মাত্র এক বছরের মধ্যেই রাজ্য সরকার মানুষকে ভয় পেতে শুরু করেছে দাবি করে মানুষকে নির্ভয়ে পথে নামার ডাক দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার বিকেলে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র নারায়ণগড়ের বেলদায় এক সভায় তিনি বলেন, “সরকার মানুষকে ভয় পাচ্ছে। তাই এত বাধা। এত আক্রমণ। আপনারা ভয় পাবেন না। এই লড়াইয়ে আপনাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনারা পথে নামুন। অবস্থা বদলাচ্ছে।” এরই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, এক বছরের মধ্যেই একশো ভাগ কাজ করে দিয়েছি। আসলে কাজ কী, এই সময়ের মধ্যে উনি সেটাই বোঝেননি। রাজ্যের সমস্যা, কী কাজ করতে হবে, তা বুঝতে পারেননি। পারলে এমন কথা বলতেন না।”
পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ-সহ বেশ কিছু দাবিতে রবিবার বামফ্রন্টের উদ্যোগে নারায়ণগড়ে মিছিল ও সভা হয়। সকালে পাকুড়সিনিতে একটি কর্মসূচির পরে বিকেলে বেলদায়। দু’টি কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কর্মসূচি ভেস্তে দিতে নারায়ণগড়ের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের লোকজন সন্ত্রাস করেছে অভিযোগ করে সূর্যবাবু বলেন, “কুশবাসান থেকে বাসে করে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা আসছিলেন। খবর পেলাম, মাঝ রাস্তায় ওরা বাসের চাবি খুলে নিয়েছে। দলীয় সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। সরকারের থেকে বড় মানুষ। তাঁরা এখন পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন। শেষ বিচার মানুষই করবেন।” পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “তৃণমূল দিল্লির সরকারের সঙ্গে রয়েছে। সাড়ে ৭ টাকা বাড়িয়ে ২ টাকা কমিয়ে দেওয়া হল। আসলে সাড়ে ৫ টাকা বাড়ল। এটা মাছের বাজারে মাছ কেনা হচ্ছে না কি? উনি গাছেরও খাবেন। তলারও কুড়োবেন। উনি যা ব্যাখ্যা দেবেন, তা বুঝে নিতে হবে! তাই আমাদের সভা, মিটিং, মিছিল করতে দেবেন না। আমাদের কথা মানুষকে বলতে দেবেন না।” |
রাজ্যে বাস ভাড়া ও বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধি নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, “এক বছরের মধ্যে ৪ বার বিদ্যুতের মাশুল বাড়ল। এ বার এ নিয়ে নিজের সরকারের বিরুদ্ধে উনি নিজেই পথে নামুন।” তাঁর কথায়, “যুক্তির অভাব হয় না। বাস ভাড়া বাড়িয়ে বলছেন, খুচরোর সঙ্কট। তাই ভাড়া বৃদ্ধি। আমাদের কী বোকা-বুদ্ধু পেয়েছেন।” বিরোধী দলনেতার কথায়, “আক্রমণ দু’দিক থেকে হচ্ছে। পেটে লাথি মারছে। আবার পিঠে ছুরি মারছে। এক দিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়ছেন। অন্য দিকে, দৈহিক আক্রমণ চলছে।” সূর্যবাবু আরও বলেন, “আমরা (বামফ্রন্ট) যখন সরকারে ছিলাম, তখন কোনটা করতে পেরেছি, কোনটা করতে পারিনি, তা বলতাম। সব হয়ে গিয়েছে বলে কখনও দাবি করিনি। আমাদের সরকারে সাফল্য যেমন রয়েছে, ব্যর্থতাও তেমন রয়েছে। উনি এক জায়গায় বেশি দিন থাকেন না! আমরা বলি, আপনি ৫ বছরই থাকুন। ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করবেন না! আমরা দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকাই পালন করব।”
মুখ্যমন্ত্রী যেখানে হাত দিয়েছেন, সেখানেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “এক সময় হাসপাতালে যেতে শুরু করলেন। শিশু মৃত্যু বেড়ে গেল! বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ধমকাতে শুরু করলেন। এখন অবশ্য আর বাজারে যাচ্ছেন না। উনি সব সময় ৩৪ বছরের কথা বলেন। আসলে ৩৪ বছরের ভূত ওঁকে তাড়া করছে। উনি বলেছেন, আমরা যেন দশ বছর চুপ করে থাকি। আমরা চুপ করেই আছি। বেশি কথা বলি না। কিন্তু, অনেক সময় উনি এমন কিছু কথা বলেন, তখন আর চুপ করে থাকা যায় না।” জঙ্গলমহল প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা বলেন, “উনি সরকারে এসেই নাকি জঙ্গলমহলের সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। তাই এখন আর ছত্রধরের ছাতা নিয়ে ওখানে যান না। সঙ্গে ৪০টি গাড়ি থাকে। ৩ জন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে অবশ্য ২ জন ডামি। সমস্যার সমাধান হয়েছে বলেই এই পরিস্থিতি।” বিকেলে সভা শুরু হওয়ার আগে বেলদায় এক মিছিল হয়। অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে মিছিলের পথে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। |