কাঠায় ৫ লাখ ফি নেবে রাজ্য
‘বিক্রি’ নয়, সল্টলেকের জমি হস্তান্তরে সায়
ল্টলেকে জমির লিজ-গ্রহীতাকে এ বার জমি হস্তান্তরের অনুমতি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। কিন্তু নিরঙ্কুশ মালিকানা (ফ্রি হোল্ড) দেওয়া হচ্ছে না।
অর্থাৎ, উপনগরীর লিজ-দেওয়া প্লটগুলির বর্তমান মালিকেরা মর্জিমাফিক জমি ‘বিক্রি’ করতে না-পারলেও সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে রক্তের সম্পর্কহীন ব্যক্তিকে তা ‘হস্তান্তর’ করতে পারবেন। এবং সেই হস্তান্তর ফি (ট্রান্সফার ফি) বাবদ সরকারকে কাঠাপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসনিক মহলের আশা, এতে অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের কোষাগারে ৯০০ কোটি থেকে ১০০০ কোটি টাকা বাড়তি আয়ের সংস্থান হল।
সল্টলেকের জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রস্তাবটি এ দিনের বৈঠকে পেশ করেন পুর-নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। জমি হস্তান্তরের নিয়মটা ঠিক কী হবে?
মন্ত্রিসভার এক সূত্রের ব্যাখ্যা: ধরা যাক সল্টলেকে ক’বাবুর লিজে পাওয়া পাঁচ কাঠা জমি আছে। তিনি এখন তা খ’বাবুকে হস্তান্তর করতে চান। এই মর্মে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করবেন। সরকার সব দিক খতিয়ে দেখে যদি ক’বাবুর আবেদন মঞ্জুর করে, তা হলে তাঁকে বলা হবে কাঠাপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা হিসেবে মোট ২৫ লক্ষ টাকা সরকারের কাছে জমা দিতে। ওই ফি জমা পড়লে সরকার জমিটির ‘লিজ হোল্ডার’ হিসেবে ক’বাবুর পরিবর্তে খ’বাবুর নাম নথিভুক্ত করবে। খ’বাবুকে নতুন লিজ-দলিল দেওয়া হবে। “হস্তান্তর বাবদ খ’বাবুর থেকে ক’বাবু কত টাকা পেলেন, তা নিয়ে সরকারের মাথাব্যথ্যা নেই। তবে যত টাকায় হস্তান্তর হবে, ক’বাবু ও খ’বাবুকে তার জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি, রেজিস্ট্রেশন ফি ইত্যাদি নিয়ম মেনেই দিতে হবে।” বলেন সূত্রটি।
অর্থাৎ ‘হস্তান্তর ফি’ বাবদ কাঠাপ্রতি পাঁচ লক্ষ সরকার পাবে সম্পূর্ণ অতিরিক্ত আয় হিসেবে। কিন্তু সল্টলেকের জমি হস্তান্তরে তো বিস্তর কালো টাকারও লেনদেন হওয়ার আশঙ্কা? সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকা কী হবে?
সরকারি সূত্রের বক্তব্য: কালো টাকার ব্যাপারটা দেখার দায়িত্ব আয়কর বিভাগের। তারাই দেখবে। রাজ্য নাক গলাবে না। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, সল্টলেকে এখন যে ভাবে চুটিয়ে জমির ‘অবৈধ’ হাতবদল হচ্ছে, তাতেও কালো টাকার লেনদেন আটকানো যাচ্ছে না। মাঝখান থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। নতুন নিয়মে বরং আর্থিক সঙ্কটকালে রাজ্যের কোষাগারে বাড়তি কিছু আসবে।
বস্তুত সল্টলেকে জমির ‘অবৈধ’ হস্তান্তরের সমস্যাটি দীর্ঘ দিনের। যার সুরাহা তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার তাদের দীর্ঘ শাসনকালেও করতে পারেনি। রাজস্ব-আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে জমির নিরঙ্কুশ মালিকানা দেওয়ার প্রস্তাব তখন সরকারের মধ্য থেকেই এসেছিল একাধিক বার। কিন্তু তাতে সল্টলেকের জমি মধ্যবিত্তের হাত থেকে উচ্চবিত্তের হাতে চলে যাবে এই আশঙ্কায় সরকারেরই অন্য মহল তা খারিজ করে দিয়েছে। ফলে জট কাটেনি। অথচ অবাধে জমির অবৈধ হস্তান্তর হয়ে চলেছে। সরকারি হিসেবমতো সল্টলেকে এ যাবৎ প্রায় ৬ হাজার প্লট নিয়ম না-মেনে হস্তান্তরিত হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিল। তারই পরিণতি এ দিনের সিদ্ধান্ত। সরকারি সূত্রের বক্তব্য: হস্তান্তরের অনুমতি দেওয়া হলেও রাজ্য চায় না সল্টলেকের জমি ‘ঢালাও ভাবে বিক্রি’ হোক। তাই ‘রক্ষাকবচ’ হিসেবে নিরঙ্কুশ মালিকানা না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত। সরকারের দাবি: নতুন নিয়মে জমির বর্তমান লিজ-মালিকেরা প্রয়োজনে জমিকে নগদে রূপান্তরের সুযোগ যেমন পাবেন, তেমন যিনি জমি নিচ্ছেন, তিনিও পাবেন সরকারের লিজ-মালিকানা।
কিন্তু কেউ যদি রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়কে জমি দিতে চান, তাঁকেও কি হস্তান্তর ফি দিতে হবে?
মন্ত্রিসভায় এ দিন স্থির হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ট্রান্সফার ফি লাগবে না। তখন বর্তমান লিজ-মালিক সরকারের কাছে ৫০০ টাকার একটা সামান্য ফি দিয়ে আবেদন করবেন। সরকার তা মঞ্জুর করবে। তবে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সব ক্ষেত্রে বিশেষ ‘সতর্কতা’ অবলম্বনের পক্ষপাতী। মন্ত্রিসভা-সূত্রের খবর: এ দিন প্রসঙ্গটি আলোচনার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এমন হস্তান্তর স্রেফ আবেদনের ভিত্তিতে মঞ্জুর না-করে সরকারের তদন্ত করে দেখা উচিত, বর্তমান লিজ-মালিক জমিটি আদৌ ‘স্বেচ্ছায়’ দিচ্ছেন কি না। মমতার কথায়, “ইদানীং দেখা যাচ্ছে, বাবা-মাকে দিয়ে জোর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা তাঁদের খেতেও দিচ্ছে না!” এ হেন প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতেই বিষয়টি নিয়ে সাবধানে এগোতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.