|
|
|
|
পাত্রের আচরণে বিয়ে ভাঙলেন ক্ষুব্ধ পাত্রী |
সুস্মিত হালদার • শান্তিপুর |
মোটরবাইক পছন্দ হয়নি বলে বিয়ের আসরেই হইচই জুড়ে দিয়েছিলেন পাত্র ও তাঁর বন্ধু বান্ধবেরা। তখন সেই আসরেই সকলের সামনে মুর্শিদাবাদের ডোমকলের সারাংপুরের তরুণী আজিরন বলেছিলেন, সদ্য বিবাহিত স্বামীর সংসার করবেন না। তাঁরই দাবি মেনে সেই বিয়ের আসরে বর তাঁকে তালাকও দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মাস দু’য়েক পরে এ বার পাশের জেলা নদিয়ার শান্তিপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম টেংরিডাঙায় এক বাড়ি লোকের সামনে
|
আসমিনা খাতুন |
একই কথা বললেন আর এক তরুণী আসমিনা খাতুন। মন মতো পণের দাবি না মেটায় বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে পাত্র ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। তখনই পাত্রপক্ষের আচরণে ক্ষুব্ধ আসমিনা জানিয়ে দেন, এই বিয়ে তিনি করবেন না। সে কথা শুনতে বাধ্যও হন সকলে। তবে শুক্রবার বিকেলে সেই ঘটনার পরে সেই রাতেই স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গিয়েছে আসমিনার।
ওই দিন বিকেলে বর্ধমানের কালনার কালীনগরের বাসিন্দা খোকন মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কাবিলনামা লেখার ঠিক মুখে পাত্র হঠাৎ আপত্তি তোলেন পণ নিয়ে। তাঁর দাবি, যত গ্রাম সোনার গহনা দেওয়ার ‘কথা ছিল’, তা দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া, মোটরবাইকটিও তাঁর নামের বদলে পাত্রীর নামে কেনা হয়েছে। পেশায় ছোট চাষি খোকন গলা তুলে তাঁর আপত্তির কথা জানাতে থাকেন। আসমিনার বাবা আনিসুল শেখ তখন পাত্রের হাত দু’টো জড়িয়ে ধরে অনুনয় করেও তাঁকে থামাতে পারছিলেন না।
বাড়ি ভর্তি আত্মীয়স্বজনের সামনে পাত্রপক্ষের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ আসমিনা তখন বাবাকে ডেকে নেন এক পাশে। আনিসুল বলেন, “মেয়ে আমাকে বলে, যে পাত্র এত সামান্য কারণে সকলের সামনে এমন অপমান করতে পারে, তার ঘর সে করবে না।” আনিসুল তখন বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। তিনি বলেন, “আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছিলাম মেয়ের বিয়ের জন্য। আমার সামান্য কিছু জমিজমা রয়েছে। তারই কিছুটা বন্ধক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলাম।” খোকনের অবশ্য বক্তব্য, “আমি তো সংসার করব না বলিনি। পাত্রীই রাজি ছিল না। তা ছাড়া ওরাই তো যা কথা দিয়েছিল, তার চেয়ে চার গ্রাম সোনা কম দিতে চেয়েছিল।” আসমিনার কথায়, “ওই বাড়িতে বিয়ে করলে সম্মান তো পেতামই না, উল্টে নির্যাতন জুটত। তাই বাবার অনেক চাকা খরচ হয়ে গিয়েছে জেনেও বিয়ে ভেঙে দিতে বলেছিলাম।” আসমিনার অনুরোধেই বিয়ে ভেঙে দেন কাজি আব্দুল হবিবর রহমান শেখ। তিনি বলেন, “পাত্রী বিয়েতে নারাজ ছিলেন। তাই সব নিয়ম মেনেই বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে।”
আসমিনার কাকা সামশুল শেখ বলেন, “বিয়ের আসরেই বিয়ে ভেঙে যাওয়া গ্রামের সমাজ ভাল চোখে দেখে না। তাই আমরা তখন একটু চিন্তিতও হয়ে পড়েছিলাম আসমিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে।” কিন্তু তখনই এগিয়ে আসেন নিমন্ত্রিতদের অন্যতম গয়েশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য মোজাফ্ফর শেখ। তিনি প্রস্তাব দেন, তাঁর ভাই আব্দুল লুৎফার শেখের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া যেতে পারে আসমিনার। সেই মতো বিয়ে হয়ে যায় আব্দুল লুৎফার ও আসমিনার। আব্দুল লুৎফার বলেন, “খুবই বড় মনের মেয়ে আসমিনা। না হলে এত বড় সিদ্ধান্ত ও নিতে পারত না। তাই আসমিনাকে বিয়ে করে আমিও খুশি।”
আসমিনার প্রতিবেশী আজগর আলি শেখ বলেন, “এক যুবক যখন পণ পছন্দ হয়নি বলে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে বিয়েতে বেঁকে বসলেন, তখন আর এক যুবক এগিয়ে এলেন স্বেচ্ছায় বিয়ে ভেঙে দিতে আগ্রহী সেই তরুণীকে বিয়ে করতে। এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?” |
|
|
|
|
|