মাথায় বিশাল মুকুট পরে হাঁটা! সে কি মুখের কথা।
আগেভাগে সেটা অভ্যেস না করলে চলে? সিংহাসনে বসার আগে তিনিও তাই করতেন। এমনকী বাথরুম থেকেও মুকুট পরে বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মজার এই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন তাঁর বড় ছেলে।
তিনি ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্ত এ বার প্রকাশ্যে আসছে একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। সিংহাসনে রানির ৬০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে ব্রিটেনে এই সপ্তাহান্ত জুড়ে রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। আগামিকাল এই তথ্যচিত্রও দেখানো হবে টিভিতে। রবিবার এক হাজার নৌকো ভাসবে টেমসে। রাজকীয় বজরায় বসে দেখবেন রাজপরিবারের সদস্যরা। ব্রিটেনের পথে পথেও হবে পার্টি, খাওয়াদাওয়া। রিৎজ হোটেল এবং ফোর্টনাম অ্যান্ড ম্যাসনের মতো ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনের সামনে হবে ‘জুবিলি লাঞ্চ।’
|
স্মৃতির পাতায়। চার্লস ও তাঁর বোন অ্যান। |
রানির অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩-র ২ জুন। তাই ২০১২-য় এসে ২ জুন থেকেই শুরু হচ্ছে হীরক-জয়ন্তীর অনুষ্ঠান। সে সবের আগে বিভিন্ন পুরনো ছবি এবং সিনে-ফুটেজ দেখতে দেখতে যুবরাজ চার্লস ফিরে গেলেন সে দিনের বাকিংহাম প্যালেসের করিডরে। অভিষিক্ত হওয়ার পরে যেখানে মুকুট পরিহিত রানি এগিয়ে চলেছেন পুঁচকে চার্লসের হাত ধরে। সাদা কালো সেই ছবি দেখে স্মৃতিমেদুর যুবরাজ চার্লসের মন্তব্য, “মা আর রানি তিনি তখন দুই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সমান তালে। এক দিকে আমার খেয়াল রাখা, অন্য দিকে ছবি তোলা হবে বলে হাসিমুখে ‘পোজ’ দেওয়া।”
তাঁর রাজত্বে ১২ জন প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছেন রানি। তিনি সিংহাসনে অভিষিক্ত হওয়ার সময় সেই প্রধানমন্ত্রীদের দু’জনের জন্মও হয়নি। নিজে হাতে রানি পার্লামেন্টের সূচনা করেছেন ৫৯ বার। পরিবারের দায়িত্বের সঙ্গে যিনি দেশের দায়িত্বও পালন করেছেন নিপুণ ভাবে, সেই মায়ের ‘স্বাভাবিক সৌন্দর্য’ আর ‘আভিজাত্যপূর্ণ ভঙ্গিমা’ দেখে ষাট বছর পরেও মুগ্ধ যুবরাজ, “সব সময় মনে হত, টায়রায় মাকে কী অসাধারণ দেখতে লাগে।”
মুগ্ধতার সঙ্গেই মনে পড়ছে মজার মুহূর্তের কথা। রানি হওয়ার আগে যখন তাঁর মা মুকুট পরে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন তাঁর চারপাশেই। চার্লসের মনে আছে, “আমাদের স্নান করানো হচ্ছিল তখন। হঠাৎ দেখি মা এসে উপস্থিত। মাথায় সেই বিশাল মুকুট। তখনও প্র্যাক্টিস চলছে!” |
অভিষেকের পরে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। |
যুবরাজ দেখালেন ১৯৫৭ সালের একটি রঙিন ছবিও। নরফোকের হকহাম সৈকতে সে বারের গ্রীষ্মে বাচ্চাদের জন্য রানিই শ্যুট করেছিলেন একটি ভিডিও। তার থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে এই ছবিটি। যাতে দেখা যাচ্ছে, যুবরাজ চার্লস আর তাঁর বোন অ্যানকে। বালির মধ্যে গলা পর্যন্ত ডুবে রয়েছে আট বছরের চার্লস আর সাত বছরের অ্যানের। মাঝখানে ওদের পোষা কর্গি। ছুটি কাটানোর আনন্দে ভাইবোনের মুখে হাসির ঝিলিক। বাচ্চাদের বালির মধ্যে ‘পুঁতে’ দেওয়ার কাজটি করেছিলেন ওদের বাবা অর্থাৎ ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপ।
রাজকীয় বজরা ‘ব্রিটানিয়া’য় করে পশ্চিম লন্ডনে হিল হাউস স্কুলে চার্লসকে দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। সংগ্রহে রয়েছে সে ছবিও। তারও কয়েক বছর পরে ১৯৬৯-এ যুবরাজ হওয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে বাকিংহাম প্যালেসের বাগানেই মহড়া দিয়েছিলেন চার্লস। তথ্যচিত্রে যুবরাজের মুখেই শোনা যাবে সে কথা।
গোটা বিশ্বের যে সব জায়গায় এখনও রানিই প্রধান, সেই সব জায়গায় আগামী সোমবার জ্বালানো হবে মশাল। নিউজিল্যান্ডের টোঙ্গা থেকে শুরু হয়ে বাকিংহাম প্যালেসে এসে শেষ হবে মশাল-জ্বালা। রানিই নিজে হাতে জ্বালাবেন সেই মশাল। মঙ্গলবার রানি আর ডিউক অফ এডিনবরা যাবেন সেন্ট পলস্ ক্যাথিড্রালে। সব মিলে ৫ জুন পর্যন্ত বেশির ভাগ অফিসই বন্ধ থাকবে লন্ডনে। পাঁচ দিনের লম্বা ‘উইকএন্ড’ উপভোগ করতে সাগ্রহে তাই অপেক্ষা করছেন ব্রিটেনবাসী। |