সম্পাদকীয় ২...
আঁধার ভাল?
কে বিদ্বান? পরীক্ষায় যিনি ভাল ফল করেন, তিনি। পরীক্ষায় ভাল ফল করেন কে? যিনি স্মৃতিধর, তিনি। বিবিধ প্রশ্নের উত্তর কিছু পুস্তক ঘাঁটিয়া যিনি স্মৃতিমধ্যে রাখিতে পারেন, এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়া সফল ভাবে উগরাইয়া দিতে পারেন, তিনি। নিজস্ব যুক্তিবোধ, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, বিবেচনাশক্তি ইত্যাদি না-থাকিলেও চলিবে। এই রূপেই চলিতেছিল। গোল বাধাইয়াছে সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এগজামিনেশন-এর সাম্প্রতিক একটি ভাবনা। সেই ভাবনা বলিতেছে, পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় বইপত্র আনিলেও ক্ষতি নাই। দেখিয়াই তিনি লিখুন, কিন্তু উত্তরটি যথাযথ হইল কি না, তাহাই বিবেচ্য। অর্থাৎ, শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণের মৌলিক ধাঁচের ভিতরেই একটি পরিবর্তনের কথা চলিয়া আসে। মস্তিষ্কে উত্তর ঠাসিয়া উত্তরপত্রে সেইগুলি কে কী পরিমাণে বমন করিতে পারিল, তাহা আর মুখ্য বিষয় নহে। ইহার ফলে, দুইটি স্তরে পরিবর্তন আসা সম্ভব। এক, শিক্ষকেরা যেন তেন প্রকারেণ মুখস্থ করাকে শিক্ষার্থীর একমাত্র কর্তব্য বলিয়া ঘোষণা করিবেন না, বরং শিক্ষার্থীর স্বাধীন চিন্তাশক্তির উন্নয়নে যত্নবান হইবেন। দুই, শিক্ষার্থীও নীরস গ্রন্থকীট না সাজিয়া নিজস্ব মেধার চলাচলের প্রতি নজর দিবেন। প্রশ্ন হইল, তাহা হইবে তো?
দুশ্চিন্তাটি অমূলক নহে। সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এগজামিনেশন-এর ভাবনা অনুযায়ী পরীক্ষার্থীকে পূর্ব হইতেই জানাইয়া দেওয়া হইবে, কোন পংক্তিগুলি হইতে প্রশ্ন আসিবে। সমস্যা হইল, সেই ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা-পদ্ধতির যথাযথ সুফলটি মিলিবে তো? বিশেষ কোন পংক্তিটি কোন প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে যথাযথ বলিয়া বিবেচিত হইবে, তাহা বাহির করাই তো পরীক্ষার্থীর যথার্থ পরীক্ষা। তাঁহাকে মগজের ভিতর তথ্য ঠাসিতে হইবে না, তিনি স্বাধীন চিন্তাশক্তির অনুবর্তী হইয়া খুঁজিয়া দেখিবেন, কোন তথ্য এবং বিশ্লেষণ দিয়া সংশ্লিষ্ট উত্তরটি যথাযথ হইতে পারে, তাহাই এই পদ্ধতির বাঞ্ছিত রাস্তা। তাহা না হইলে পরিবর্তনটি কীসের? যদি পরীক্ষা-ব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন করিতেই হয়, তাহা হইলে কেবল উত্তরপত্র লিখিবার পদ্ধতি নহে, সমগ্র ব্যবস্থাটিরই একটি সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কারটি আসিলে শিক্ষার্থী নিজস্ব বিশ্লেষণী ক্ষমতাটি অনুধাবন করিবার অবকাশ পাইবেন। সুতরাং, পরীক্ষাদানের প্রক্রিয়াও আর বর্তমানের ন্যায় নীরস, যান্ত্রিক এবং ভীতিপ্রদ হইবে না। শিক্ষকেরাও কে কী ভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রে অসাধু উপায় অবলম্বন করিল, তাহা বাহির করিবার অপ্রিয় দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি পাইবেন। সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এগজামিনেশন-এর এই ভাবনা পশ্চিম দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে দীর্ঘকাল ধরিয়াই প্রচলিত। সেই প্রচলে দুইটি বিষয় স্বীকৃত। এক, পরীক্ষার্থী কোনও তথ্য-ভাণ্ডার নহে, বরং নিজস্ব চিত্তবৃত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি। দুই, বিদ্যালাভ শিক্ষার্থীর স্বীয় চিন্তাশক্তিরই বিকাশ। ভারতে অদ্যবধি প্রচলিত মুখস্থ-নির্ভর বিদ্যাভ্যাসে এই দুইটি বিষয়ই কার্যত অ-স্বীকৃত। অথচ, খোলা-বই পরীক্ষানীতি এই দুইটি মৌলিক প্রস্তাবনারই স্বীকৃতি দাবি করে। অন্যথায়, গভীরে সংকটের বীজটি থাকিয়াই যাইবে। শিক্ষার্থীরা পূর্বাপর দুলিয়া দুলিয়া পাঠ মুখস্থ করিবে, অন্ধকারে চৌরাশিটা নরকের কুণ্ড...। শিক্ষার্থীর আঁধার, শিক্ষাব্যবস্থার আঁধার আর ঘুচিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.