সম্পাদকীয় ১...
নাম যাহাই হউক
শ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নামকরণ করিতে ভালবাসেন। তিনি জলাধারের নাম রাখিয়াছেন রামকৃষ্ণ পরমহংস, মেট্রো স্টেশনের নাম রাখিয়াছেন শহিদ ক্ষুদিরাম। কাজেই, তিনি কন্ট্রাক্ট ফার্মিং বা চুক্তি চাষের নাম বদলাইয়া পার্টনারশিপ ফার্মিং বা অংশীদারি চাষ রাখিলে আপত্তির কী আছে? যদি তিনি নূতন নামের মোড়কে আধুনিক অর্থনীতির যুক্তি টুকু স্বীকার করিয়া লন, তবে চুক্তি চাষকে চন্দ্রমাধব বলিয়া ডাকিলেও কেহ আপত্তি করিবেন না। মুশকিল হইল, তাঁহার পরিবর্তন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নামমাত্র। একান্ত দায়ে না পড়িলে তাঁহার সংস্কারেচ্ছা হয় না বলিলেই চলে। রাজ্যে চুক্তি চাষ চালু করা, সম্ভবত, সেই দায়েই হইতেছে। যেখানে তাঁহার দায় নাই, সেখানে সংস্কারের বাসনাও নাই। দুইটি সাম্প্রতিক উদাহরণ পেশ করা যাউক। পেট্রোলের দাম বাড়াইবার প্রতিবাদে তাঁহার দল পথে নামিয়াছে। সংস্কারের বাসনা থাকিলে তিনি বলিতেন, অবিলম্বে ডিজেলের দাম হইতেও নিয়ন্ত্রণ না তুলিয়া লইলে তিনি পথে নামিবেন। আবার, সরকার পেনশন খাতে সংস্কারের কথা বলামাত্র তিনি প্রতিবাদ জানাইয়া রাখিয়াছেন। ফলে, রাজ্যে চুক্তি চাষের আবাহনকে তাঁহার সংস্কার সচেতনতার সহিত গুলাইয়া ফেলিলে ভুল হইবে।
তবে, দায়ে পড়িয়াই হউক বা অন্য কোনও কারণে, তিনি যে বামপন্থার ভূত ঝাড়িয়া চুক্তি চাষের পথে হাঁটিতে উদ্যোগ করিয়াছেন, তাহাতে রাজ্যের মঙ্গল। অনুমান করা চলে, তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশ্তেহার নামক অচলায়তনটিতে চুক্তি চাষ বিষয়ে তেমন কিছু না থাকায় শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায়ের কিঞ্চিৎ সুবিধা হইয়াছে। কিন্তু, ইশ্তেহার যাহাই বলুক, রাজ্যের কল্যাণার্থে সেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তাঁহাকে প্রয়োজনে ভাঙিতে হইবে। প্রতিশ্রুতি ভাঙিবার কাজটি, নিশ্চিত ভাবেই, ঢাক-ঢোল পিটাইয়া করিবার নহে। ১৯৯১ সালে নরসিংহ রাও ভারতে আর্থিক সংস্কারের সূচনা করিয়াছিলেন। যে ভাবে করিয়াছিলেন, পরবর্তী কালে তাহার একটি পোশাকি নাম জুটিয়াছে রিফর্ম বাই স্টেল্থ চুপি চুপি সংস্কার। শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় এই পথে হাঁটা অভ্যাস করুন। চুক্তি চাষের আবাহনে সেই ইঙ্গিত রহিয়াছে। চুক্তি চাষ বিষয়ে বামপন্থীদের আপত্তি, তাঁহাদের বেশির ভাগ রাজনৈতিক অবস্থানের মতোই, কুসংস্কারের পর্যায়ভুক্ত। এই চাষে কৃষকের সর্বনাশ হইবে, এমন একটি অপ্রমাণিত যুক্তি খাড়া করিয়া তাঁহারা দীর্ঘ আট বৎসর ইহাকে ঠেকাইয়া রাখিয়াছিলেন। চুক্তি চাষ চাষির পক্ষে নিশ্চিত ভাবেই লাভজনক হইবে ফসল ফলাইবার পর অদৃষ্টের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হইবে না। চাষ করিবার পূর্বেই তাঁহারা জানিবেন, এই ফলন তাঁহাদের কতখানি আয়ের সংস্থান করিবে। অর্থনীতিতে এই নিশ্চয়তার তুলনা নাই। শুধু কৃষকেরই লাভ নহে, সমগ্র অর্থনীতির লাভ। চুক্তি চাষে বৃহৎ সংস্থা আসিলে পরিকাঠামো তৈরি হইবে। এই রাজ্যে ভাল রাস্তার অভাবে, যথেষ্ট কোল্ড স্টোরেজের অভাবে প্রচুর কৃষিপণ্য বেবাক নষ্ট হয়। পরিকাঠামোর উন্নতি হইলে অপচয় কমিবে। উন্নত মানের সাপ্লাই চেন গড়িয়া উঠিলে কৃষি পণ্যের দাম কমিতে বাধ্য। তাহাতে সাধারণ মানুষের লাভ। যাহা আরও গুরুত্বপূর্ণ, তাহা হইল চুক্তি চাষ কৃষকের চয়নের অধিকারের প্রশ্ন। কোনও একটি সংস্থার সহিত কোনও কৃষক চুক্তি করিবেন কি না, তাহা স্থির করিবার অধিকার সেই কৃষকের, সরকারের নহে। চুক্তি চাষ নিষিদ্ধ হইলে সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। বামপন্থীরা নির্দ্বিধায় কাজটি করিতে পারিতেন, কারণ চয়নের অধিকারকে সম্মান করিবার ইতিহাস তাঁহাদের নাই। কিন্তু, গণতান্ত্রিক পরিসরে ইহা করা চলে না। সরকার যদি বোধ করে যে চুক্তি চাষ কৃষকের পক্ষে মারাত্মক হইবে, সরকার নিঃসন্দেহে সর্বশক্তিতে চুক্তি চাষের বিরুদ্ধে প্রচার চালাইতে পারে, জনমত গড়িয়া তুলিতে পারে। অন্যথায়, সরকার দেখিতে পারে যাহাতে এই চাষে কোনও বৃহৎ সংস্থা কৃষককে না ঠকায়। তাহার জন্য আইন তৈরি করা সম্ভব। সরকার নজরদারির কাজ করিবে, ইহাই বাঞ্ছিত। কিন্তু, চুক্তি চাষের পথ রোধ করিয়া নহে। শ্রীবন্দ্যোপাধ্যায় বামপন্থীদের ভুল হইতে শিখিয়াছেন, তাহা রাজ্যের পক্ষে সুলক্ষণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.