তাপমোচনের দাওয়াই ট্রাফিক পুলিশের জন্য |
শমীক ঘোষ |
মহানগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। বৃষ্টির দেখা নেই। অস্বস্তি-সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। ঝলসে দেওয়া তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে বেলা বাড়তে না-বাড়তেই শহরের পথঘাট সুনসান হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বহু মানুষ। সারা দিন রোদ মাথায় করে ‘ডিউটি’ করা ট্রাফিক-কর্মীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, গত দশ দিনে বিভিন্ন ট্রাফিক গার্ডের অন্তত সাত জন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উদ্বিগ্ন। তাই তীব্র গরমের সঙ্গে যুঝতে কলকাতার পুলিশকর্তারা ট্রাফিক-কর্মীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন গরমের সঙ্গে লড়ার কিছু ‘অস্ত্র’।
কী সেই ‘অস্ত্র’? কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, রয়েছে বিশেষ ধরনের তাপ-নিরোধক তোয়ালে, যা ঘাড়ে গুঁজে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক থাকবে, ‘ডিহাইড্রেশন’ রুখতে ওআরএস, রোদচশমা ও ছাতা। |
 |
ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের হাতে ওআরএসের বোতল তুলে দিচ্ছেন কলকাতার পুলিশ
কমিশনার
রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। পাশে যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
লালবাজারের এক ট্রাফিক-কর্তা জানান, এত দিন গরমে শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া আটকাতে ট্রাফিক-কর্মীদের গ্লুকোজ দেওয়া হত। কিন্তু এ বার চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে প্রতিটি ট্রাফিক গার্ডে নিয়মিত ওআরএস সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাফিক-কর্তারা জানাচ্ছেন, বিশেষ তাপ নিরোধক তোয়ালে ব্যবহার করলে রোদের মধ্যে একটানা কাজ করতে ততটা অসুবিধা হবে না। ওই তোয়ালের মধ্যে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক দেওয়া থাকবে। ঘাড়ে গোঁজার আগে তোয়ালে ভিজিয়ে নিতে হবে। ভেজা তোয়ালে থেকে জল বেরোবে না। শরীরের তাপমাত্রাও ঠিক থাকবে। আরাম বোধ হবে ট্রাফিক-কর্মীদের। ওই তোয়ালে মিলবে আর কয়েক দিনের মধ্যেই।
ট্রাফিক-কর্তারা আরও জানাচ্ছেন, গরমের জন্য গত ১৫ মে থেকে ট্রাফিক-কর্মীদের আট ঘণ্টার বদলে ছ’ঘণ্টা করে ডিউটি করতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার। বর্ষা না আসা পর্যন্ত এই নিয়মই চলবে। সেই সঙ্গে অধস্তন কর্মীদের ‘ব্রেস’ (চামড়ার গ্যালিস) পরার ক্ষেত্রেও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ওই ব্রেসে সাধারণত ছাতা এবং ওয়্যারলেস গুঁজে রাখা হয়। একই ভাবে পায়ে চামড়ার ‘অ্যাঙ্কলেট’ও পরতে হবে না।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, গত সোমবারই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এক ট্রাফিক কনস্টেবল। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। মঙ্গলবারও ডিউটি করার সময়ে কাহিল হয়ে পড়েছেন অনেকে। গরমে ট্রাফিক-কর্মীদের হাল খতিয়ে দেখতে বুধবার রাস্তায় নামেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার ও ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। |
রোদ রুখতে |
• মাথায় ছাতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
• চোখে রোদচশমা থাকা উচিত।
• নিয়ম করে ‘ওআরএস’ খেতে হবে।
• সঙ্গে জলের বোতল রাখা দরকার।
• অ্যাঙ্কলেট-ব্রেস না পরলেই ভাল।
• তাপ-নিরোধক তোয়ালে রাখা জরুরি। |
|
রেসকোর্সে গত দু’সপ্তাহ ধরে চলছে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষা। তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পরীক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন, সময় মতো পরীক্ষা শুরু হচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ গরমে মাঠের বাইরে অপেক্ষা করতে গিয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সুস্থ করার কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি। |
|