রবীন্দ্রভারতীতে নির্বিচার তাণ্ডব ছাত্রদের
কঠোর মুখ্যমন্ত্রী, টিএমসিপি নেতা-সহ ধৃত পাঁচ
ক বছরেও ছবিটা বদলায়নি!
গত বছর ২৯ জুলাই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক দল ছাত্রের উন্মত্ততায় প্রাণ হারিয়েছিলেন এক কর্মী। মঙ্গলবার সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই ফের তাণ্ডব চালাল এক দল ছাত্র। রেহাই পেল না উপাচার্যের ঘরও। এক বছর আগের ঘটনাটিতে দায় কার, তা নিয়ে চাপানউতোর ছিল। কিন্তু এ দিন ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগের তির সরাসরি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দিকে।
তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় উপাচার্যের ফোন পেয়ে পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক রং যা-ই হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা বুঝিয়ে দিতে বলেন। ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশ পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করে। তার মধ্যে রবীন্দ্রভারতীর টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকও রয়েছেন।
উপাচার্য চিন্ময় গুহের বক্তব্য, অনেক দিন ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ মারফত ঘুরপথে বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি হয়ে আসছে। ক্রমে এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে রবীন্দ্রভারতীতে। এর পিছনে মোটা অঙ্কের লেনদেনের অভিযোগও অনেক কালের। এ বার স্নাতক স্তরে ভর্তির মরসুমের শুরুতে গত ১ জুন ছাত্র ভর্তি কমিটির বৈঠকে বিভাগীয় প্রধানদের উপস্থিতিতে আলোচনা করে প্রতিটি বিভাগের আসন-সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ঘুরপথে কোনও ভর্তি হবে না। এবং ভর্তি হবে অনলাইনে।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘরের ছবি তুলে রাখছেন পুলিশ অফিসারেরা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, উপাচার্য আসন-সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে পড়ুয়ারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই অভিযোগ তুলেই এক দল ছাত্র এ দিন কার্যত রণক্ষেত্র করে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসকে। বিশ্ববিদ্যালয়-সূত্রে খবর, বেলা বারোটা নাগাদ ওই ছাত্ররা লোহার রড, ক্রিকেটের স্টাম্প ইত্যাদি নিয়ে উপাচার্যের সচিবের ঘরে এবং তার পাশের কনফারেন্স রুমে হামলা চালায়। ভেঙে ফেলা হয় কাচের দরজা, মাইক্রোফোন। বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হন কর্মীরাও। ওই ছাত্ররা উপাচার্যের উদ্দেশে অকথ্য গালিগালাজ করে বলেও অভিযোগ। উপাচার্যের অফিসঘর লণ্ডভণ্ড করে তারা। উপাচার্যের ঘরে বসানো প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা দামের সিসিটিভি-ও ভেঙে দেয়। এ সবের আগে অবশ্য সিসিটিভি-র কন্ট্রোল প্যানেলটিই তারা বন্ধ করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ, যাতে তাদের ‘কীর্তি’ ক্যামেরায় ধরা না পড়ে। পরে পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ক্যাম্পাসে বসানো হয় পুলিশি প্রহরা।
চিন্ময়বাবু বলেন, “এ বছর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এর ফলে এত বছরের বেআইনি ভর্তির ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভিমরুলের চাকে ঢিল পড়েছে এবং তার জেরেই ভাঙচুর। ওই ছাত্রেরা যখন সব কিছু ভেঙে ফেলছে, তখনই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে টেলিফোনে বিষয়টি জানাই। এমনও বলি যে, শোনা যাচ্ছে ওই ছাত্রেরা টিএমসিপি সমর্থক। একটু পরেই মুখ্যমন্ত্রী টেলিফোন করে জানান, ভাঙচুর চালানো ছাত্রদের রাজনৈতিক রং না দেখে তিনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।” পরে ঘটনাস্থলে যান ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মা। বিকেলে লালবাজারে জানানো হয়, ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অলিউর মণ্ডল এবং আসিকুর রহমান, ধীমান শীল, শশীভানু ও রাজা নামে মোট পাঁচ ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা এ দিন সন্ধ্যায় জানান, বিশৃঙ্খলার জেরে আপাতত রবীন্দ্রভারতীতে টিএমসিপি-র ইউনিটটির কাজকর্ম স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরে পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংগঠনের নেতৃত্ব ওই ইউনিটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের তরফে দুই ছাত্র নেতাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদের তাণ্ডবের পরেও রাতে উপাচার্য বলেছেন, “ভর্তি অনলাইনেই হবে, এবং যে আসন-সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে ঠিক ততগুলি আসনেই ভর্তি নেওয়া হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.