|
|
|
|
দাসপুর উপনির্বাচন |
মমতার প্রার্থী মমতা, ভোট-ময়দানে শাসক দল |
বরুণ দে ও অভিজিৎ চক্রবর্তী • দাসপুর |
রাজ্যে ছ’টি পুরসভার ভোটের ফল প্রকাশের সাত দিনের মাথায় আগামী মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুুর বিধানসভার উপ নির্বাচনে আবার শক্তি পরীক্ষায় ‘শাসক’ তৃণমূল ও ‘বিরোধী’ বাম। কিছু দিন আগে প্রয়াত হয়েছেন দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক অজিত ভুঁইয়া। সাধারণ চেহারার মানুষটি ছিলেন দল অন্ত-প্রাণ। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আস্থাভাজন’। উপ নির্বাচনের প্রচারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে পাঠিয়ে তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, অজিতবাবু যে আচমকা চলে যাবেন, তিনি ভাবতে পারেননি।
প্রয়াত অজিতবাবুর জায়গায় তাঁর স্ত্রী মমতা ভুঁইয়াকে প্রার্থী করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। সমীকরণ খুব সহজ অকালপ্রয়াত স্বামীর সদ্যবিধবা স্ত্রীয়ের জন্য সহানুভূতি কুড়োন।
গত বছর অজিতবাবু প্রায় ২৫ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থীকে। ২০০১-এও এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন অজিতবাবু। মাঝে ২০০৬-এ হারলেও ২০০৯-এর লোকসভা ভোটে দাসপুর থেকেই ১০ হাজারেরও বেশি ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী। তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে তাই দাসপুর বাম-আমলেও ছিল অপেক্ষাকৃত ‘নিরাপদ’। এ বারও প্রার্থী মমতাদেবী সহ জেলা তৃণমূল নেতাদের দাবি, ‘‘বড় ব্যবধানেই জিতব।” |
|
শেষ বেলায় জোর কদমে প্রচারে মমতা ভুঁইয়া। নিজস্ব চিত্র |
দাবি যা-ই হোক, তবে দলের ভিতরে দ্বন্দ্ব নিয়ে কিছু চাপা উদ্বেগও রয়েছে তৃণমূল শিবিরে। অজিতবাবুর বিধবা স্ত্রীকে প্রার্থী হিসাবে মেনে নিতে না-পেরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের অনেকে প্রচারের শেষবেলাতেও গা-ঘামাননি বলে জানাচ্ছেন দলের অন্য একাংশ। কারণ, ওই নেতাদের কেউ কেউ প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। পরিস্থিতি সামলাতে বৃহস্পতিবার রাতে ঘাটালে এসে দফায় দফায় বৈঠক করতে হয়েছে মুকুলকে। বৈঠকের পরে তাঁরও অবশ্য দাবি, “ব্লকের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কোনও সমস্যা নেই।”
দাসপুরের সাধারণ তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা কিন্তু দেখছেন, গতবছরের মতো নেতাদের ‘এককাট্টা’ ভাবটা কোথাও একটা অনুপস্থিত। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় একমাত্র দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতি দলের হাতে আছে। তাতে সুবিধার চেয়ে বিপত্তিই বেশি বলে মনে করছেন নেতাদের একটা অংশ। দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গেই দল-নিয়ন্ত্রিত পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ওঠা ‘ব্যর্থতা ও দুর্নীতি’র অভিযোগেরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী মমতাদেবীকে। ভোটের মুখে তিনি নিজেও ঈষৎ ‘বিতর্কে’। মাধ্যমিক-উত্তীর্ণ না-হয়েও নাড়াজোল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হয়েছেন আটপৌরে গৃহবধূ।
তৃণমূল নেতৃত্বের মাথায় রয়েছে উপ নির্বাচনে ভোটদানের কম হারও। গত বছর ভোটারদের ৮২.২ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিশেষত পশ্চিম ভারতের অলঙ্কার শিল্পে কর্মরত দাসপুরের কয়েক হাজার কারিগর। ঘরে ফিরে উৎসবের মেজাজে তাঁরা ভোট দিয়েছিলেন। তার সিংহভাগ তাঁদের অনুকূলেই গিয়েছিল বলে দাবি জেলা তৃণমূল নেতাদের। উপ নির্বাচনে সেই কারিগরদের ঘরে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাতেই উদ্বিগ্ন তৃণমূল নেতাদের একান্তে বক্তব্য, “জিতলেও গত বারের মতো মার্জিন হয়তো হবে না।”
এই অবস্থায় এই উপ নির্বাচন থেকেই জেলায় ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ মরিয়া সিপিএম। গত বারের পরাজিত প্রার্থী প্রবীণ সুনীল অধিকারীকে সরিয়ে বছর চল্লিশের যুবকর্মী, সদ্য জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য-নির্বাচিত সমর মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে তারা। দলের সর্বক্ষণের কর্মী, আদতে দাসপুরের ভূমিপুত্র সমর গত এক মাসে চষে ফেলেছেন বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্ত। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর চার সদস্য উপ নির্বাচনে ‘বিশেষ দায়িত্ব’ পেয়েছেন। জেলা সম্পাদক দীপক সরকার নিজে একাধিক কর্মিসভা করেছেন। তবে দলের এক নেতার বক্তব্য, “সভা-সমাবেশের ফলে পরিবেশ অযথা উত্তপ্ত হোক, আমরা চাই না। গত বছর বিধানসভা ভোটের পর থেকে জেলায় তৃণমূলের সন্ত্রাস তো কম হয়নি। আমাদের অনেকে এখনও এলাকা-ছাড়া।” সমর তাই বাড়ি-বাড়িই ঘুরছেন। এমনকী, পরিচিত তৃণমূল বাড়িতেও। বলছেন, “এক বছর আগে আমাদের ছেড়ে গিয়েছিলেন, এমন অনেকেই কিন্তু রাজ্য সরকারের কাজকর্মে হতাশ। আমাদের দলের নীতি-আদর্শ, কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। সাড়াও পাচ্ছি।”
অজিতবাবু জিতেছিলেন ‘বিরোধী’ হিসেবে। তাঁর বিধবা পত্নী নেমেছেন ‘শাসকে’র তকমা গায়ে নিয়ে। ঘটনাচক্রে, যাঁর নামের সঙ্গে মিল স্বয়ং দলনেত্রীর! দাসপুরে এবার পরীক্ষা শাসক মমতার। উভয়তই। |
|
|
|
|
|