পিটিয়ে মারার খবর পেয়েছি। আন্তর্জাতিক বিধি ভেঙে আমরা ওখানে গিয়ে শাবকটির দেহও উদ্ধার করতে পারিনি।”
নেপালের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিস (ঝাপা) সূত্রেও একটি হস্তি-শাবককে পিটিয়ে মারার খবর জানা গিয়েছে। নেপাল বন বিভাগের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “ফি বছর এই সময়ে ভারতের মহানন্দা অভয়ারণ্য থেকে হাতির দল বামুনডাঙি এলাকায় ঢোকে। কখনও গুলি কখনও বা বিষ মেশানো তির ছুড়ে গ্রামবাসীরা তাদের রোখারও চেষ্টা করে। গ্রামবাসীদের সচেতন করতে আমরা কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছি।”
তবে তা যে বিশেষ কাজে আসেনি, সোমবারের ঘটনা তা ফের প্রমাণ করল। গত বছরও নেপাল সীমান্ত পার হওয়ার খেসারত দিয়েছিল একটি হাতি। বন দফতরের হিসেব, গত পাঁচ বছরে সীমান্ত পার হওয়ার বলি হয়েছে ১১টি হাতি। গত বছরও হাতিদের এই ‘নেপাল-যাত্রা’ রুখতে ব্যবস্থা নিয়েছিল বন দফতর। উত্তরবঙ্গের তিনটি ‘এলিফ্যান্ট স্কোয়াড’ বছরের এই সময়ে দিবারাত্র টহল দিয়েছে ওই এলাকায়। বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রকৃতি-প্রেমী সংগঠনকেও কাজে লাগানো হয়েছিল। সাময়িক ভাবে লাগানো হয়েছিল বৈদ্যুতিক তারও। এ বার তা নেওয়া হল না কেন? বন বিভাগের সাফাই, চলতি বছরে ডিএফও-দের খরচ মেটানোর ‘অধিকার’ বন্ধ করে ট্রেজারির মাধ্যমে ওই বিল মেটানোর নয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ফলে গাড়ি ভাড়া, বৈদুতিক তার লাগানো, কুনকি হাতির খরচ, যাবতীয় ব্যয়ভার মেটানো হবে ট্রেজারির মাধ্যমে। বিল পাশ না-করলে সে টাকা দেবে না ট্রেজারি। এই দীর্ঘসূত্রিতার ফলে বন দফতরের এই ধরনের ‘জরুরি পরিষেবা’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে বন কর্তাদের একাংশের দাবি।
নেপালের হস্তিশাবকের পরিণতি না হলেও এ দিন সকালে মাকরাপাড়া চা বাগানের ফুট আটেক গভীর জলাধারে পড়ে গিয়েছিল মাস চারেকের অন্য একটি শাবক। তাকে বাঁচাতে গিয়ে সেই জলায় পড়ে যায় মা-হাতিটিও। শেষে বনকর্মীরা জাল দিয়ে মা ও শাবককে উদ্ধার করলেও সন্তানকে বাগানে ফেলেই অন্যদের সঙ্গে জঙ্গলে গা ডাকা দেয় মা-হাতিটি। প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টার শেষে বনকর্মীরা শাবকটিতে দলে ফেরান বলে জানিয়েছেন দলগাঁওয়ের রেঞ্জ অফিসার মানস আচার্য। |