গাড়িটিও ‘কনে’র
দাদার বন্ধুর সঙ্গে ‘সম্পর্ক’, যুবক খুনে আটক হবু স্ত্রী
বিয়ের দু’দিন আগে নিহত যুবক গুলাম হোসেন কুরেশির দেহ আন্দুলের ঝোপে পাওয়ার পর থেকে তাঁর হবু স্ত্রীর খোঁজ মিলছিল না। হত্যাকাণ্ডের প্রায় দু’দিন পরে, রবিবার বিকেলে গুলশন আরা নামে ওই তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ। মেটিয়াবুরুজের নাদিয়াল এলাকায় এক পরিচিত ব্যক্তির বাড়িতে গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন তিনি। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ইস্পাত রঙের যে-ন্যানো গাড়িতে করে এনে গুলাম হোসেনের দেহ ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেটি গুলশনেরই। খুনের রাতে হবু স্বামীকে তিনিই ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানায়। এই ঘটনায় গুলশনের দাদার এক বন্ধুরও খোঁজ চলছে। হাওড়ার (গ্রামীণ) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে গুলশনের দাদার এক বন্ধুই মূল অভিযুক্ত বলে আমাদের সন্দেহ।” শুক্রবার গভীর রাতে হাওড়ার আন্দুলে আড়গোড়ের ডাক্তারপাড়ায় একটি ঝোপে গুলাম হোসেনের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যে-গাড়ি থেকে দেহটি ওই ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তাতে এক মহিলাও ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গুলশন বা তাঁর পরিবারের কারও সন্ধান মিলছিল না। কিন্তু হবু স্বামীকে খুনের ঘটনায় ওই তরুণী নিজেকে জড়ালেন কেন? পুলিশি সূত্রের খবর, জাহিদ কুরেশি নামে এক যুবকের সঙ্গে গুলশনের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে জটিলতা ছিল। জাহিদই গুলশনের দাদার বন্ধু। গুলাম হোসেনের সঙ্গে বিয়ে পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরেও জাহিদের সঙ্গে ওই সম্পর্কের কারণেই গুলশন টানাপোড়েনে ভুগছিলেন বলে সন্দেহ। তদন্তে যে-সব সূত্র উঠে আসছে, তা থেকে পুলিশের ধারণা, গুলশনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ভেস্তে দিতেই গুলাম হোসেনকে খুন করা হয়েছে।
জাহিদ কী করে? এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক’-এর কথা কী ভাবে জানতে পারল পুলিশ? তদন্তকারীরা জানান, আন্দুলের বিলবাজারে জাহিদের মাংসের দোকান আছে। গুলাম হোসেনের গলার দু’ধারে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। তা খুটিয়ে দেখে তদন্তকারীদের অভিমত, কসাইয়ের পাঁঠা কাটার কায়দাতেই তাঁর গলায় মোক্ষম কোপ মারা হয়েছিল। তা ছাড়া ইস্পাত রঙের ন্যানো গাড়িটি জাহিদই উপহার দিয়েছিল গুলশনকে। শিবপুরের বাসিন্দা, পেশায় মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ গুলাম হোসেনকে আন্দুলে খুন করে ঝোপে ফেলে দেওয়ার পরে আততায়ীরা সেই গাড়িতে চড়েই পালায়। পরে, শনিবার সন্ধ্যায় নাদিয়ালে গাড়িটির হদিস মেলে। পুলিশ জানতে পেরেছে, গুলাম হোসেনও আগে থেকে জাহিদকে চিনতেন। শুক্রবার রাতে ফোনে ঠিক কী বলে তাঁকে বাড়ি থেকে বার করে আনা হয়েছিল, সেই ব্যাপারে তদন্তকারীরা এখনও নিশ্চিত নন। তবে তাঁরা জানান, ফোনটা করেছিলেন গুলশনই। হবু স্ত্রীর ডাক পেয়েই ওই যুবক বাড়ি থেকে বেরিয়ে সটান গাড়িতে উঠেছিলেন বলে মনে করছে পুলিশ।
খুনের সময়ে বা পরে ঠিক কত জন ছিল ওই ন্যানো গাড়িতে?
এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের খোঁজে আছে পুলিশ। সেই জন্য শুক্রবার রাতে গাড়িটা আন্দুল থেকে কোন পথে নাদিয়ালে পৌঁছেছিল, তা দেখছে তারা। নাদিয়াল থানা এলাকাতেই গুলশনের বাড়ি। শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ গুলাম হোসেনকে ঝোপে ফেলে দিয়ে আততায়ীরা আন্দুলের আড়গোড়ের ডাক্তারপাড়া থেকে গাড়িতে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জেনেছে পুলিশ। তাদের ধারণা, তার পরে গাড়িটি বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে কলকাতায় ঢোকে। আততায়ীদের নিয়ে খিদিরপুর হয়ে নাদিয়ালের দিকে যায় সেটি। বিদ্যাসাগর সেতুর টোল প্লাজা বা কলকাতা পুলিশের এলাকায় পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ট্রাফিক সিগন্যালের সিসিটিভি-র ফুটেজে ওই গাড়ির কোনও ছবি আছে কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। ওই ফুটেজে গাড়ির আরোহীদের কাউকে দেখা গেলে তদন্তে সেটা বড় ‘অস্ত্র’ হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.