বীরভূমকে ঋদ্ধ
করছেন সিদ্ধেশ্বর

ঞ্চলিক লোকজীবন চর্চার থেকেও কঠিন কাজ প্রত্নচর্চার পাথুরে প্রমাণ খুঁজে, তাকে প্রতিষ্ঠিত করা। সে জন্য প্রকাশিত অর্থাৎ মুদ্রিত তথ্য সংগ্রহ করে তা লিপিবদ্ধ করাও কম কথা নয়। কিন্তু কিশোর বয়সেই সেই গুরুভার সেধে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বীরভূমের শ্রীপাটমুলুকের সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়। আজ, সাতষট্টি বছর বয়সেও সেই অনুসন্ধান থেমে নেই।
বিশ বছর বয়সে শুরু করেছিলেন পরিক্রমা। পায়ে হেঁটে এক সময় বীরভূম চষে বেড়িয়েছেন। মুখ্য উদ্দেশ্য প্রত্নস্থল
সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
পরিক্রমা। কোপাইয়ের কাছে আলবাঁধা হাইস্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু কর্মজীবন। চার দশক পরে অবসর। কিন্তু অবসর কোথায়? ফের বীরভূম সম্পর্কে একাধিক গ্রন্থ রচনায় ঝাঁপিয়ে পড়া। “ভ্রমণ ব্যাপারটা কৈশোর থেকেই ছিল। ১৯৬৪ সালে শুরু। প্রতিজ্ঞা, হেঁটেই দেখব নিজের জেলাকে। তার পথ ধরেই ঘুরতে ঘুরতে বেশি করে আগ্রহ তৈরি হল পুরাতত্ত্ব, মন্দির-মসজিদ ও ধ্বংসাবশেষ নিয়ে। আজও থামতে পারিনি। থামতেও চাই না।” বললেন প্রত্নচর্চার একনিষ্ঠ ছাত্র। জানালেন, প্রথম কাজটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রাজা নয়পালদেব (১০২৬-১০৪৩ খ্রিঃ) একটি শিলালেখ। বোলপুরের সিয়ান গ্রামের একটা প্রাচীরের ভিতরের দিকে রাজা নয়পালের নামে এবং বাইরের দিকে আলিশেরের (১২২১ খ্রিঃ) ধর্মকীর্তি-সংবাদ। এ থেকে পালরাজাদের সম্পর্কে নতুন আলোকপাত।
কাজ করতে গিয়ে বীরভূমেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি সিদ্ধেশ্বর। বীরভূমের গা-লাগা ভিন্ জেলার প্রত্নস্থল অনুসন্ধান করে প্রবন্ধও লিখেছেন। যেমন বর্ধমান জেলার সুয়াতা গ্রামের বাহমনীতলার দরগাহ নিয়ে ক্ষেত্রানুসন্ধান গুরুত্বপূর্ণ। নিরন্তর অনুসন্ধানের ফলে এক উজ্জ্বল উদ্ধার বীরভূমের সাকুলিপুরের এক জামি মসজিদ থেকে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের নামাঙ্কিত (১৫১২-১৫১৪ খ্রীঃ) দু’টি শিলালেখ। কখনও ‘পাথর’ ছেড়ে পুঁথি খুঁজেছেন। “এটা খানিকটা স্বাদ বদল বলতে পারেন। অবশ্য আমার কাছে আঞ্চলিক ইতিহাসের উপাদান যেমন পাথর, পাথরের ওপর লেখা, তেমনই সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পুঁথিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসলে তো পুরনো সভ্যতার নিদর্শন অনুসন্ধান।” বললেন সিদ্ধেশ্বর।
প্রত্ন অন্বেষণের পাশাপাশি চলেছে নিয়মিতই আঞ্চলিক কাগজে জেলার ইতিহাসের ওপর প্রবন্ধ লেখার কাজ। দীর্ঘ গবেষণার কাজে পুরস্কৃত করেছে দুটি আঞ্চলিক পত্রিকা-গোষ্ঠী। প্রবীণ এই প্রত্নসন্ধানীর কাজের উল্লেখ রয়েছে দীনেশচন্দ্র সরকার, গোবিন্দগোপাল সেনগুপ্ত, সুখময় মুখোপাধ্যায়, ও-পার বাংলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল করিম সাহেবদের গ্রন্থে। লালমাটির এই দেশকে নিয়ে সিদ্ধেশ্বরের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ, বীরভূমের কেন্দুবিল্ব ও কেন্দুবিল্বের জয়দেব, বীরভূমের নান্নুর ও নান্নুরের চণ্ডীদাস, রবীন্দ্র ও সমকালের বীরভূম। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বীরভূম চরিতাভিধান। ‘বীরভূম দর্পণ’ (প্রথম খণ্ড) ইতিহাস ও সংস্কৃতি মহলে প্রশংসিত। এখন ব্যস্ত বিচিত্র বীরভূম রচনায়।
“এত দূর গ্রামে, প্রত্যন্তে বসে এমন কাজ করা যে কী কঠিন! হাতের কাছে লাইব্রেরি নেই। রেফারেন্স বই নেই। তথ্য মিলিয়ে দেখতে বা কিছু সংযোজন করতে হলে যেতে হয় বোলপুরে,” আক্ষেপ প্রবীণ প্রত্নসন্ধানীর গলায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.