আনন্দ ধাক্কা দিলেও
রাশিয়া অনেক এগিয়ে
ন্টারনেটে দেখলাম, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর বাড়িতে চায়ের আসরে আনন্দকে বলেছেন, “ভারত আর রাশিয়ার দাবার সংস্কৃতি দারুণ।”
ভাল লাগছে, দাবার তুলনায় ভারত ও রাশিয়ার নাম পাশাপাশি আলোচনায় এল বলে। এখানেই আবার উঠে আসছে পুরনো প্রশ্নটা। ভারতের আনন্দ কি রাশিয়ার দাবা সংস্কৃতিকেই পুরোপুরি চ্যালেঞ্জ জানাল? এই মুহূর্তে অনূর্ধ্ব ২০দের বিশ্ব সেরাদের মধ্যে প্রথম পাঁচ জনে রাশিয়ার কেউ নেই। বিশ্বের এক নম্বর এখন নরওয়ের কার্লসেন। সেরা কুড়ি জন দাবাড়ুর মধ্যে ৮ জন রাশিয়ার নন। আনন্দ যে পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল, সব বারই এমন দাবাড়ুকে হারিয়েছে, যার সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনও না কোনও সম্পর্ক রয়েছে।
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অভিনন্দন। পাশে গেলফাঁ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলের দাবা ধাক্কা খেল কী ভাবে? আগে দেখেছি, ও দেশের দাবাড়ুরা সরকারি সাহায্যে পুরোপুরি টিম হিসেবে খেলতে আসত। একটা টিম ছিল। সেই দলে শেফ, ফিজিও, মনোবিদ সবাই থাকত। সবার পিছনে অর্থ ঢালত সরকার। সোভিয়েত সরকারই অনেক সময় ঠিক করে দিত, কারা প্রতিনিধিত্ব করবে একটা নির্দিষ্ট মিটে। কেউ ট্রফি জিতে যত অর্থ পেত, তার আশি ভাগ নিয়ে নিত সরকার। কুড়ি ভাগ পেত দাবাড়ুরা। এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। কেননা সব দাবাড়ুর জীবনযাপনের যাবতীয় খরচ বহন করত সরকার।
আনন্দ যখন উঠতে শুরু করল, সোভিয়েতদের সেই নিখুঁত সিস্টেম ভেঙে গিয়েছে। বহু দাবাড়ু বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তাদের ধাক্কা দেওয়াটা তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়ে গিয়েছিল।
এত কথার পরেও বলছি, দাবায় রাশিয়ার অধিপত্য পুরোপুরি শেষ হয়ে গেল, তা কখনওই বলা যাবে না। কেননা এখনও বিশ্বের প্রথম একশো জনের মধ্যে ২৫ জন দাবাড়ু রাশিয়ার। প্রথম দশে ছ’জন। যে ক’টা দেশ বিশ্ব দাবায় অংশগ্রহণ করছে, তাদের মধ্যে রাশিয়ার দাবাড়ু প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই আনন্দের ঐতিহাসিক জয় রাশিয়ার আধিপত্যে ছোট্ট একটা আঁচড় ছাড়া কিছুই কাটতে পারেনি।
আসলে দাবায় রাশিয়ার আধিপত্য গুঁড়িয়ে ফেলা বেশ কঠিন। রাশিয়ার প্রত্যেকটা স্কুলে দাবা শেখানো হয়। পার্কে টেবিলের উপর দাবার চৌষট্টি খোপ কাটা থাকে। যার যখন ইচ্ছা শুধু ড্রয়ার থেকে ঘুঁটি বের করে খেলতে বসে পড়ে। পাড়ায় পাড়ায় দাবা স্কুল, অ্যাকাডেমি, এমনকী সরকারও প্রচুর আর্থিক সাহায্য করে। সেখানে ভারতে দাবার কোনও পরিকাঠামো নেই, একটা ভাল সরকারি অ্যাকাডেমি নেই। আনন্দের এ বারের প্রতিদ্বন্দ্বী গেলফাঁ আদতে রাশিয়ার। এখন ইজরায়েলের নাগরিক। ওঁর সঙ্গে আনন্দের এই খেলা ইজরায়েলে সরাসরি দেখানো হয় সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে। ভারতে আনন্দের খেলা দেখানোর জন্য সেই উদ্যোগ কোথায় ছিল সরকারি স্তরে?
আনন্দের দুই মুহূর্ত: বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে।
নতুন রাশিয়ার দিকে তাকান। সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অজস্র দাবা স্কুল। প্রত্যেক বছর সেখান থেকে প্রচুর দাবাড়ু বেরোচ্ছে। রাশিয়ায় সবচেয়ে বিখ্যাত স্কুলের নাম বটভেনিক স্কুল অব চেস। এখান থেকেই বেরিয়ে এসেছেন কাসপারভ। রাশিয়ানদের ধারাবাহিকতার আর একটা উদাহরণ দিই। দাবাকে অলিম্পিকে এখনও নথিভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর অন্তর একটা দাবা অলিম্পিয়াড হয়। এখানেও রাশিয়ার আধিপত্য অক্ষুণ্ণ। এক বারই মাত্র জিতেছিল আমেরিকা আর হাঙ্গেরি।
দাবায় রুশদের একাধিপত্যে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে আনন্দ। কিন্তু রাশিয়া এখনও অনেক এগিয়ে।

ছবি: এপি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.