আগুন নেভাতে শহরের ১৪১টি ওয়ার্ডেই জলের উৎস বানাবে পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সম্প্রতি এ বিষয়ে পুরসভা ও দমকলের বৈঠক হয়। সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি ওয়ার্ডেই আগুন নেভাতে জলের জোগান থাকবে। ইতিমধ্যেই শহরের কোথায় পুকুর আছে, কোথায় জলের কল রয়েছে, সে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেছে দমকল। দমকলমন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান বলেন, “গত কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে দেখা গিয়েছে, যেখানে জলের জোগান ছিল, সেখানে আগুন বেশি ছড়ায়নি। আবার কোথাও জলের অভাবে ঠিক তার উল্টোটা ঘটেছে।” তিনি জানান, শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জলের ব্যবস্থা করা হবে। যে প্রান্তেই আগুন লাগুক না কেন, তা নেভাতে দমকলের গাড়ি যাতে জল পায় সেটা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।
পুরসভা সূত্রে খবর, আগে শহরের বেশ কিছু এলাকায় চাপা কলে গঙ্গার জল পড়ত। পাইপ লাগিয়ে সেই জল আগুন নেভানোর কাজে লাগত। আবার রাস্তাও ধোয়া হত। এখন সেই সব কলে আর আগের মতো জল আসে না। এ বিষয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গার পলি জমা পড়ে পুরনো আমলের সেই পাইপের জলধারণ ক্ষমতা অনেক কমে গিয়েছে। দমকলের অত্যাধুনিক গাড়ি পলিযুক্ত ওই জল ব্যবহারও করে না।”
দমকল সূত্রে খবর, শহরে পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডে জলের অভাবে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে দমকলকে। প্রবল জনরোষের মুখেও পড়তে হয়েছে। দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “হাতিবাগান বাজারে আগুনের সময়ে জলের জন্য রিলে সিস্টেমে পাইপ নিয়ে যেতে হয়েছিল প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হেদুয়া পার্কের পুকুরে। পাইপ জুড়তেই অনেকটা সময় চলে যায়। মানুষ তা বোঝেন না। ক্ষোভ গিয়ে পড়ে দমকলের উপরে।”
এ সব বিষয় উঠে আসে দমকল ও পুরসভার ওই বৈঠকে। সেখানে হাজির ছিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (ই ডব্লিউ এস ও টিউবওয়েল) তারক সিংহ, দমকলের এডিজি ডি পি বিশ্বাস এবং পুরসভার পদস্থ অফিসারেরা। তারকবাবু বলেন, “দিন কয়েকের মধ্যেই সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। যেখানে আগুন লাগার আশঙ্কা বেশি, প্রথমে তেমন অঞ্চলে যাবেন দমকল ও পুর-অফিসারেরা।” তিনি জানান, শহরের কোথায় গভীর নলকূপ আছে, কোন বরোয় ক’টা পুকুর, তার তালিকা ও ম্যাপ দমকলকে দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও ওয়ার্ডে পুকুর থাকলে, তার ধারে পাম্প লাগিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা হবে। একমাত্র আগুন নেভানোর কাজেই চলবে ওই পাম্প। যে ওয়ার্ডে গভীর নলকূপ আছে, সেখানে নলকূপের সঙ্গে বড় কল (স্পাউট) লাগানো হবে। দমকলকর্মীরা তা থেকে সহজেই গাড়িতে জল ভরতে পারবেন।
পুরসভার ডিজি (জল সরবরাহ) বিভাসকুমার মাইতি বলেন, “দক্ষিণ কলকাতায় গভীর নলকূপ আছে। উত্তরে নেই। সে ক্ষেত্রে ভরসা জলাশয়। ওই সব জলাশয় কী ভাবে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যেই নলকূপগুলি দেখা হয়েছে। এ বার জলাশয়গুলি ঘুরে দেখা হবে। |