একই দিনে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল চারটি। প্রতিটিই দমদম স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে। সোমবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। রবিবারও রাত সাড়ে আটটা নাগাদ একই ঘটনা ঘটে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে, ডাউন দত্তপুকুর লোকালে। রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এই পাঁচটি ছিনতাই দমদম স্টেশনের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দমদমের মতো স্টেশনে ব্যস্ত সময়ে এমন ঘটনা ঘটলেও রেল-পুলিশের দেখা মেলেনি কেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও। রেল-পুলিশের দাবি, সোমবারের ঘটনাটি বিক্ষিপ্ত। এই ঘটনায় দু’জন গ্রেফতার হলেও হার উদ্ধার হয়নি।
এ দিন প্রথম ঘটনাটি ঘটে সকাল সাতটা নাগাদ, আপ ডানকুনি লোকালে। দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা কিংশুক কুণ্ডু ট্রেনে ওঠার সময়ে তাঁর হারটি ছিঁড়ে নিয়ে পালায় এক দুষ্কৃতী। তা দেখে চিৎকার করে ওঠেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য যাত্রীরা। ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। কিংশুকবাবু বলেন, “যাত্রীরা চিৎকার করতেই দেখি, কয়েক জন যুবক স্টেশনের উল্টো দিক দিয়ে পালাচ্ছে।” দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ৮টা ২০ মিনিটের আপ কাটোয়া লোকালে। কাশীপুরের বাসিন্দা রাণু বিবি যখন ট্রেনে উঠতে যাচ্ছেন, একই কায়দায় তাঁরও হার ছিনতাই হয়। রাণুদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ট্রেনের শেষ কামরায় উঠছিলেন। কয়েক জন সেই সময়ে নামার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলেন। সেই ফাঁকেই এই ঘটনা ঘটে।
ভিড়ে ঠাসা দমদম স্টেশনে পরপর দু’টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যাত্রীদের রোষ তখন চরমে। এর মধ্যেই ৮টা ২৭ মিনিটে আপ বনগাঁ লোকালে ঘটে তিন নম্বর ছিনতাইয়ের ঘটনাটি। পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক গৃহবধূ তাঁর স্বামী তারক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বনগাঁ যাচ্ছিলেন ব্যবসার কাজে। তারকবাবু বলেন, “ট্রেনে ওঠার সময়ে হঠাৎ গলায় টান অনুভব করি। হারটা কেউ টেনে নিচ্ছে বুঝতে পেরে এক জনের হাতও ধরে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গেই মুখে কেউ কনুই দিয়ে গুঁতো মারে। টাল সামলাতে না পেরে আমি আর আমার স্ত্রী পড়ে যাই। ট্রেনও ততক্ষণে ছেড়ে দিয়েছে।”
এখানেই শেষ নয়। দমদম জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮টা ৩৫ মিনিটে আপ হাবড়া লোকাল থেকেও একই কায়দায় হার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। স্বপনকুমার বসু নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ট্রেনে উঠতে গিয়ে স্বপনবাবুর স্ত্রীর হার ছিনিয়ে নিয়ে পালায় এক জন।
সোমবার পরপর এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে দমদম স্টেশনের নিরাপত্তা ও যাত্রী-সুরক্ষা নিয়ে। রাহুল পাত্র নামে এক নিত্যযাত্রীর অভিযোগ, “আমি লোকাল ট্রেনে দমদম দিয়ে যাতায়াত করি। ছিনতাই তো দূর অস্ৎ, চুরি বা পকেটমারির মতো ঘটনার ক্ষেত্রেও পুলিশের দেখা পাওয়া যায় না।” শিয়ালদহের রেল-পুলিশ সুপার তাপসরঞ্জন ঘোষ অবশ্য বলেন, “ট্রেনের প্রতিটি দরজার সামনে পুলিশ মোতায়েন করা তো সম্ভব নয়। তবে স্টেশন এবং প্ল্যাটফর্মে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী থাকেন। পরপর হার ছিনতাই বিক্ষিপ্ত ঘটনা। তবু আমরা কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে চার জন কনস্টেবল এবং এক জন এএসআই-কে সাসপেন্ড করেছি। সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি গ্রেফতারও হয়েছে। আশা করছি, শীঘ্রই এই ঘটনার কিনারা হবে।” |