বাইপাসে আবাসন
লাভের অঙ্ক কষেই বিপুল লগ্নি জমিতে
ড়ে পাওয়া প্রাপ্তি যোগে নয়। চাহিদা-জোগানের পুরনো অঙ্ক মেনেই ই এম বাইপাসের ধারে জমির রেকর্ড দাম পেয়েছে কলকাতা পুরসভা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাও চোখ কপালে তোলার মতো দাম হেঁকেছে মুনাফার পুরোদস্তুর হিসাব কষেই। তাই আকাশছোঁয়া দামে জমি কেনার পরও তাতে তাদের লাভের কড়ি গুনতে অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছে আবাসন শিল্প।
চিংড়িহাটা থেকে সায়েন্স সিটি। শহরে থাকার ক্ষেত্রে বিত্তবানদের নজর যে এখন এই এক কিলোমিটার জায়গা, তা প্রায় এক বাক্যে মানছেন অধিকাংশ আবাসন সংস্থার কর্তা। এবং সেই কারণেই সেখানে ১১৫.২০ কোটি টাকায় দু’একর জমি কেনাকে যুক্তিগ্রাহ্য মনে করছেন তাঁরা। এমনকী কোন হিসাব মাথায় রেখে সংস্থাগুলি এমন বিপুল অঙ্কের ঝুলি হাতে হাজির হচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফোরাম প্রপার্টিজের রাহুল সরাফ। কয়েক কোটি টাকার জন্য ওই জমি কেনার দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছেন যিনি।
কী সেই হিসেব?
সরাফের দাবি, বিল্ডিং রুল মেনে ওই অঞ্চলে এক একর জমিতে ১ লক্ষ ৩০ হাজার বর্গ ফুট থাকার জায়গা (লিভিং স্পেস) তৈরি করা সম্ভব। ফলে ১৫ হাজার টাকা প্রতি বর্গ ফুট হিসাবে তা বিক্রি করলে, নির্মাতার হাতে আসার কথা ১৯৫ কোটি টাকা। এ কথা ঠিকই যে, সব জায়গাটুকু হয়তো একেবারে একই দরে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কিন্তু সেই উনিশ-বিশটুকু বাদ দিলেও নির্মাতার হাতে আসবে অন্তত ১৮০ কোটি টাকা।
এ ক্ষেত্রে জমি কিনতে একর-প্রতি ৫৮ কোটি টাকা দাম দিয়েছে সংস্থা। কিন্তু তার থেকে অনেকটা বেশি দরে (ধরা যাক একর-পিছু ৭৫ কোটি) জমি কিনলেও ভাল রকম মুনাফা ঘরে তোলা সম্ভব বলে সরাফের দাবি। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, ৭৫ কোটিতে জমি কেনার পর প্রতি একরে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করতে খরচ হবে ৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং এর পর সুদ ইত্যাদি বাবদ আরও ১৫ কোটি টাকা গুনতে হলেও একর-পিছু নিট মুনাফার অঙ্ক দাঁড়াবে ৪৫ কোটি। তাই আগামী দিনে জমির দাম আরও বাড়লেও অবাক হবে না আবাসন শিল্প। বিপুল টাকায় কেনা জমিতে আবাসন গড়ে লাভের মুখ দেখতে অসুবিধা হবে না বলে মনে করছেন রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা লেমনগ্রাস অ্যাডভাইজার্স-এর অন্যতম কর্তা অভিজিৎ দাসও।
নজির গড়া দামে কেনা এই জমির অন্যতম মালিক ও ক্রেডাই বেঙ্গলের কর্তা হর্ষ পটোডিয়া জানাচ্ছেন, তিন বছর ধরেই বিলাসবহুল আবাসনের বাজার বাড়ছে ২৫ শতাংশ হারে। তাঁর দাবি, “আলিপুর, থিয়েটার রোড বা বালিগঞ্জ নয়। এখন ই এম বাইপাসের ধারেই ঠিকানা খুঁজছেন শহরের ধনীরা। কারণ, এক তো শহরের প্রাণকেন্দ্রে ওই সব ‘পশ’ এলাকায় জমির জোগান আর নেই বললেই চলে। আর দ্বিতীয়ত, নিত্যনতুন উন্নয়নের কারণে জমির চাহিদা বাড়ছে বাইপাসে।”
পি এস গোষ্ঠীর কর্তা প্রদীপ চোপরাও মনে করেন, “শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় কোনও জমি নেই। তাই বিলাসবহুল আবাসনের জন্য যেখানেই জমি পাওয়া যাবে, সেখানেই দাম আকাশছোঁয়া হবে।”
তবে শুধু আবাসনের জন্য এমন ‘সোনা’র জমি ব্যবহার করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
যেমন, অভিজিৎবাবুর মতে, পরিকাঠামোগত ভাবে ই এম বাইপাসের মতো উন্নত জায়গার জমিকে হোটেল, হাসপাতাল, অফিস ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহারের বিষয়েই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। জোর দেওয়া উচিত শুধুমাত্র শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য তার ব্যবহারে।
এই প্রশ্ন অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভা। বরং পুরসভার আর্থিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই ওই জমি বিক্রি করা হয়েছে বলে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি। তিনি বলেন, “কাউকে বেছে ওই জমি বিক্রি করা হয়নি। দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। যাঁরা বেশি দাম দিয়েছেন, তাঁরাই পেয়েছেন। জানি না কারা অভিযোগ করছেন, তবে অন্য কোনও শিল্প করার জন্য কেউ কখনও আমার কাছে আসেননি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.