|
|
|
|
|
বার্ধক্য বাধা নয়, বোঝাচ্ছেন ওঁরা |
|
কমলা পট্টনায়েক |
|
রিয়াজুল খান |
এক জন অশীতিপর। আর এক জন সত্তর ছুঁইছুঁই। হলদিয়ায় পুরভোটের ময়দানে নবীনদের সঙ্গেই পায়ে পা মিলিয়ে লড়াইয়ে দুই প্রবীণ। ৮৫ বছর বয়সেও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন পরাণচকের জমিদার পরিবারের বলাইসখা ভৌমিক। এক সময়ে হলদিয়া নোটিফায়েড এরিয়া অথরিটির চেয়ারম্যান ছিলেন টানা ১৩ বছর। বলাইবাবুর কথায়, “নবীনরা এগিয়ে যাক, তবে আমার উদ্য্যমও কিছু কম নয়। জয় পারাজয় নিয়ে ভাবি না।” ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন বছর আটষট্টির কমলা পট্টনায়েক। এর আগেও ১৯৯৭ সালে পুরভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন। বয়সের কাছে হার মানতে নারাজ কমলাদেবী বলেন, “১৪ বছর বয়স থেকে রাজনীতি করছি। স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন পরিবারের অনেকে। লড়াইয়ে ভয় পাই না।” পাঁশকুড়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী অনন্ত চাউলিয়াও সত্তর ছুঁয়েও সক্রিয়। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ইংরাজি ও আধুনিক ইতিহাসে এমএ। একদা পঞ্চায়েতে ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দল প্রার্থী হয়েও অবশ্য জয়ের মুখ দেখেননি। তৃণমূলের হাওয়ায় পুরসভায় যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। পাঁশকুড়ারই ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী বছর চৌষট্টির রিয়াজুল খান বিদায়ী পুরবোর্ডে কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলর হয়েছিলেন। পঞ্চায়েতস্তরে তিন বার এবং পুরসভায় দু’বার জিতেছেন। বলছেন, “পরাজয় অভিধানে নেই।”
|
কে বলে এই প্রজন্ম রাজনীতি-বিমুখ |
|
বিল্বপদ ভৌমিক |
|
টুম্পা মালাকার |
শাসক ও বিরোধীহলদিয়া এবং পাঁশকুড়ার পুরভোটে দুই শিবিরের প্রার্থী-তালিকাতেই এ বার অনেক নতুন মুখ। পড়াশোনো শেষ করেই কেউ কেউ রাজনীতিতে এসেছেন। পুরভোটের প্রার্থী হয়ে নিজের শহরকে নতুন করে সাজানোরও স্বপ্ন তাঁদের চোখে। জিতলে নানা কাজের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। হলদিয়ায় এ বার তরুণতম প্রার্থী তৃণমূলের বিল্বপদ ভৌমিক। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার-পর্ব থেকেই বছর আঠাশের এই প্রার্থীর উদ্যম চোখে পড়েছে পুরবাসীর। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বিল্ব বলেন, “আমাদের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীও তো তরুণ-তুর্কিই। রাজনীতিতে আগ্রহ স্কুল পেরোনোর পর থেকেই। মানুষের ভালবাসায় ভরসা রাখছি।” ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই প্রার্থী শুকদেব দোলই বাম-শিবিরে কনিষ্ঠতম। বরাবর বামেদের দখলে থাকা এই ওয়ার্ডে বছর একত্রিশের, পেশায় গৃহশিক্ষক শুকদেবকেই যোগ্যতম মনে করেছে দল তথা বামফ্রন্ট। শুকদেব বলেন, “উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করার পরে কলেজে পড়তে পড়তেই রাজনীতিতে চলে এসেছি। কিছু করে দেখাতে চাই। দলের মান রাখতে পারব বলেই আশা। মানুষের ভালবাসাও পাচ্ছি।” পাঁশকুড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বাপ্পাদিত্য মাইতি আবার হলদিয়ার দু’জনের থেকেও বয়সে ছোট। বছর ছাব্বিশ। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। এমবিএ-ও করেছেন। কেরিয়ার-সর্বস্ব নন। ডিওয়াইএফের জেলা কমিটির সদস্য। দুর্নীতিমুক্ত পুর-প্রশাসন গড়াই লক্ষ্য জানিয়ে বাপ্পাদিত্য বলছেন, “মানুষই শেষ কথা।” এঁদের সবার চেয়েই বয়স-বিচারে ছোট, পূর্ব মেদিনীপুরের দুই পুরসভার প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভবত কনিষ্ঠতম পাঁশকুড়ার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী বছর পঁচিশের টুম্পা মালাকার। পারিবারিক বাম-রাজনীতির ঘরানা থেকেই এ বার ভোটের ময়দানে। ক্লাস নাইনের পরে পড়াশোনা হয়নি। বিয়েও হয়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ তৃণমূলের সন্ত্রাস নিয়ে। দাবি, “ভোটেই মানুষ জবাব দেবেন সব সন্ত্রাসের।”
|
দেখা যাবে না |
বিদায়ী পুরবোর্ডে হলদিয়ার ১, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিলেন শুভ্রবরণ শতপথী, অমলেন্দু বেরা, সুধাংশু মণ্ডল এবং বিদ্যাপতি পাত্র। সুধাংশুবাবু ছিলেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু এই চার জনকে এ বার মনোনয়ন দেয়নি দল। শুভ্রবরণ মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের প্রতীক না পেয়ে তা প্রত্যাহার করেছেন। বামেদের প্রার্থী-তালিকায় এ বার নতুন মুখের ছড়াছড়ি। তাই, বাদ ৩, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর উমা দাস, সুভাষ করণ, সৌমি দাস, দীপালি বর্মন, আশিস জানা, শেখ মুজফফ্র, অতুল বড়াই, গৌড়ি আদক, অশোক পট্টনায়েক, অঞ্জলী ভুঁইয়া, প্রসূন পাল, সুরজিৎ জানা, সুদর্শন হাজরা ও রিনা পাহাড়ি---একে বারে ১৪ জন! অশোক ইতিমধ্যে সিপিএম দল থেকে বহিস্কৃত। শিবির পাল্টেছেন শেখ মুজফফ্রও। পাঁশকুড়ায় তৃণমূলের তালিকা থেকে বাদ পড়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেই ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হরেন্দ্রনাথ মাইতি, ৯-এর সুমিতা হালদার, ১২-র মায়া দাস। বাম-তালিকায় বাদ ১ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তি দাস, ২-এর মালেকা খাতুন, ৩-এর প্রশান্ত দাস, ১৬-এর জাহেনুর মহম্মদ।
|
আজ শেষবেলার প্রচার |
হলদিয়ার প্রচারে রূপা বাগচি। |
আজ, শুক্রবার পুরভোটের প্রচারের শেষ দিন। এত দিন রোদ পড়লে তবেই মাইক ফোঁকা শুরু হত। শেষ দিন বেলা তিনটের মধ্যেই প্রচার শেষ করতে হবে। তাই রোদ-গরমের তোয়াক্কা না করেই সকাল থেকে প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে বাম-তৃণমূল, দু’পক্ষই। হলদিয়ার দুর্গাচক ও টাউনশিপ এলাকায় র্যালিতে পা মেলানোর কথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুগোপাল মজুমদার, ফরওয়ার্ড ব্লক-নেতা প্রতিম চট্টোপাধ্যায়ের। পাঁশকুড়াতেও পদযাত্রা করার কথা তাঁদের। আবার হলদিয়ার ঝিকুরখালি, মঞ্জুশ্রীতে সভা করার কথা তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁশকুড়ায় পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন শুভেন্দু। আর হলদিয়ায় সভা করে তৃণমূল সরকারের ‘বর্ষপূর্তি’ নিয়ে তুমুল কটাক্ষ করেন কলকাতা কর্পোরেশনের বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচি। প্রচারের শেষপর্বেও অবশ্য ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে তরজা চলছেই। হলদিয়ায় এক সিপিএম কর্মীকে বেধড়ক মারধর ও প্রচারের গাড়ি ভাঙচুরে ফের অভিযুক্ত হল তৃণমূল। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমারচক ও বালুঘাটা এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনা দু’টি ঘটে বলে অভিযোগ সিপিএমের। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী তাপসী মণ্ডলের সমর্থনে পোস্টার সাঁটানোর সময়ে সিপিএম শাখা সম্পাদক দেবপ্রসাদ মণ্ডল আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। তিনি হলদিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার প্রচারের একটি ট্যাবলোয় বালুঘাটা এলাকায় ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূল যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে। |
|
|
|
|
|