গরম বাড়তেই বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা তীব্র আকার নিয়েছে। বহু পুকুর, খাল শুকিয়ে গিয়েছে। অনেক এলাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে পানীয় জলের নলকূপ। ভোর হতেই বালতি-কলসি-হাঁড়ি নিয়ে গ্রামবাসীরা বেরিয়ে পড়ছেন পানীয় জলের খোঁজে। এই সুযোগে মহকুমা জুড়ে শুরু হয়েছে পানীয় জলের ব্যবসা।
মহকুমায় তিনটি পুরসভা এবং দশটি ব্লক। বিস্তীর্ণ এলাকা আর্সেনিক-কবলিত। গোটা বছরই ওই সব এলাকার মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে ভুগতে হয়। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন জায়গায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহের যে সব প্রকল্প গড়া হয়েছে, তার অনেকগুলিই আয়লার পরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। তার উপরে এ বার মাত্রাতিরিক্ত গরম সমস্যা আরও বাড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের জলকষ্ট মেটাতে বিভিন্ন ব্লকে ভূগর্ভস্থ জল তুলে ধরে রাখার জলাধার (ভ্যাট) রয়েছে। কিন্তু সেই সব জালাধার থেকে গ্রামবাসীরা প্রয়োজনীয় জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। বিভিন্ন জলাধারের সামনে দেখা যাচ্ছে গ্রামবাসীদের দীর্ঘ লাইন।
হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েতের সামশেরনগরের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ বিশুদ্ধ পানীয় জল পান না। |
সাহেবখালি, পুকুরিয়া, দুলদুলি, হাসনাবাদের কাঠাখালি, বোলতলা, সন্দেশখালির সেহেরা, রাধানগর, আতাপুর, কোড়াকাটি ইত্যাদি গ্রামের মানুষ জলাধারের জল সময় মতো না পাওয়ায় ভোর হতেই হাঁড়ি-কলসি নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। কখনও গ্রামবাসীরা নৌকায় বা হাঁটাপথে ৫-৬ কিলোমিটার দূরের নলকূপে গিয়ে জল আনছেন। ফলে, বাড়ি ফিরতে তাঁদের দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। আয়লার পরে অনেক জায়গায় ভূগর্ভস্থ জলের পাইপ ফেটে গিয়েছে। সেই সব পাইপ এখনও সারানো হয়নি। নোনা জলে নষ্ট হয়েছে পাম্প হাউস। গ্রামবাসীদের দাবি, দূরের নলকূপ থেকে যেটুকু জল মিলছে, তাতে তৃষ্ণা মেটানো গেলেও রান্নার জল নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জানিয়েছে, আয়লার পরে খারাপ হয়ে যাওয়া অধিকাংশ পাম্প হাউস চালু করা হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ৫টি প্রকল্পে ২২টি বড় নলকূপ, সন্দেশখালি-১ ব্লকে ৩টি প্রকল্পে ৭টি এবং সন্দেশখালি-২ ব্লকে ৫টি প্রকল্পে ১৪টি বড় নলকূপের সাহায্যে গ্রামবাসীদের জল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সব নলকূপ থেকে প্রয়োজন মতো জল মিলছে না। হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু বক্কর গাজি বলেন, “ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় ঠিক মতো পানীয় জল না মেলায় মানুষ অসুবিধায় পড়ছেন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর এবং বিডিওকে সমস্যা সমাধানের জন্য বলা হয়েছে।”
দিন কয়েক আগে হিঙ্গলগঞ্জের লেবুখালি বাস টার্মিনাসের পাশের নলকূপের সামনে দেখা গেল হাঁড়ি-কলসির লম্বা লাইন। একই চিত্র কাঠাখালি এবং বোলতলায় নলকূপের সামনেও। স্থানীয় বাসিন্দা কাজল কাহার, কবি মণ্ডলেরা জানান, এক ঘড়া জলের জন্য ভোরেই বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে। বসিরহাট-১ ব্লকের শিবহাটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “বাইরে থেকে জল কিনে খেতে হচ্ছে।”
বসিরহাট, বাদুড়িয়া এবং টাকি এই তিনটি পুরসভারও বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলকষ্টে ভুগছেন বাসিন্দারা। ওই সব জায়গায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন ফুটো হয়ে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে বলে তিনটি পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে। তবে, তারা ওই সব পাইপলাইন দ্রুত মেরামতির আশ্বাস দিয়েছেন।
গরমে জলস্তর নেমে যাওয়ার জন্যই নলকূপ থেকে জল পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার জয়দেব মণ্ডল। তা ছাড়াও তাঁর মতে, “গরমে জলের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছে। অনেক জায়গায় অবৈধ ভাবে জলের সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। জলের ঘাটতি পূরণের অন্যতম উপায় নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে তা জানানো হয়েছে। পুরসভা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে যে সব পাইপলাইন রয়েছে, তার অনেকগুলিই ফুটো হয়ে গিয়েছে। সে সব নতুন করে বসাতে কয়েক কোটি টাকার দরকার। তাই দ্রুত সমস্যার মোকাবিলার জন্য নলকূপই ভরসা।”
মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বসিরহাটে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর শীঘ্রই আড়াইশো নলকূপ বসাচ্ছে। পাইপলাইন মেরামতির চেষ্টা করা হচ্ছে।” |