‘বিড়ম্বনা’য় সিপিএম
প্রতারণার দায়ে ধৃত প্রাক্তন সাংসদের স্বামী ও জামাই
প্রতারণার অভিযোগে রাজ্যসভার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সরলা মহেশ্বরীর স্বামী ও জামাইকে গ্রেফতার করল বিধাননগর কমিশনারেট পুলিশ। বিধাননগর (উত্তর) থানা এলাকা থেকে রবিবার ভোর রাতে সরলাদেবীর স্বামী অরুণ মহেশ্বরী ও জামাই অমিতাভ কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ থাকায় সিআইডি-কে তদন্তভার নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। সিআইডি এর পরে ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে।
ধৃতদের রবিবার সল্টলেক মহকুমা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রাক্তন সাংসদ সরলাদেবী এবং তাঁর স্বামী অরুণ, দু’জনেই সিপিএমের সদস্য। তাঁদের জামাইয়ের অবশ্য দলীয় সদস্যপদ নেই। মহেশ্বরী পরিবারের বিরুদ্ধে জমি এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির ভূরিভূরি অভিযোগ আছে। তাঁদের জামাই এর আগে একাধিক বার গ্রেফতারও হয়েছেন। প্রতারণার অভিযোগে এ বার প্রাক্তন সাংসদের স্বামী ও জামাই গ্রেফতার হওয়ায় ফের বিড়ম্বনায় পড়ল সিপিএম। আয় বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগে মহেশ্বরীদের দফতর ও বাড়িতে আয়কর বিভাগ হানা দিলেও সরাসরি সরলার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘ দিন ধরেই গড়িমসি করেছে সিপিএম। তবে কিছু দিন আগে সরলা এবং অরুণ, দু’জনকেই দলের হিন্দি মুখপত্রের সম্পাদকীয় বোর্ডের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে আলিমুদ্দিন।
সরলাদেবীর স্বামী অরুণ মহেশ্বরী। নিজস্ব চিত্র
স্বামী ও জামাই গ্রেফতার হওয়ার পরে সরলার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তাঁর মোবাইল বেজে গিয়েছে। সিপিএমের তরফেও কেউ মুখ খোলেননি। প্রতারণা ছাড়াও বাম জমানার শেষ দিকে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করে ‘অশ্লীল’ সিডি এবং তারও আগে শহরে ‘অশ্লীল’ এসএমএস প্রচারের ঘটনায় মহেশ্বরী পরিবারের দিকে আঙুল তুলে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী কমল গাঁধী। তার ভিত্তিতে বিমানবাবুরা কোনও পদক্ষেপ করেননি। এখন অরুণ ও অমিতাভ গ্রেফতারের পরে সেই ঘটনার তদন্ত ফের শুরু হলে দলীয় নেতৃত্ব কী অবস্থান নেন, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সিপিএমের অন্দরেই।
তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, শনিবার শঙ্কর ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী প্রগতি ভট্টাচার্য নামে এক দম্পতি বিধাননগর (উত্তর) থানায় দু’জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই অমিতাভ ও অরুণকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগকারী দম্পতি অরুণের সংস্থায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থায় কাজ করতেন। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে নানা অছিলায় তাঁদের সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হত। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ওই সই-করা কাগজ দিয়ে শঙ্কর ও প্রগতির নামে জাল প্যানকার্ড ও পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছিল। ওই ভুয়ো কাগজপত্রের মাধ্যমে ‘সিমার ল্যান্ড অ্যান্ড কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত সংস্থা খোলা হয়েছিল। যার মাধ্যমে বেনিয়মে নিউটাউন ও রাজারহাট এলাকায় জমি কেনা-বেচা করা হয়। ওই সংস্থার কাগজপত্রে অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবে শঙ্কর ও প্রগতির নাম উল্লেখ করা হয়। ২০০৯ সালে বেনিয়মে জমি কেনা-বেচা নিয়ে ভূমি সংস্কার দফতর শঙ্কর ও প্রগতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখনই প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগ পুরনো হলেও কোনও সুরাহা না-হওয়ায় গত সপ্তাহেই শঙ্করবাবু ফের আবেদন জানান রাজ্য পুলিশের ডিজি, ডিজি-সিআইডি এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারের কাছে।
ডিসি (সদর) সুব্রতবাবু বলেন, “শুধু শঙ্কর ও প্রগতি নয়। ওঁদের আর এক কর্মচারী দম্পতিও ধৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সোমনাথ বাগ ও সীমা বাগ নামে ওই দম্পতিরও একই অভিযোগ। তাঁদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। পরে ওই কাগজের মাধ্যমে একই ভাবে ভুয়ো প্যানকার্ড ও পরিচয়পত্র তৈরি করে সংস্থা খোলা হয়েছে।” অরুণ ও অমিতাভের বিরুদ্ধে দমদম, এয়ারপোর্ট ও বিধাননগর (উত্তর) থানায় বেআইনি ভাবে জমি কেনা-বেচার একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের জুন মাসে অমিতাভকে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার করে। সন্তোষ সিংহ নামে অমিতাভের গাড়ির চালক একই অভিযোগ দায়ের করেন। ডিসি এ দিন বলেন, “নানা থানায় অভিযোগ থাকায় এই ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।” সিআইডি-র একটি দল এ দিন বিধাননগর (উত্তর) থানায় গিয়ে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে। ডিআইজি-সিআইডি বিনীত গোয়েল বলেন, “ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ধৃতদের সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.