সম্পাদকীয় ১...
চাপে না পড়িলে
র্মহীনতায় অবগাহনের যে ঐতিহ্য বন্ধ যাপনের মধ্য দিয়া এত দিনে বঙ্গবাসী প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম হইয়াছে, বৃহস্পতিবারে বিজেপির ডাকা বন্ধ-এও তাহার কোনও ব্যত্যয় ঘটে নাই। কলিকাতার রাজপথে অন্তত সরকারি পরিবহণের কোনও অভাব ছিল না। কিন্তু জনসাধারণ সে ভাবে পথে বাহির হন নাই। কলিকাতার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলি জনহীন ঠেকিয়াছে। অফিস-কাছারিতেও হাজিরার হার উৎসাহব্যঞ্জক ছিল না। অভ্যাসের শক্তি যে বাস্তবিকই বড় দুর্মর, তাহা আবারও প্রমাণিত। অথচ পথে বাহির হওয়ার, কাজে যোগ দিবার পর্যাপ্ত প্রেরণা এ বারের বন্ধ-এ মজুত ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান ছাড়াও জনজীবন স্বাভাবিক রাখিতে শহর জুড়িয়া ছিল ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা বন্দোবস্ত। বন্ধ-এর আহ্বায়ক দল বিজেপিও কলিকাতা শহরে এমন কিছু শক্তিশালী দল নয় যে, তাহার প্রভাবে জনসাধারণকে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকিতে হইবে। তবু অধিকাংশ মানুষ যে বাহির হইলেন না, কাজে গেলেন না, তাহার একটাই ব্যাখ্যা। আলস্যের, কর্মহীনতার, ছুটি উপভোগের সংস্কৃতিতে বঙ্গবাসী এখনও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়াইয়া আছে।
চাপে না পড়িলে এই অভ্যাস হইতে মুক্তির কোনও চেষ্টা হইবে না। মুখ্যমন্ত্রীর সতর্কবাণীতে মহাকরণ হইতে শুরু করিয়া সরকারি অফিসগুলিতে তাই স্বাভাবিক হাজিরা ছিল। অনুপস্থিত থাকিলে বেতন কাটা হইবে, এই চাপই কর্মীদের বাধ্য করে যে-ভাবে হোক কর্মস্থলে পৌঁছাইতে। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের কর্মীরা অবশ্য স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই বন্ধকে গুরুত্ব দেন নাই। এই তরুণ প্রজন্মের কাছে অচলাবস্থার রাজনীতির কোনও আকর্ষণই নাই, তাঁহারা কাজ করিয়াই বেতন লওয়ার প্রশিক্ষণ পাইয়া আসিয়াছেন। তাই সল্ট লেকের সেক্টর ফাইভ-এ উপস্থিতি অন্যান্য দিনের মতোই থাকিয়াছে। কর্মীরা নানা ভাবে গন্তব্যে পৌঁছাইয়াছেন। যাঁহারা ঝুঁকি লইতে নারাজ, তাঁহারা আগের রাতে কর্মস্থলে শয্যা পাতিয়াছেন। কিন্তু বন্ধ-এর অজুহাতে অনুপস্থিত থাকেন নাই।
সরকারি দফতরেও আগের রাত হইতে থাকিয়া যাওয়ার ঐতিহ্য ক্রমে জনপ্রিয় হইতেছে। কাজে না-আসিলে বেতন কাটা যাইবে, এই বাস্তবতার সামনে পড়িয়াই বঙ্গীয় চাকুরিজীবী সমাজ বন্ধ-এর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করিতে শিখিতেছেন। অন্য এক ধরনের চাপ হইল, বন্ধ-এর অজুহাতে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা দুষ্কৃতীদের কাছ হইতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সরকারি হুমকি। এই মর্মে অতীতে সুপ্রিম কোর্টেরও একটি নির্দেশ রহিয়াছে। যে রাজনৈতিক দল বন্ধ বা ধর্মঘট ডাকিবে, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ সেই দলের নিকট সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনে আইন করা যাইতেই পারে। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব ও উদ্যোগ তাঁহার প্রশাসকের ভূমিকাকেই প্রতিষ্ঠা দিতেছে। তিনি যে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠিতে পারেন, অচলাবস্থা সৃষ্টির ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিয়া তাহা প্রতিপন্ন করিতে চাহিতেছেন। জনসাধারণও প্রায়শ তাঁহার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হইয়া বন্ধ-সমর্থকদের মোকাবিলায় অকুতোভয় হইতেছেন। বৃহস্পতিবারের বন্ধ-এর দিন যেমন অনেক স্থলে অবরুদ্ধ ট্রেনযাত্রীদের দেখা গিয়াছে বন্ধ-সমর্থকদের মুখোমুখি মোকাবিলা করিতে। তাঁহাদের প্রতিরোধের সামনে একাধিক স্থানে অবরোধ ক্ষণস্থায়ী হয় এবং উঠিয়া যায়। পরিকীর্ণ অন্ধকারের মধ্যে এইটুকুই যা আলোর রেখা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.