দৈনিক বাজারের জন্য ব্যবহৃত খাস জমি গায়ের জোরে দখল করে পার্টি অফিস তৈরির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিলাসি এলাকার ঘটনা। শনিবার সন্ধ্যায় বাজারের কেন্দ্রস্থলে ওই পার্টি অফিস উদ্বোধনের পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে পুলিশ-প্রশাসন পর্যন্ত। বাজার কমিটির অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছ ব্লক প্রশাসন। শুরু হয়েছে দুই জোট শরিক কংগ্রেস ও তৃণমূলের চাপানউতোর। ওই দিন রাতেই বাজার কমিটির তরফে খাস জমি দখল করে পার্টি অফিস তৈরি করা হয়েছে বলে পুলিশের পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। বাজার কমিটির সম্পাদক কংগ্রেসের উপপ্রধান হওয়ায় ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তা পুলিশ দেখে। এক্ষেত্রে পুলিশের তেমন কিছু করার নেই। যা করার প্রশাসনকেই করতে হবে।” হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সজল তামাংয়ের মতে, সরকারি জমিতে কোনও রাজনৈতিক দলেরই পার্টি অফিস তৈরি করা উচিত নয়। তিনি বলেন, “বিলাসি এলাকায় খাস জমিতে একটি রাজনৈতিক দলের পার্টি অফিস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ওই জমি সরকারি কি না তদন্তেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তদন্তের পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রশাসন ও বাজার কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিলাসি এলাকায় দেড় বিঘা খাস জমির উপর ওই বাজারটি রয়েছে। গত ২৫ বছর ধরে সকাল বিকেল দুবেলাই সেখানে বাজার বসে। এলাকায় এটি বিলাসি বাজার নামেই পরিচিত। বাজারের দোকানিদের কাছ থেকে যা তোলা আদায় হয় তা দিয়েই বাজার দেখভালের জন্য রয়েছে বাজার কমিটি। এ ছাড়া নিয়মিত পঞ্চায়েতকে করও দেয় কমিটি। কমিটি সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বাজারে দোকান করার কথা বলে ঘর তৈরি করেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শেখ কাইমুদ্দিন। কমিটির নিয়ম অনুযায়ী কেউ বাজারে দোকান করতে চাইলে তাকে অনুমতি নিতে হয়। দোকান চালিয়ে গেলে বাজার কমিটির কোনও আপত্তি থাকবে না। তা না করে যদি ৩ মাস পর্যন্ত তা বন্ধ রাখা হয় তাহলে তা অন্য কাউকে দেওয়ার এক্তিয়ার রয়েছে কমিটির। সেভাবেই আবেদনের পরে বাজারে দোকান করার অনুমতি পেয়ে ঘরও তোলেন শেখ কাইমুদ্দিন। শনিবার বিকালে এলাকায় হাজির হন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সহ একাধিক তৃণমূল নেতা। ফিতে কেটে বন্দেমাতরম স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের উদ্বোধন করা হয়। এরপরই টনক নড়ে বাজার কমিটির। পাশাপাশি ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যে পদ্ধতিতে বাজারের কেন্দ্রস্থলে পার্টি অফিস চালু করা হয় তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাসিন্দারা। বরুই পঞ্চায়েত কংগ্রেস উপপ্রধান বাজার কমিটির সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, “যা ঘটছে তাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে তৃণমূল নেতারা দায়ী থাকবেন।” ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ওই দোকান তাঁদের দলের এক কর্মীর। তিনি বলেন, “ওই কর্মী আমাদের দোকানটি ব্যবহার করতে দিয়েছেন। আমরা সেটা ব্যবহার করব। আমরা নতুন করে তো কিছু করিনি। আসলে ওই এলাকায় আমাদের প্রভাব বাড়ছে। সেটা কংগ্রেসিরা মেনে নিতে পারছে না। তাই এ সব করছে।” |