ফেরাল বর্ধমান, শিশুর গলা থেকে মার্বেল বার করল এসএসকেএম
জেলা স্তরে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে পুরনো বিতর্ককে ফের উস্কে দিল আঠেরো দিনের এক শিশু।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সামান্য কারণে জেলা হাসপাতাল থেকে রেফার বন্ধ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মহকুমা স্তরে, এমনকী মেডিক্যাল কলেজ স্তরেও চিকিৎসার যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি হয়নি বলে মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ অনেক সময়ে মানতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীকে কলকাতায় রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রেও অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা ও যন্ত্র না থাকায় গলায় মার্বেল আটকে যাওয়া ১৮ দিন বয়সী হুসেন আলি মণ্ডলকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
গত শনিবার ধুঁকতে থাকা ওই ছোট্ট শিশুকে শেষ পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের বেশি পথ উজিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে রবিবার সকালে অস্ত্রোপচারের পরে মার্বেল বার করা হয়। এখনও সে আইসিইউতে রয়েছে। এই খবর জানার পরেই ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য দফতর কাটোয়া হাসপাতাল ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে।
সেই নবজাতক। ছবি: এবিপি আনন্দ
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “বর্ধমান মেডিক্যালের তো এই কেস রেফার করার কথাই নয়।”
কিন্তু স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা পরিকাঠামোর খোঁজ কতটা রাখেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। তাই অসিতবাবু যতই বলুন, “আসল অসুবিধার জায়গাটা হচ্ছে চিকিৎসকদের মানসিকতা,” জেলার চিকিৎসকেরা বলছেন, পরিকাঠামোর দিকে স্বাস্থ্যভবন নজর দিচ্ছে না বলেই রোগী রেফার করতে হচ্ছে। সেই ক্ষোভের শিকার তাঁরা।
যেমন, এ ক্ষেত্রে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের দু’জন অ্যানাস্থেটিস্ট। তাঁরা ইএনটি বা চোখের বিভাগের অস্ত্রোপচার করতে চান না। শিশুদের কোনও অস্ত্রোপচারও হয় না। পেডিয়াট্রিক আইসিইউ নেই।” বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসক মনোতোষ দত্তের কথায়, “মেডিক্যাল কলেজ হলে কী হবে, শিশুদের পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ারের ব্যবস্থা এখানে নেই। নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্র ইসোফেগোস্কোপ। মার্বেল টেনে বার করা যেত না।” যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা কেন হয়নি, কেন একটা মেডিক্যাল কলেজে এই রকম অস্ত্রোপচার হবে না, তা নিয়ে অবশ্য চিকিৎসকেরা মুখ খোলেননি। তবে যুক্তির লড়াইয়ে ক্ষোভ মেটেনি শিশুটির মা জাহিরা বিবির। তাঁর কথায়, “দু’টো হাসপাতালই জানিয়ে দিল, তাদের অপারেশনের যন্ত্র নেই। এ দিকে বাচ্চা আমার নেতিয়ে পড়ছে। চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। আমাদের ছোট্ট মুদির দোকান। কোনওমতে টাকা ধার করে ১৮০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে কলকাতায় ছেলেকে আনলাম। ও রাস্তাতেই মরে যেতে পারত। জেলার লোককে যদি কথায়-কথায় এই ভাবে কলকাতায় ছুটতে হয়, তা হলে জেলার হাসপাতালগুলো রাখে কেন? তুলে দিতে পারে তো!”
তাঁদের বাড়ি নদিয়ার পলাশি অঞ্চলে। জাহিরা বিবি জানিয়েছেন, হুসেন শুয়েছিল মাটিতে মাদুরে। পাশে বসে মার্বেল নিয়ে খেলা করছিল তার আড়াই বছরের দাদা মনবুল। হঠাৎ খেলাচ্ছলে সে একটি মার্বেল হুসেনের মুখে ঢুকিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে শিশুটির মুখ হাঁ হয়ে যায়। লালা পড়তে থাকে। দম আটকে আসে। সেই অবস্থায় প্রথমে কাটোয়া ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.