উত্তরের চিঠি
 
আগাছা বিনাশে বিপদও বাড়ছে
প্রজাপতি ভালবাসেন না এমন মানুষ কমই আছেন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপ এই সুন্দর পতঙ্গটিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত আমরা এদের আহার্য গাছগুলোকে ধ্বংস করে চলেছি। পরিকল্পিত বাগান তৈরির নামে বা বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার করতে গিয়ে আমরা যে গাছগুলোকে আগাছা বলে উপড়ে ফেলি, সেইগুলির বেশির ভাগই প্রজাপতির শূককীট দশা অর্থাৎ শুঁয়াপোকার খাদ্য। শুঁয়াপোকার উপদ্রব হবে ভেবে আমরা আমাদের আশেপাশের সজনে, শিউলি প্রভৃতি গাছগুলোকে রাখতে চাই না। কিন্তু এ রকম কিছু গাছেই ডিম পাড়ে মথ ও প্রজাপতি। আবার আমাদের পরিকল্পিত ফুলের বাগানে রঙ্গন, পুটুস, হাতিশুঁড়, মোরগফুল, অতসি প্রভৃতি দেশি ফুল গাছ বিদেশি ফুলগাছের পাশে ঠাঁই পায় না। অথচ প্রজাপতি এই সব ফুল গাছের টানেই হাজির হয়। প্রজাপতিকে আকর্ষণ করতে পারে এ রকম বিদেশি ফুল গাছের সংখ্যা খুবই কম। ছোট-বড় শহরগুলোতে প্রজাপতির সংখ্যা কমে আসার আর একটি কারণ হল দ্রুত পতিত জমির সংখ্যা কমে আসা। আগে এই সব পতিত জমিগুলোতেই দেখা যেত বনতুলসি, বনঅতসি, কুলেখাড়া, দুধলতা, আকন্দ, দণ্ডকলসের মতো দেশীয় আগাছার জঙ্গল।
ফুলের ওপর প্রজাপতি: এই দৃশ্য দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে।
যেগুলো ছিল বিভিন্ন ধরনের প্রজাপতির সুতিকাগৃহ এবং আকর্ষণ স্থল। যেমন বনঅতসি ও আকন্দ গাছের আশপাশে ভিড় করতো বিভিন্ন ধরনের টাইগার প্রজাপতি, কুলেখাড়া গাছে ডিম পাড়তে হাজির হতো পিকক পানাজির মতো প্রজাপতি আর দুধলতা, দণ্ডকলম, বিচুটির ঝোপে সহজেই দেখা যেত লাইম, এমিগ্রান্ট, ক্যাস্টর, প্রভৃতি প্রজাপতির ওড়াউড়ি। কিন্তু জমির দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাওয়ার পর প্রজাপতির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত এই সব পতিত জমিগুলি আজ উধাও। আজকাল আর আগের মতো দেশীয় আগাছার ঝোপ চোখে পড়ে না। এ ছাড়া ফলসা, শ্যাওড়া, কয়েতবেল, বেল, কুল, প্রভৃতি প্রজাপতির ডিম পাড়ার প্রিয় গাছগুলি কী শহরে, কী গ্রামে ক্রমশ কমে আসছে। যা প্রজাপতির বংশবৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই সব অতি প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালনকারী দেশীয় গাছ ও আগাছাগুলোর সম্বন্ধে নিজেদের উদাসীনতা ও নাক সিঁটকানো মনোভাব না ছাড়তে পারি তবে এই সুন্দর পতঙ্গটির অস্তিত্ব অদূর ভবিষ্যতে বিপদের মুখে পড়বে।
বিপন্ন প্রজাপতির অস্তিত্ব
শৈশবে আমরা কত রংবেরঙের প্রজাপতি ও ফড়িং ধরে আনন্দ উপভোগ করেছি। সবুজ ঝোপঝাড়ে, মাঠে ফুলবাগানে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি উড়ে বেড়াত। পাটকাঠির মাথায় কাঁঠালের আঠা মাখিয়ে লাল, নীল, হলুদ প্রজাপতি ও ফড়িং ধরা হত। কিন্তু এখন আর তাদের সে ভাবে দেখা যায় না। তাদের কথা হয়ত মনেও পড়ে না। কোথায় গেল তারা? এদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে আমাদের নানা কীর্তিকলাপ। যেমন ফুল বাগানের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কিন্তু ভেবে দেখি না, এতে কীট যেমন নষ্ট হয়, বিনাশ হয় প্রজাপতির লার্ভাও। কীটনাশকের প্রভাবে তারা বংশবিস্তার করতেও পারে না। পার্কগুলোয় লোকের ভিড়ে প্রজাপতিরা স্বাধীন ভাবে ঘুরতে পারে না। গাছের পাতায় প্রজাপতি ডিম পাড়ে। সেখানে লার্ভাগুলি বড় হলে সেগুলিকে বিষাক্ত শুঁয়াপোকা ভেবে মেরে ফেলা হয়। পরিবেশ পরিচ্ছন্নতার নামে ঝোপঝাড় কেটে ফেলায় প্রজাপতিরা থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে প্রজাপতি ও মথ।
আমাদের দেশেই যে শুধু এরা হারিয়ে যাচ্ছে তা নয়, বিদেশেও হারাচ্ছে। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে ঊনষাট রকমের প্রজাপতি ছিল। তাদের অনেকেই হারিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে সেখানে প্রজাপতি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুলবাগানে কেবল ফুল থাকবে তা কেমন করে হয়। ফুলে ফুলে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রজাপতি বসে মধু খেলে তবেই তা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
এই বিভাগে চিঠি পাঠান সম্পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে।
উত্তরের চিঠি,
আনন্দবাজার পত্রিকা প্রাঃ লিঃ,
১৩৬/৮৯ চার্চ রোড
শিলিগুড়ি- ৭৩৪৪০১



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.