ছেলে কার? নরওয়ে থেকে ইস্তক কার্যত সেই টানাপোড়েনই অব্যাহত দুই শিশুর মা এবং বাবা-কাকাদের মধ্যে।
আগেও থানা-পুলিশ হয়েছে। শুক্রবার ফের বর্ধমানের কুলটিতে শ্বশুরবাড়িতে দুই ছেলেমেয়েকে দেখতে গিয়ে মার খাওয়ার অভিযোগ তুললেন সাগরিকা ভট্টাচার্য। যাঁর হেফাজতে দুই শিশুকে ছেড়েছে নরওয়ে সরকার, তাদের কাকা সেই অরুণাভাস ভট্টাচার্যের পাল্টা অভিযোগ, বাচ্চাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন সাগরিকা। কুলটি থানায় ডায়েরি করেছে দু’পক্ষই। কিন্তু দু’পক্ষের জেদাজেদিতে বাচ্চা দু’টির ভাল-মন্দ গৌণ হয়ে যাচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছেই। |
কুলটি থানা থেকে বেরোচ্ছেন সাগরিকা। |
নিজেদের সম্পর্ক ঠিক না থাকায় সাগরিকা এবং তাঁর স্বামী অনুরূপ ভট্টাচার্য বাচ্চাদের ঠিক মতো দেখভাল করেন না, এই অভিযোগে তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল নরওয়ে সরকার। পরে ভারত সরকারের মধ্যস্থতায় অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যা নামে দু’টি শিশুকে তাদের কাকার হাতে তুলে দেওয়া হয়। সাগরিকাও ফিরে এসেছেন বিরাটিতে বাপের বাড়িতে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, কুলটির বাড়িতে তাঁর বাচ্চারা ভাল নেই। তাঁর শ্বশুরবাড়ির বক্তব্য, অনুরূপ এখনও নরওয়েতে। তার ভাল-মন্দের কথা মাথায় রেখেই শিশু দু’টিকে কাকার হেফাজত ছাড়া অন্যত্র পাঠানো অসম্ভব। সাগরিকা কুলটিতে গিয়ে থাকতে পারেন, এখন এমন সম্ভাবনাও দেখছে না কোনও পক্ষই।
সাগরিকার অভিযোগ, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ তিনি ও তাঁর মামিমা আরতি মল্লিক কুলটির বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরে শ্বশুর অজয় ভট্টাচার্য দরজা খোলেন। কিন্তু ঘরে ঢুকে বাচ্চাদের ব্যাপারে খোঁজখবর করতেই অরুণাভাস চুলের মুঠি ধরে তাঁকে মারেন। শ্বশুর-শাশুড়ি ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দেন। তাঁর বাবা মনোতোষ চক্রবর্তী বলেন, “কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি, সাগরিকা ও আমার শ্যালকের স্ত্রী বিধ্বস্ত অবস্থায় দৌড় আসছে। সব শুনে থানায় যাই।”
দন্ত চিকিৎসক অরুণাভাস অবশ্য সাগরিকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ঘটনার সময়ে তিনি নিয়ামতপুরে নিজের চেম্বারে ছিলেন। ফোনে বাবার কাছ থেকে সব শুনে সোজা কুলটি থানায় যান। অরুণাভাসের অভিযোগ, “দুপুরে সাগরিকা এবং এক অপরিচিত মহিলা বাড়িতে ঢুকে আমার ভাইপো-ভাইঝিকে জোর করে নিয়ে যেতে চায়।” তাঁর বাবার অভিযোগ, “আমি দরজা খুলে দিতেই বৌমা এবং এক মহিলা হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি বাধা দিলে ওরা মারমুখী হয়ে ওঠে, গালিগালাজ করে।” |
দিন পনেরো আগেও সাগরিকা বাচ্চাদের দেখতে কুলটির বাড়িতে গিয়েছিলেন। সে দিনও শ্বশুরবাড়ির লোক জন তাঁকে মারধর করেন বলে ডায়েরি করেছিলেন তিনি। সে বার অজয়বাবুরা যা বলেছিলেন এ দিন অরুণাভাস তারই পুনরাবৃত্তি করেন, “সাগরিকা মাঝে-মধ্যেই বাড়িতে অপরিচিত লোকজন নিয়ে বাড়িতে এসে চড়াও হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। বাচ্চাদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।” সে কারণে বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে পুলিশকে জানিয়ে আসতে হবে বলেও তাঁরা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন সাগরিকাকে। বারবার চেষ্টা করেও সন্তানদের কাছে না পেয়ে সাগরিকা এখন নানা দুর্ভাবনায় ভুগছেন। তাঁর কথায়, “আমি বেশ বুঝতে পেরেছি, আমার ছেলেমেয়ে ওখানে ভাল নেই। গরমে কষ্ট পাচ্ছে। গায়ে ফুসকুড়ি বেরিয়েছে।” তার পরেই অভিযোগ, “ওদের ভাল করে খেতেও দিচ্ছে না, দেখভাল করছে না। এ দিন আমি গিয়ে খোঁজখবর করতেই ওরা আমায় মারধর করে।” অরুণাভাসবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ভারত সরকার ও নরওয়ে সরকারের নির্দেশ মতোই তিনি বাচ্চা দু’টিকে নিজের কাছে যত্নে রেখেছেন। কিছুতে তাদের কাছছাড়া করবেন না।
এই টানাপোড়েনে শিশু দু’টি শরীরে-মনে সত্যি কেমন আছে, সেই প্রশ্নটাও কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না।
|