কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বনধ কাটল শান্তিতেই।
অধিকাংশ স্কুল-কলেজে গ্রীষ্মের ছুটিতে বন্ধই ছিল। বেসরকারি বাস পথে নামেনি। সকালের দিকে রেল অবরোধ করা হলেও ১০টার পর থেকে অবরোধকারীদের পুলিশ হঠিয়ে দিলে ট্রেন চলাচল আস্তে আস্তে শুরু হয়ে যায়। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক রাজীব কুমার বলেন, “এ জেলায় সরকারি কর্মীদের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগ এ দিন কাজে যোগ দেন।” নদিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম ঘোষ বলেন, “এ জেলায় এ দিন সরকারি দফতরে কর্মীদের হাজিরার হার শতকরা ৯৩ ভাগ।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র বলেন, “বিভিন্ন ঘটনায় এ দিন জেলায় মোট ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তার মধ্যে নবদ্বীপ পুরসভা এলাকা থেকে বিজেপি-র শহর কমিটির সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেন-সহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ভাঙচুরের নির্দিষ্ট ঘটনায় ২ দু জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়াও যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।” |
বনধ-চিত্র |
|
|
কৃষ্ণনগর স্টেশনে বনধ
সমর্থকদের রেল-রোকো। |
বহরমপুরে যানবাহন শূন্য
রাস্তায় ভরসা অ্যাম্বুল্যান্সই। |
|
|
|
কৃষ্ণনগর প্রশাসনিক ভবন ছিল আর পাঁচটা
দিনের মতোই স্বাভাবিক। |
বহরমপুরের রাস্তায় নামতেই বনধ
সমর্থকদের ‘শাসন’। |
|
জোড়াকুঠিতে পাল্টা আক্রমণ |
মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার প্রায় সব দোকান, বাজার ও সরকারি কার্যালয় খোলা ছিল। অন্য দিকে নদিয়ার নবদ্বীপ শহরে প্রায় সর্বাত্মক বনধ পালিত হয়। উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার জোড়াকুঠি মোড়ে। সেখানে সকালে বনধ সমর্থনকারীদের একটি দল জড়ো হয়ে পথ চলতি গাড়ির উপরে ঢিল পাটকেল ছুড়ছিল। তখনই বিরক্ত হন এলাকার মানুষ। সকাল সোয়া ১০টা নাগাদ দু’টি লরির কাচ ভাঙচুরও করা হয়। তারপরে যাত্রী বোঝাই ট্রেকার লক্ষ্য করে বনধ সমর্থনকারীরা ইট ছুড়তে থাকে। তাই দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা লাঠিসোটা নিয়ে তাড়া করে বনধ সমর্থনকারীদের ভাগিয়ে দেয়। পুলিশ চার জন বন্ধ সমর্থনকারীকে গ্রেফতারও করেছে। তাঁরা সকলেই কৃষ্ণনগরের বিজেপি কর্মী। স্থানীয় বাসিন্দা রাজা দে বলেন, “অনেক ক্ষণ ধরেই বনধ সমর্থনকারীদের কাজকর্ম দেখে এলাকার লোকজন বিরক্ত হচ্ছিলেন। পথ চলতি গাড়িতে ইট পাটকেল ছুড়লে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। তাই যাত্রীবোঝাই ট্রেকারে ঢিল পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা তেড়ে যান ওদের দিকে।” স্থানীয় বিজেপি-র নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “বিজেপি কর্মীরা ভাঙচুর করেননি। বিজেপি’র বদনাম করতে ওই ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন।” তৃণমূল কংগ্রেসের নদিয়া জেলা সভাপতি পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “সাধারণ মানুষে রুখে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে তাঁরা কতটা বনধ বিরোধী।” এ দিন সকালের দিকে মদনপুর, চাকদহ, পায়রাডাঙা, হবিবপুর, আড়ঙঘাটা-সহ দুই জেলার বিভিন্ন স্টেশনে রেল অবরোধ করা হয়। অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়ে ট্রেন চলতে শুরু করে সকাল ১০টার পর থেকে। তবে ডোমকল, লালবাগ ও জঙ্গিপুর মহকুমা এলাকার মতো কল্যানী এলাকায় অধিকাংশ বাজার ও দোকানপাট এ দিন খোলা ছিল। নবদ্বীপে এই দিন প্রায় সর্বাত্মক বনধ হয়েছে। সকাল থেকে বনধ সমর্থনকারীরা বিভিন্ন দোকানে গিয়ে জোর করে বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ পুরসভার সামনে গিয়ে অবরোধ শুরু করে। কর্মীদের কাজে ঢুকতে বাধা দেয়। এরপরে পুলিশ গিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবদ্বীপ শহর বিজেপি সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেন ও পূর্বস্থলীর বিজেপি’র যুব মোচার্র সভাপতি জয়দীপ দেবনাথ সব সাত জন।
|
সরকারি বাস চলাচল করলেও দু’টি জেলাতেই যাত্রীবাহী বেসরকারি বাস ও ট্রেকার পথে নামেনি। মুর্শিদাবাদ জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক তপন অধিকারী বলেন, “ভয় ভীতির কারণে কর্মীরা কোনও বনধেই পথে বাস নামাতে রাজি হয় না। ফলে অন্য দিনের মতো এ দিনের বনধেও বাস পথে নামানো হয়নি।” বহরমপুর জজকোর্টে এ দিন আংশিক কাজ হয়। বহরমপুর ফৌজদারি কোর্ট বন্ধ ছিল। গরমের কারণে কয়েক দিন ধরে জঙ্গিপুর ও কান্দি আদালতে আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। তবে জেলা জুড়ে অধিকাংশ ব্যাঙ্কই এ দিন বন্ধ ছিল। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়া হলে ফরাক্কা ব্যারাজের জেনারেল ম্যানেজার-সহ কর্মীরা কাজে যোগ দেন। বহরমপুর শহরে পুর্ত দফতরের একটি কার্যালয়ে ৩৪ জন কর্মীই হাজির ছিলেন। সেই অফিসে দুপুর সোওয়া ১১টা নাগাদ বিজেপি কর্মীরা চড়াও হয়ে ভাঙচুর শুরু করে। পুলিশ সেখান থেকে প্রতাপ দাস নামে এক বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে। বহরমপুর গির্জার মোড়ে একটি ছোট লরি ও বহরমপুর বাস টার্মিনাসের কাছে বালি বোঝাই একটি লরি ভাঙচুর করে বন্ধ সমর্থনকারীরা। বিজেপি’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল বলেন, “ভাঙচুরের রাজনীতিতে বিজেপি বিশ্বাস করে না। ভাঙচুরের ঘটনায় বিজেপি’র কেউ জড়িতও নয়। ধৃত বিজেপি কর্মী প্রতাপ দাস নির্দোষ।”
|
ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য ও গৌতম প্রামাণিক। |