পুরনো মুখদের যথাসম্ভব রেখে এবং তেমন তরুণ রক্ত না-এনেই তৈরি হল সিপিএমের কলকাতা জেলার নতুন সম্পাদকমণ্ডলী। চার জন বাদ গিয়ে ১৮ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন এসেছেন চার জন। তবে তাঁরা কেউই বয়সে ‘নবীন’ নন। দিলীপ সেন, রবীন দেব, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, নিজামুদ্দিন, রাজদেও গোয়ালা, মানব মুখোপাধ্যায়, অনাদি সাহু, দীপঙ্কর দে, কল্লোল মজুমদারের মতো কলকাতা জেলার পরিচিত নেতারা সকলে নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে বহাল আছেন। তবে বাদ-পড়াদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম উত্তর কলকাতার অসিতাঙ্গ গঙ্গোপাধ্যায়।
সিপিএম সূত্রে খবর, প্রাক্তন যুব নেতা অসিতাঙ্গবাবুর বিরুদ্ধে দলের মধ্যেই বহু অভিযোগ উঠেছিল। যার জেরে কমিশনও বসিয়েছিল সিপিএম। ক্ষমতা হারিয়ে দল যখন ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র চেষ্টা করছে, সেই সময় এমন ‘অস্বচ্ছ’ ভাবমূর্তির কাউকে নেতৃত্বে রাখতে চাননি বিমান বসু, রঘুনাথ কুশারীরা। তবে সিপিএমেরই একাংশের বক্তব্য, কলকাতা জেলা সিপিএমে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে অসিতাঙ্গবাবুর ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছিল। যার ‘মাসুল’ দিতে হল তাঁকে। দলের ওই অংশের বক্তব্য, ভাবমূর্তিই একমাত্র বিবেচ্য হলে রাজদেও গোয়ালার মতো নেতারাও বাদ যেতে পারতেন। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে মঙ্গলবার কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুও।
কলকাতার জেলা নেতৃত্বে নতুন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার (কেষ্ট) সরকার, আনোয়ারা মির্জা ও দেবব্রত বিন্দু। এর মধ্যে আনোয়ারা সংখ্যালঘু মহিলা মুখ হিসাবে জেলা নেতৃত্বে স্থান পেয়েছেন। পক্ষান্তরে, জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ গিয়েছেন প্রবীণ নেত্রী শিবানী সেনগুপ্ত। এ ছাড়া, কেষ্ট মিত্র এবং অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বয়সজনিত কারণে জেলা কমিটি গঠনের সময়েই ‘অব্যাহতি’ নিয়েছিলেন। নতুনদের মধ্যে তরুণবাবু কলকাতা জেলা এসফআইয়ের প্রাক্তন নেতা এবং কেষ্টবাবু বেহালার জোনাল নেতা। দেবব্রতবাবু এসেছেন সিইএসসি-র ইউনিয়নে কাজ করার অতীত নিয়ে। সঙ্গে তাঁর সাংস্কৃতিক ‘ভূমিকা’ও রয়েছে। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যায়, কলকাতা জেলা সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখার কৌশলই নেওয়া হয়েছে। নবাগত ৪ জনের দু’জন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী এবং অপর দু’জন অন্য গোষ্ঠীর ‘অনুগামী’ বলে জেলা রাজনীতিতে পরিচিত!
অসিতাঙ্গবাবুর মতো নেতাকে বাদ দিলেও তরুণ কাউকে কেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে ঠাঁই দেওয়া হল না, তা নিয়ে অবশ্য দলেই প্রশ্ন আছে। কলকাতা পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচীকে এ বার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন মহিলা মুখ হিসাবে তুলে আনা হল না, প্রশ্ন আছে তা নিয়েও। গোষ্ঠী-রাজনীতিতে বিভক্ত কলকাতা সিপিএমে জেলা সম্পাদক বদলের প্রক্রিয়ায় যেখানে হাত দেওয়াই যাচ্ছে না, তাতে এমন ঘটনা অবশ্য একেবারে ‘অপ্রত্যাশিত’ নয়! |