নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
পুজোর জন্য চন্দননগর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক পরিবারের লোকজনকে মারধর করে বাড়ির পাঁচিল ভেঙে দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মাস তিনেক আগের ওই ঘটনার পরে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে ৯ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও এখনও কেউ ধরা পড়েনি। উল্টে অভিযুক্তেরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই পরিবারটিকে ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
মানকুণ্ডুর যুগীপুকুর কুমোরপাড়া এলাকাটি চন্দননগর পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে। সেখানকার বাসিন্দা চঞ্চল পাল ও তাঁর পরিবারের লোকজনই এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তাঁরা এখন ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়ে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। পাল পরিবারের অভিযোগ, মাস তিনেক আগে পুজোর ‘অছিলা’য় জমি দখলের জন্য তাঁদের বাড়ির পাঁচিল ভেঙে ফেলে তৃণমূলের লোকজন। বাধা দিতে গেলে প্রহৃত হন বাড়ির মহিলারাও।
এলাকাটি তৃণমূল প্রভাবিত। কাউন্সিলর নিত্যানন্দ দত্তও তৃণমূলের। দিন কয়েক আগে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, যে জমিটি চঞ্চলবাবুরা নিজেদের বলে দাবি করছেন, সেই জায়গাটির এক দিক বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। দু’টি সিমেন্টের বেদি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ওই বেদিতে পুজো হয়। তাই নিয়মিত ফুল দেওয়া হয়। বেদির সামনে বাঁশের মাচা। ত্রিপল দিয়ে ছাউনি তৈরি হয়েছে। দিন-রাত সেখানে প্রহরার সঙ্গে আড্ডা চলে। রয়েছে বাঁশ দিয়ে তৈরি ক্যারমের স্ট্যান্ড। ওই মাচার পাশেই রয়েছে পাল পরিবারের পানীয় জলের কল।
পাল পরিবারের এক সদস্যা বলেন, “আমরা আতঙ্কে ভোরের অন্ধকার থাকতে এই গরমে দিনে একবার মাত্র জল নিচ্ছি। গালিগালাজ আর কটূক্তি করা হচ্ছে সমানে।” পরিবারের আর এক সদস্য জানান, জমির পাশেই মিটার-বক্স এবং ‘ফিউজ’ রয়েছে। অনেক সময় রাতের দিকে ‘ফিউজ’ খুলে দেওয়া হচ্ছে। ওই পরিবারেরই এক প্রৌঢ়া বলেন, “জমিটি আমাদের। কিন্তু আমরা দখল করে রয়েছি, এ কথা বলে পুজোর জায়গার জন্য কাউন্সিলর সালিশি করতে এসেছিলেন। আমরা জমি দিতে রাজি হইনি। তাই অত্যাচার। পুরসভা, ভূমি দফতর সব বিভাগেরই প্রয়োজনীয় নথিপত্র আমাদের রয়েছে। এর পিছনে তৃণমূলের লোক থাকায় পুলিশ-প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটেছে।”
এই পরিস্থিতিতে পাল পরিবার এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরণাপন্ন হওয়ার কথা ভাবছেন। ওই পরিবারের লতিকা পাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাজে আমরা আশাবাদী। তিনি পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনৈতিক দল দেখতে বারণ করেছেন। কিন্তু আমরা বিচার পাচ্ছি কোথায়? অপরাধ না করেও প্রতিদিন সাজা পাচ্ছি। আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। অপরাধীরা নির্ভয়ে ঘুরছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব বলে ভাবছি।”
পাল পরিবারের সব অভিযোগই উড়িয়ে ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, “ওই জমি পাল পরিবারের নয় বলে জানিয়েছেন ওই পাড়ার লোকই। জমিটির অন্য শরিক রয়েছে। ওঁদের মারধর বা অত্যাচার করা হয়নি। ওঁরা ঠিক বলছেন না। পাড়ার লোকেরাই ওই ঘটনায় যুক্ত।” অভিযুক্তদের মধ্যে তাপস সাঁতরা বলেন, “ওঁদের উপর অত্যাচার হয়নি। পাড়ার সকলে ওই পরিবারটির বিরুদ্ধে। ওঁরা জমিটি দখল করেছেন। তবে জমিটি কার আমি ঠিক বলতে পারব না।” তবে, ওই এলাকারই আর এক তৃণমূল নেতা মেনে নেন, “সিপিএম ছেড়ে দলে আসা কয়েক জন জমি দখলের ঘটনায় যুক্ত। এতে দল কালিমালিপ্ত হচ্ছে।” একই বক্তব্য ওই পাড়ার কয়েক জনেরও।
তৃণমূলের হুগলির কার্যনিবাহী সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য বলেন, “আমাদের নেত্রী বার বার সকলকে সতর্ক করছেন, জমি দখল বা অন্য কোনও অনৈতিক কাজে দলের কেউ যেন না জড়ান। মানকুণ্ডুতে কেউ যদি দলনেত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে কিছু করে থাকেন, তাঁদের দল ক্ষমা করবে না। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।”
এসডিপিও (চন্দননগর) তথাগত বসু জানিয়েছেন, ওই পরিবারটিকে জমির ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, “ওই জমির অন্য অংশীদার আছে।” কিন্তু বাড়ির পাঁচিল ভাঙা, মহিলাদের মারধরে অভিযুক্তদের এখনও কাউকে ধরা হল না কেন? পুলিশ কর্তার উত্তর, “ওটা আমরা দেখে নিচ্ছি।” |