আর্থিক সংস্কারের কর্মসূচি তিন বছর আগেই শিকেয় উঠেছে। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজনীতির রাহুগ্রাস অব্যাহত। আর্থিক বৃদ্ধির হারও যে ভাবে গত ৯ বছরের মধ্যে সব চেয়ে নীচে নেমে এসেছে, তাতে প্রাক্-উদারিকরণ জমানার ছবিই দেখছেন অনেকে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বিগ্ন রায়সিনা হিলসের দু’দিক। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রক।
কিন্তু অর্থনীতিকে ফের বৃদ্ধির পথে আনতে কী কৌশল নিতে চাইছে সরকার?
আর্থিক সঙ্কট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু আজ সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে প্রস্তাবিত প্রকল্প দ্রুত রূপায়ণের লক্ষ্যে কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি। গত অর্থ বর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধি তো হয়ইনি, উল্টে তার আগের অর্থবর্ষে ওই সময়ের তুলনায় ০.৩ শতাংশ কম হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নিরাপত্তা, পরিবেশ, জমি-সহ বিভিন্ন ছাড়পত্রের বাধা দ্রুত কাটাতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এক হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের সরকারি এবং বেসরকারি প্রকল্পের জন্য দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজন বলেন, “এখন সব থেকে জরুরি হল দেশ যে আর্থিক শৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে, তা তুলে ধরা। এর পাশাপাশি সময় বেঁধে বড় পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। সেটা হলে বেসরকারি ক্ষেত্রকে উজ্জীবিত করা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।” কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকের মতে, এই পদক্ষেপের ফল দীর্ঘমেয়াদেই মেলা সম্ভব। স্বল্পমেয়াদে ফল পাওয়া যাবে এমন কী পদক্ষেপ সরকার করছে, সেটাই আসল কথা।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “বৃদ্ধির হার যে কমবে সেই আশঙ্কা ছিলই। তবে এতটা নয়। এই নেতিবাচক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বাজেটেই কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। সেগুলির সুষ্ঠু রূপায়ণ হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলেই সরকার আশাবাদী।” তাঁর আরও বক্তব্য, “বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ গত পাঁচ মাসে বেড়ে ১১৮৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে গত ছ’মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। এই বিষয়গুলি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে।”
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, শিল্পমহলকে বার্তা দিতে গত দু’দিনে দু’টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক, সফটওয়্যার রফতানির ক্ষেত্রে বহু স্তরে উৎসমূলে কর কাটা বন্ধ করা হয়েছে। দুই, যে সব সংস্থার আয়করের হিসাব চলতি অর্থবর্ষ শুরুর আগেই মিটে গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে কোনও মামলা হবে না। আজ কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিল্প কর্তারা বলেন, ৯ শতাংশ বৃদ্ধির পথে যাওয়া এখনও সম্ভব। সে জন্য কিছু সংস্কার কর্মসূচি সরকারকে দ্রুত ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজনৈতিক বাধা কাটিয়ে সংস্কারে কি হাত দিতে পারবেন মনমোহন?
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া গাঁধীর উপস্থিতিতে আজ সন্ধ্যায় কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে এ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে, সোমবার কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব নিয়ে বলা হবে, কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সময়ের দাবি। মন্ত্রিসভার এক সদস্যের মতে, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র, পেনশন, ব্যাঙ্ক এবং বিমা বিল পাশ করানোর মতো সংস্কার করা গেলে বৃদ্ধির পথে ফেরা সম্ভব। এ ব্যাপারে মুলায়ম-মমতাদের বোঝাতে তাই এ বার আরও তৎপর হবে সরকার।
|
গলার কাঁটা |
কেন্দ্রের দাওয়াই |
• বিশ্বজোড়া মন্দার ছোবল
• নাছোড় মূল্যবৃদ্ধি
• চড়া সুদ
• কৃষি ও শিল্পে প্রায় থমকে যাওয়া বৃদ্ধি
• আকাশছোঁয়া রাজকোষ ঘাটতি
• বাড়তে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি
• তলানিতে ঠেকা টাকার দাম
• রাজনৈতিক অস্থিরতা
• আটকে যাওয়া সংস্কার |
• সরকারি ব্যয় সঙ্কোচ
• পরিকাঠামো প্রকল্প দ্রুত শেষ করা
• পরিকল্পনা বহির্ভূত খরচ ১০% কমানো
• আর্থিক সংস্কারের গতি ফেরানো |
|