গঙ্গাসাগর মেলাকে ‘দ্বিতীয় কুম্ভে’ পরিণত করতে চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে তিনি এই কথা জানিয়েছেন।
দু’দিনের দক্ষিণ ২৪ পরগনা সফরে জেলার জন্য ঢালাও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা প্রত্যাশিতও। বৃহস্পতিবার ডায়মন্ড হারবারে এবং শুক্রবার সাগরদ্বীপে দু’টি সরকারি কর্মসূচিতেই মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন। সাগরের কর্মসূচিতে জানিয়েছেন, রাজ্য জমি দফতরকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, পর্যটন দফতরকে সাগরে ১০ একর জমি দিতে। সেখানে সার্বিক পর্যটন উন্নয়ন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়ন এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্প তো আছেই।
কিন্তু তার চেয়েও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মমতার কপিলমুনির আশ্রম অভিযান। বিশেষত, সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে মসজিদের ইমাম এবং মোয়াজ্জীনদের (যাঁরা আজান দেন) মাসিক ভাতার ঘোষণা করা এবং তা নিয়ে ‘বিতর্কে’র প্রেক্ষাপটে। গঙ্গাসাগরের কপিলমুনির আশ্রম হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র। এ দিন সেখানকার পূজারী এবং সন্ন্যাসীদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। শিলান্যাস করেন কপিলমুনির মন্দির পুনর্নির্মাণ প্রকল্পেরও। পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাস দেড়েক আগে আশ্রমের তরফে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি সে কারণেই এসেছেন। |
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে মেলাকে আমি দ্বিতীয় কুম্ভমেলা করতে চাই। আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে চাই এই মেলাকে।” একই সঙ্গে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সন্ন্যাসীরা আমাকে জানিয়েছেন, এই আশ্রমে হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান সকলেই আসেন। সকলকেই ওঁরা সমাদরে আপ্যায়ন করেন। আমি চাই, তীর্থ তো বটেই, সাগর রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রও হয়ে উঠুক।”
ইমামদের ভাতা দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানিয়েছেন, সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ কৃষক এবং খেতমজুরদের মাসিক ভাতা দেওয়ার ফাইলেও বৃহস্পতিবার তিনি সই করেছেন। গত ১ মে থেকে তাঁরা ওই ভাতা পাবেন। ইমাম-ভাতা ঘোষণার পর বিজেপি আন্দোলনে নেমেছিল। প্রধান বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেস সরাসরি বিরোধিতা না-করলেও মন্তব্য করেছিল, ওই সিদ্ধান্ত ‘বিপজ্জনক’। তৃণমূলের কিছু নেতাও আশঙ্কা করছিলেন, এর ফলে হিন্দু ভোট তাঁদের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে। এ দিন কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে (সেখানে ছিলেন একদা অযোধ্যায় কর্মরত সাধু জ্ঞানদাস মোহন্তও। গত কয়েক বছর অবশ্য তিনি এই আশ্রমেই রয়েছেন) তৃণমূল নেত্রী ‘রাজনৈতিক ভারসাম্য’ রক্ষার চেষ্টা করলেন বলেই ওই নেতারা মনে করছেন।
দলের এক প্রথম সারির নেতার অবশ্য দাবি, “আমাদের নেত্রী সমস্ত ধর্মের মানুষের জন্যই ভাবেন। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষায় তাঁর মতো ভূমিকা বিশেষ কারও নেই। একে ভারসাম্যের রাজনীতি না-বলে ধর্মনিরপেক্ষতার মানসিকতা বলাই যুক্তিযুক্ত হবে।” |