খনির নীচে দুনিয়া কেমন, দেখাতে চায় পর্যটন দফতর
ব্যাপারটা অনেক আগেই বুঝে ফেলেছিল গুপী-বাঘা।
হীরক রাজ্যে বর্ষপূর্তি উৎসবে গিয়েই রাজার কাছে তাদের আর্জি, খনিটা এক বার দেখা যায়? ঢোঁক গিলে রাজা রাজি। তার পরে, খনিতে গিয়ে গুপী-বাঘার তো চক্ষু চড়কগাছ!
এ অবশ্য দুষ্টু রাজার দেশ নয়। কিন্তু কারও যদি খনি দেখতে ইচ্ছে হয়, সেই ইচ্ছে পূরণ হওয়া মোটেই মুখের কথা নয়।
নতুন সরকারের বর্ষপূর্তিতে অবশ্য নতুন করে ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে। কিছু দিন আগেই আসানসোলে এসে রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ জানিয়েছেন, কয়লা শিল্পকে পর্যটন মানচিত্রে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করা হচ্ছে বলে পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি সম্ভাব্য কিছু পর্যটনস্থল ঘুরে দেখতে পর্যটন মন্ত্রী আসানসোলে এলে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে আসানসোলের বণিকসভার একটি প্রতিনিধি দল। বণিকসভা সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে তাদের তরফে মন্ত্রীর কাছে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়। তার মধ্যে অন্যতম হল, খনিশিল্পকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়ার প্রস্তাব। মন্ত্রীকে বণিকসভার সদস্যেরা জানান, মানুষের কাছে অজানা এই শিল্প ঘুরে দেখার সুযোগ দেওয়া হলে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমাবেন। তাতে এলাকার পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। বিষয়টি ভেবে দেখার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
এর পরেই রাজ্যের পর্যটন দফতর এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পর্যটন মন্ত্রীর সচিব বিজিতকুমার ধর বলেন, “আসানসোলে মূল ভ্রমণস্থানগুলির উন্নয়নের পাশাপাশি খনি শিল্পকে পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পর্যটন মন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মতো পর্যটন দফতর একটি সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করছে। তার জন্য মাস তিনেক সময় লাগবে। তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় একাধিক পরিত্যক্ত খোলামুখ ও ভূগর্ভস্থ কয়লা খনি আছে। ইসিএল সূত্রে জানা যায়, এশিয়ার গভীরতম কয়লাখনিটি অবস্থিত আসানসোল শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে চিনাকুড়িতে। আসানসোল বণিকসভার সভাপতি সুব্রত দত্ত জানান, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ খনিগুলিকে চিহ্নিত করে ভ্রমণ পিপাসুদের দেখার ব্যবস্থা করলে পর্যটনে আকর্ষণ বাড়ানো যাবে। মন্ত্রীকে দেওয়া প্রস্তাবনায় বণিকসভার সদস্যেরা জানিয়েছেন, মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার, পর্বতারোহণের জন্য বিখ্যাত জয়চণ্ডী ও মুক্তাইচণ্ডী পাহাড় এবং পানিফলা উষ্ণ প্রস্রবন কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি দু’একটি উল্লেখযোগ্য কয়লা খনিকে যুক্ত করা হলে একটি চমৎকার ‘প্যাকেজ ট্যুর’-এর ব্যবস্থা হতে পারে। তাতে দক্ষিণবঙ্গের পর্যটন শিল্পের উন্নতি হবে। অর্থনীতি চাঙা হবে। পাশাপাশি, সরকারি রাজস্বও বাড়বে।
খনি কর্তৃপক্ষের সাহায্য ছাড়া কয়লা শিল্পকে পর্যটন মানচিত্রে আনা সম্ভব নয়। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, বণিকসভাগুলির কাছ থেকে এ রকম প্রস্তাব তাঁরা আগেও পেয়েছেন। কিন্তু সরকারি তরফে কোনও প্রস্তাব পাননি। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “সরকারি তরফে আগে প্রস্তাব এলে ভেবে দেখা যাবে।” তিনি আরও জানান, খনিতে পর্যটন কেন্দ্র হলেই মানুষের ভিড় বাড়বে। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সবার আগে নিরাপত্তার দিকটি দেখতে হবে।
খনিতে নেমে চোখ কপালে উঠেছিল গুপী-বাঘার। কয়লাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র হলেও হয়তো শুধু নিরাপদ খনিতেই যাওয়ার সুযোগ থাকবে। তবু ভ্রমণে যাওয়া মানুষজনের চোখে কোনও ফাঁকফোকর ধরা পড়ে যাবে না তো? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.