নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
বর্ষার আগেই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বকপোতায় দামোদরের বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতির নির্দেশ দিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। শনিবার মানসবাবু এখানে বাঁধ মেরামতির কাজ দেখতে এসে দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের এই নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বন্যায় ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদরের বাঁধ ভেঙে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হয়। সব থেকে বড় ভাঙনটি হয় বকপোতায়। গত বছরও এখানে দামোদরের বাঁধ ভেঙে যায়। তার ফলে জল ঢুকে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক প্লাবিত হয়। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদয়নারায়ণপুরে বন্যা দুর্গত এলাকা দেখতে আসেন। বকপোতায় বাঁধ মেরামতি হবে বলে ওই সময়েই জানিয়ে দেন তিনি।
উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক পড়ে দামোদরের পশ্চিম দিকে। দামোদরের পূর্ব দিকে শক্তপোক্ত বাঁধ থাকলেও পশ্চিম দিকে সেচ দফতর বাঁধ তৈরি করেনি। এখানে সম্বল সাবেক আমলের জমিদারি বাঁধ। সেচ দফতরের পক্ষ থেকে দামোদরের পশ্চিম দিককে ‘স্পিল এলাকা’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
নিয়মানুযায়ী, সেচ দফতর ‘স্পিল এলাকা’য় বাঁধ মেরামতি বা তৈরি করতে পারে না। ফলে সাবেক জমিদারি বাঁধের সংস্কারও করে না সেচ দফতর। এ দিকে, বার বার দুর্বল জমিদারি বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে পড়ে প্রায় প্রতি বছর ভাসিয়ে দেয় উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লককে। বকপোতার কাছে আবার প্রতি বছর বাঁধে বিশাল ভাঙন হয়। বন্যার অন্যতম মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায় বকপোতার কাছে এই ভাঙন। |
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরেই সেচ দফতর বকপোতায় দামোদরের বাঁধের ভাঙন পাকাপাকি ভাবে মেরামতির উদ্যোগ নেয়। দফতরের বক্তব্য, যেহেতু এটা ‘স্পিল এলাকা’, তাই বাঁধের উচ্চতা কোনও ভাবেই বাড়ানো যাবে না। তবে প্রতি বছর যে অংশটুকু ভেঙে যায় সেটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে এ বারের বন্যায় বাঁধের এই অংশটুকু আর ভাঙার সম্ভাবনা থাকবে না। সেচ দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “বকপোতার ভাঙন পাকাপাকি ভাবে মেরামত করা হলে বন্যার হাত থেকে উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লক অনেকটাই বাঁচবে।”
মাসখানেক ধরে সেচ দফতর বকপোতায় বাঁধ মেরামতির কাজটি করছে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২২ লক্ষ টাকা। টাকা সেচ দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সেচমন্ত্রী বলেন, “কাজের অগ্রগতি ভালই। টাকার কোনও অভাব হবে না। বর্ষার আগেই বাঁধ মেরামতির কাজ সেরে ফেলতে হবে।” বকপোতায় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা এবং আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র।
বকপোতা থেকে সেচমন্ত্রী আমতায় আসেন। দফতরের স্থানীয় কার্যালয়ে জেলার বিভিন্ন বিধায়কের সঙ্গে সেচের সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেন। সেচমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দফতরের বিশেষ সচিব, মুখ্য বাস্তুকার-সহ পদস্থ আধিকারিকেরা। এরপরে ওই দিনই সেচমন্ত্রী শ্যামপুরের গড়চুমুকে ৫৮ গেটে বৈদ্যুতিকরণের কাজ দেখতে যান। সেখান থেকে তিনি যান সরস্বতী নদী সংস্কারের কাজ দেখতে। সেচমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি প্রকল্পের কাজ সময়সীমার মধ্যে যাতে শেষ হয় তা দেখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |