কঠিন কাজ। জটিলও বটে। বর্তমান সমাজে ‘জড়িবুটি’ এখনও বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্রাত্য। তা ছাড়া এই পথে রোগীদের ধৈর্য্যও কম। ফলে অনেকের ভাবটা এমন, ‘আয়ুর্বেদ তোমার দিন (প্রায়) গিয়াছে’।
না, পুরোটা যায়নি। আয়ুর্বেদ নিয়ে সেমিনার-লেখাপত্র চলছে অবশ্য। কিছু মানুষ, প্রতিষ্ঠান প্রাণ-মন জেদ নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন সাবেক ঔষধি নিয়ে। যে লড়াইয়ের একজন সৈনিক হলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার বেণীমাধব দাস অধিকারী। যাঁর পরিবারে ছিল তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য-নিকেতন’-এর পরম্পরা।
“হ্যাঁ, ঠাকুরদা লক্ষ্মীনারায়ণ দাস অধিকারী মন দিয়ে আয়ুর্বেদ চর্চা এবং চিকিৎসা করতেন। এখন যেখানে বাস
|
বেণীমাধব দাস অধিকারী |
করছি এই বেলদা থেকে দশ কিলোমিটার দূরে, পৈতৃক ভিটে বেঁটকুড়িয়া গ্রামে। ভাল সংস্কৃত জানতেন। গাছ-গাছড়া চিনতেন। মানুষজন নির্ভর করতেন ওঁর চিকিৎসায়। তবে নাড়ি ধরে ‘আরোগ্য নিকেতনের’ মশায়ের মতন ‘নিদান’ দিতেন না।” হাসলেন বেণীমাধব। আয়ুর্বেদকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় যাঁর নিরন্তর সংগ্রাম চলছে।
কলকাতার আনন্দমোহন কলেজ থেকে জীব বিজ্ঞানে স্নাতক। তার পরেই নেমে পড়লেন আয়ুর্বেদ এবং তার অনুসারী পথে। কলকাতার ‘জে বি রায় স্টেট আয়ুর্বেদ মেডিকেল কলেজ-হাসপাতাল’-এ পড়াশোনা। এম ডি (আয়ুর্বেদ) করেছেন ‘ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ’ থেকে। পরে হাওড়ার ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব স্পোটস মেডিসিন’ থেকে বিশেষ পাঠ। তবে এই পথে সবচেয়ে উপকৃত হয়েছেন প্রয়াত আয়ুবের্দাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্যের সংস্পর্শে এসে। সুযোগ পেয়েছেন তাঁর কাছে চার বছর হাতেকলমে কাজ করার। “জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, প্রণম্য শিবকালী ভট্টাচার্যের কাছে চার বছর সহকারী হিসেবে কাজ শেখা। রাজ্য সরকারের আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে কেটেছে দু’দশক। রুগি দেখেছি। বনে-বাদাড়ে ঘুরেছি। ক্লান্তিহীন ভাবে গাছ চিনেছি। দেখেছি, বুঝেছি, আদিবাসী মায়েরা কোন গাছ, কোন লতার রস তাঁর নিজের জন্যে বা তাঁর সন্তানের রোগসংকটে প্রয়োগ করেন। তাও শিখেছি। আয়ুর্বেদের সীমাহীন ভূমি পড়ে আছে ভারতে এবং এই বাংলায়।” গভীর ভাবে কথাগুলি বললেন ষাটোত্তীর্ণ আয়ুর্বেদিক বেণীমাধব।
অবশ্য এ সবের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি কাজ করছেন বেণীমাধব। পরবর্তী কেউ এই শিক্ষায় এলে যার সুফল পাবেন। অযোধ্যা পাহাড়ের চেনা নানা স্থানের ভেষজ গাছের ফটো-সহ তালিকা করছেন তিনি। সঙ্গে থাকছে আঞ্চলিক নাম। সংস্কৃত নাম এবং বিদেশি নামও। আর আছে আয়ুর্বেদের ওপর নানা প্রবন্ধ, বিশেষ করে চটজলদি গাছ-পাতা-ফুল-ফল-শিকড় চেনা এবং তার প্রয়োগ নিয়ে একাধিক রচনার সঙ্কলন। |