উত্তর কলকাতা
শ্মশান-সংস্কার
স্মরণে শ্রীরামকৃষ্ণ
রাহনগর ‘উদ্যানবাটী’তে মৃত্যুর আগে ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। এখান থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে কাশীপুর মহাশ্মশান। এই শ্মশানঘাটেই তাঁর অন্ত্যেষ্টি হয়। কলকাতা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এবং বরাহনগর পুর এলাকার সীমান্তের কাশীপুর মহাশ্মশান অনেকের কাছে ‘রামকৃষ্ণ মহাশ্মশান’ নামেও পরিচিত। ফলে বহু পুণ্যার্থীর কাছেই এটি তীর্থস্থানের মত পবিত্র। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন অনেক দর্শনার্থী।
কিন্তু এত কাল শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থলে পৌঁছতে ঢুকতে হত শ্মশানের মধ্য দিয়ে। সে কারণে শ্মশানযাত্রী ছাড়া অন্য কেউ চাইলেও ঢুকতে পারতেন না। পুরসভা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শ্মশানের মধ্য দিয়ে আর নয়। শ্মশানের মূল ফটকের পাশের ১২ ফুট চওড়া রাস্তা দিয়ে উঠে যাওয়া যাবে দ্বিতলের ‘ধ্যান মন্দিরে’। কন্যাকুমারিকার ধ্যানমন্দিরের কথা ভেবে গঙ্গার একেবারে ধারেই তৈরি হচ্ছে এটি। চূড়া হচ্ছে গম্বুজাকৃতির। স্বচ্ছ কাচের দেওয়াল। মার্বেলের মেঝে।
সামনে শুধুই গঙ্গা। ধ্যানমন্দিরে সাধারণ মানুষ ধ্যান করতে গিয়ে দেখতে পাবেন গঙ্গার অন্য পারে বেলুড় মঠ। এর নীচের তলায় শববাহী গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকবে। ধ্যানমন্দিরের অন্য দিকের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসা যাবে শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থলে। সংস্কার করা হবে সেই স্থানেরও। পুরসভাসূত্রে খবর, এ কাজে সব মিলিয়ে খরচ পড়ছে ৫০ লক্ষ টাকা।পাশাপাশি, কাঠের চুল্লির আধুনিকীকরণ ও আরও একটি ইলেকট্রিক চুল্লি বাড়িয়ে জনসাধারণের কাছে উন্নত পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসও দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। প্রকল্পের মোট খরচ এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ধরা হয়েছে।
আগে ছিল দু’টি ইলেকট্রিক চুল্লি। বর্তমানে একই ছাদের তলায় হয়েছে তিনটি ইলেকট্রিক চুল্লি। সেই চত্বরটিকে সাজানো হয়েছে মার্বেল পাথর ও টাইলস আর কারুকার্যে। সব মিলে সেই কাজে খরচ হয়েছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। সাজানো হচ্ছে কাঠের চুল্লির জায়গাটিকে। আগে খোলা আকাশের নীচেই তিনটি কাঠের চুল্লির ব্যবস্থা ছিল।
বর্তমানে আছে দুটি। তৈরি করা হয়েছে চালা। থাকবে লোহার বেদি। তার ওপরে কাঠের চিতা সাজানো যাবে। চিতা থেকে ওঠা দূষিত ধোঁয়া ‘অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘অ্যান্টি পলিউশন ডিভাইস’-এর মাধ্যমে ৪৪ ফুট উচ্চতার চিমনি দিয়ে বের করে দেওয়া হবে। সরাসরি চিতার আগুন যাতে শ্মশানযাত্রীদের দৃষ্টিতে না পড়ে তাই দুটি চিতা বরাবর থাকবে দুটি শাটার। তার সামনের ফাঁকা জায়গায় আত্মীয়দের অপেক্ষার জন্য অ্যালুমিনিয়াম কম্পোজিট প্রোডাক্ট দিয়ে ছাউনি তৈরি হয়েছে।
পুরসভার দাবি, রাজ্যে এই প্রথম এত উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করে কোন শ্মশান সংস্কার করা হচ্ছে।
কলকাতা পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বলেন, “এর ঐতিহ্যের কথা মাথায় রাখছি আমরা। ধ্যানমন্দির-সহ শ্রীরামকৃষ্ণ সমাধিস্থলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমরা উদ্যানবাটী, বরাহনগর রামকৃষ্ণ মঠ অথবা বেলুড় মঠের হাতে তুলে দিতে চাই।
পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের যাবতীয় অনুমোদন নিয়েই করা হয়েছে কাঠের চুল্লির আধুনিকীকরণ। এই মাসের শেষে সূচনা করা হবে ইলেকট্রিক চুল্লিটি। আশা করছি এই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে সম্পূর্ণ শ্মশান সংস্কারের কাজ।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.