|
|
|
|
দল থেকে ‘বদরক্ত’ বার করতে হবে, সরব সৌগত |
তৃণমূলের সামনে ‘চ্যালেঞ্জ’ এখন তৃণমূলই |
সীমান্ত মৈত্র • মধ্যমগ্রাম |
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রধান শাসক দলের অভ্যন্তরে ‘শুদ্ধকরণে’র দাবি উঠল। ক্ষমতা হারানোর আগে থেকেই যে দাবি উঠত সিপিএমে এবং বিরোধী আসনে গিয়েও দলে যে প্রক্রিয়া এখনও ‘সম্পূর্ণ’ হয়নি।
মধ্যমগ্রাম পুরসভায় আয়োজিত তৃণমূলের পঞ্চায়েত কর্মশালার মঞ্চে দাঁড়িয়ে রবিবার কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তথা সাংসদ সৌগত রায় সরাসরি দল থেকে ‘বদরক্ত’ বার করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সৌগতবাবুর বক্তব্য, “দলের মধ্যে ঝাড়াই-বাছাইয়ের সময় এসেছে। কিছু বদরক্ত বার করে দিতে হবে। দেখতে হবে, সিপিএমের বেনোজল যাতে আমাদের মধ্যে ঢুকে না-পড়ে।” পঞ্চায়েত নির্বাচনের বহু আগে থেকেই জেলায় জেলায় তৃণমূলের মধ্যে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব প্রবল আকার নেওয়ার খবর আসছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এলাকায় ‘সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগেও সরব বিরোধীরা। তৃণমূল নেতৃত্ব বহু ক্ষেত্রেই বলে থাকেন, সিপিএম থেকে এক শ্রেণির কর্মী-সমর্থকদের তৃণমূলে ‘অনুপ্রবেশে’র ফলেই এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সেই দিক থেকে সৌগতবাবুর ‘আহ্বান’ তাৎপর্যপূর্ণ। যাঁরা সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন, দলের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো কাজ করছেন, তাঁদের দল থেকে বার করে দেওয়ার বার্তা অবশ্য আগেই দিয়ে রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বস্তুত, বর্ষীয়ান নেতা সৌগতবাবু এ দিন এ-ও বলেছেন, তৃণমূলের সামনে ‘চ্যালেঞ্জ’ এখন তৃণমূলই। সৌগতবাবুর কথায়, “শুনছি সিপিএম নাকি জেলায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে! কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের চ্যালেঞ্জ সিপিএম নয়। আমাদের চ্যালেঞ্জ এখন আমরাই!”
রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা, দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকতে থাকতে সিপিএমের মধ্যেও ‘বেনো জল’ ঢুকে পড়েছিল। দেখা গিয়েছিল ‘অহঙ্কার’ও। দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের ওই আচরণের জেরে জনতার কাছ থেকে ক্রমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সিপিএম। বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তা-ই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, গৌতম দেবরা বারবার ‘শুদ্ধকরণে’ কথা বলে এসেছেন। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ক্ষমতায় আসার পরে দলের জনপ্রতিনিধি, নেতা-কর্মীদের জীবনযাত্রা যাতে পালটে না-যায়, তাঁরা যেন ব্যক্তিস্বার্থে কাজ না-করেন, সে দিকে ‘সতর্ক নজর’ রেখেছেন তাঁরা। তবু কিছু ঘটনা যে ঘটছে, নানা সূত্রেই তার ইঙ্গিত মিলছে। দলের তরফে ‘সতর্ক-বার্তা’ জারি রেখেই সৌগতবাবু এ দিন বলেন, “মানুষ আমাদের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখেছেন। দলের নেতা-কর্মীদের জীবনযাত্রার ধরন পালটে গিয়েছে কি না, তা-ও দেখছেন। মানুষের স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।”
জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে দলীয় যে সব পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তাঁদের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে না-দাঁড়ানোর ‘পরামর্শ’ও দেন সৌগতবাবু। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যাঁদের বিরুদ্ধে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে, যাঁদের ভোটে জিততে অসুবিধা হতে পারে, তাঁরা আগে থেকে জেলার নেতৃত্বকে জানান। কিন্তু বাস্তবে এটা কেউই করেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিছু পঞ্চায়েত প্রধান এবং সভাপতিকে এ বার ভোটে লড়তে নিষেধ করা হবে।”
কর্মশালায় ওই জেলার দলীয় পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্য এবং বিধায়কেরা হাজির ছিলেন। তাঁদের কাছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা শোনেন জেলা নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, অনগ্রসর কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, মধ্যমগ্রামে দলীয় দফতরে একটি ‘পঞ্চায়েত সেল’ খোলা হয়েছে। কোনও পঞ্চায়েত প্রধান প্রধান, সভাপতি-সহ অন্য জনপ্রতিনিধির সম্পর্কে সেখানে অভিযোগ জানানো যাবে। জেলার উন্নয়নের বিষয়ে পরামর্শও দিতে পারেন নাগরিকেরা। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “ইতিমধ্যেই জেলার বেশ কিছু পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আগামী বছর মে মাসে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে ধরে নিয়েই এগোচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কর্মশালায় এ দিন উপস্থিত দলীয় জনপ্রতিনিধি এবং নেতা-কর্মীদের গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্যে আরও বেশি কাজ করার ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছে। জেলার তৃণমূল সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান এবং ওই এলাকার দলীয় সভাপতিকে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।” সাম্প্রতিক কালে জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। ওই বিষয়ে উপেনবাবু বলেন, “উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবাইকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। দলের সকলকে এক কণ্ঠে কথা বলতে হবে। মেনে চলতে হবে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত।” |
|
|
|
|
|