|
|
|
|
পুলিশি নিষ্ঠুরতার শিকার স্বামী |
হাইকোর্টের রায়ে বিচারের আশায় নমিতা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দ্রকোনা |
হাইকোর্টের গত ১৬ মে-র নির্দেশের পর সুবিচারের আশায় ফের বুক বেঁধেছেন চন্দ্রকোনা থানা এলাকার কাশকুলির নমিতা মণ্ডল। দু’বছর আগে এক-রাতে পুলিশের জিপ পিষে দিয়েছিল তাঁর স্বামী যতন মণ্ডলকে। তোলা তুলতে লরির পিছনে ধাবমান পুলিশ-জিপ গুরুতর আহত যতনকে নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি না-করিয়ে জিপে তুলে ফের লরির পিছনেই ছুটেছিল বলে অভিযোগ। মৃত্যু হয় যতনের। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশের কাছে সুরাহার দাবি জানিয়ে লাভ হয়নি। মেদিনীপুর আদালত থেকে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন নমিতা। আইনজীবী কল্লোল মণ্ডলের সওয়ালে জেলা-পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উচ্চ-আদালতেরও সংশয় তৈরি হয়। হাইকোর্ট সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ায় মনে জোর ফিরেছে নমিতার। যদিও সব কাগজপত্র না-পৌঁছনোয় এখনও তদন্ত শুরু করেনি সিআইডি।
|
নিহত যতন। |
তবে নমিতার আশা, “সিআইডি তদন্তে নিশ্চয়ই প্রকৃত ঘটনা সামনে আসবে।” স্বামীকে হারিয়ে বছর আটেকের ছেলেকে নিয়ে এখন কোনও মতে দিন কাটছে। ছেলে পীযূষ এখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন মায়ের। তবে তা পূরণ হবে কি না, সংশয়ে নমিতা। জলভরা চোখে বলছিলেন, “জানি না কী হবে। ওকে পড়াতে চাই। তবে আমার তো তেমন সামর্থ্য নেই!”
দিনটা মনে পড়লেই চোখে জল আসে নমিতার। ২০১০-এর ৮ এপ্রিল। স্বামী যতন মণ্ডল চাষবাস নিয়েই থাকতেন। এক ছেলে নিয়ে ভালই চলছিল নমিতা-যতনের সংসার। একটা ঘটনাই সব এলোমেলো করে দিল! ৮ এপ্রিল বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্ষীরপাইয়ে গিয়েছিলেন বছর বত্রিশের যতন। বাজার করতে। অভিযোগ, রাতে সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময়ে মনসাতলা চাতালের কাছে একটি পুলিশ-জিপ তাঁকে পিষে দেয়। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তোলা আদায়ের জন্য একটি লরির পিছনে দৌড়চ্ছিল ওই পুলিশ-জিপ। সেই সময়েই উল্টো দিক থেকে আসছিলেন যতন। ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যান। জিপের চাকায় পিষে যান। ঘটনাস্থলের কিছু দূরেই ক্ষীরপাই হাসপাতাল। অভিযোগ, গুরুতর জখম যতনকে সেখানে না নিয়ে গিয়ে জিপে তুলে ফের তোলা আদায়ের জন্য লরির পিছু ধাওয়া করেন পুলিশকর্মীরা। তোলা আদায় করে থানায় ফিরে আসে জিপ। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে যতনের। দেহটি থানার পিছনে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে অবশ্য দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বলে দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠায় পুলিশ। আরও পরে তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। |
|
বিচার-প্রার্থী নমিতা। |
বিচারের আশায় প্রথমে মেদিনীপুর আদালত এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নমিতা। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-পুলিশ অবশ্য নমিতাদেবীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশের দাবি, লরির ধাক্কায় যতনের মৃত্যু হয়। নিহতের দাদা ক্ষুদিরাম মণ্ডলের কিন্তু বক্তব্য, “ঘটনার সময়ে ওই রাস্তা দিয়েই আসছিলেন আমাদের পরিচিত দু’জন। তাঁদের কাছ থেকেই আমরা সব কিছু জানতে পারি। থানায় গেলে প্রথমে পুলিশ অবশ্য বলেছিল, তারা নাকি কিছু জানে না!” তাঁর কথায়, “ভাইয়ের সাইকেলটা ঘটনাস্থলের অদূরেই পড়েছিল। পুলিশ সাইকেলটা ফেলে দেহ জিপে তুলে পালায়।” ক্ষুদিরামবাবুরা তিন ভাই। যতন ছিলেন ছোট। ক্ষুদিরাম ও মেজো ভাই স্বপনও চাষাবাদ করেই সংসার চালান। বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।
নমিতা বলেন, “সেই সময়ে কতজন এসে কত প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু কিছুই হল না। ছেলেকে কী ভাবে মানুষ করব, বুঝতে পারছি না। একটা চাকরি পেলে ভাল হত (নিজে অষ্টম শ্রেণি-উত্তীর্ণ)।” তাঁর কথায়, “যারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে, তাদের শাস্তি চাই। সিআইডির উপর আস্থা রয়েছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা নিশ্চয়ই সামনে আসবে।” মণ্ডল-পরিবারের আত্মীয় অলোকরঞ্জন পাল বলছিলেন, “এ ক্ষেত্রে পুলিশই খুনি। ওই রাতে মৃতদেহটাই হয়তো ওরা গায়েব করে দিত! পারলে সিআইডি-ই দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারবে।”
|
ছবি: কিংশুক আইচ |
|
|
|
|
|