সম্পাদকীয় ১...
হস্তক্ষেপ চাই
সিরিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপের অনুকূলে আন্তর্জাতিক দাবি ক্রমেই মুখর হইতেছে। আরব বসন্তের অভিঘাতে তিউনিসিয়া, মিশর, ইয়েমেন ও জর্ডনের পাশাপাশি এই দেশটিতেও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যে জন-অসন্তোষ ধূমায়িত হয়, গত ১৪ মাস ধরিয়া সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বর্বরোচিত নৃশংসতার তাহা দমন করিয়াছেন। এই কয় মাসে অন্তত দশ হাজার বিদ্রোহী ও বিক্ষুব্ধ সিরীয় সেনাবাহিনীর ট্যাংক, সাঁজোয়া, মর্টার ও ভারী কামানের গোলায় এবং আসাদপন্থী মিলিশিয়ার গুপ্তহত্যায় নিহত হইয়াছেন। কিন্তু হাউলা নগরীতে ১০৮ জন অসামরিক ব্যক্তির নিধন (যাহাদের অর্ধেকই শিশু) প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ধিক্কারকে মুখরতর করিয়াছে। কোফি আন্নান প্রেসিডেন্ট আসাদ ও বিদ্রোহীদের মধ্যে একটা রফাসূত্রে পৌঁছাইবার জন্য যে-প্রয়াস চালাইতেছিলেন, তাহার সাফল্য লইয়াও সংশয় হইতেছে। কেহ-কেহ বলিতেছেন, আন্নানের মধ্যস্থতা প্রেসিডেন্ট আসাদের স্বৈরাচারকে স্থায়িত্ব দিতেছে মাত্র।
হাউলার গণহত্যার প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, স্পেন ও বুলগেরিয়া সিরিয়ার রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়াছে। ব্যতিক্রম চিন ও রাশিয়া। এই দুই দেশই সিরিয়ায় বাহিরের হস্তক্ষেপের প্রবল বিরোধী। উভয়েই নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের প্রস্তাবে ভেটো দিয়াছে। তাহারা কোফি আন্নানের মধ্যস্থতা-প্রয়াসকে আরও সময় দিতে আগ্রহী। আন্নানের উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে সৎ। কিন্তু তাঁহার আগে আরব লিগও একই ভাবে প্রেসিডেন্ট আসাদকে অনুরোধ-উপরোধ করিয়া নিরস্ত্র জনসাধারণকে ট্যাংক ও কামান-হাউইৎজারের গোলায় হত্যা করা হইতে নিরস্ত করিতে চাহিয়াছিল। ব্যর্থ হইয়াছে। আন্নানও যে ব্যর্থ হইবেন, তাহা প্রায় নিশ্চিত বলিয়া দেওয়া যায়। কারণ সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট আসাদের কর্তৃত্ব অক্ষত রাখিয়া কোনও শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব নহে। আসাদ পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত তাঁহার শাসকের আসন স্বেচ্ছায় ছাড়িয়া দিবেন না। বিপরীতে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ জনসাধারণও প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনপ্রণালীর দাবি হইতে পিছু হটিবেন না। এই অমীমাংসেয় দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র উপায় স্বৈরশাসনের অপসারণ, স্বৈরাচারীকে স্বপদে বহাল রাখিয়া প্রসাধনী প্রশাসনিক সংস্কার সাধন নহে। চিন বা রাশিয়ার মতো আসাদ-সমর্থকরা এই বিষয়টিই অনুধাবন করিতে অপারগ। দুই দেশই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত হিসাবে স্বৈরতন্ত্র অনুশীলন করিয়া থাকে। চিনে যদি সেটা কমিউনিস্ট পার্টির একদলীয় স্বৈরতন্ত্র, রাশিয়ায় তবে ভ্লাদিমির পুতিনের ঘুরিয়া-ফিরিয়া শীর্ষ ক্ষমতায় থাকিয়া যাওয়ার ব্যক্তিগত স্বৈরতন্ত্র। সিরিয়ার জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা, দাবিদাওয়ার বৈধতা, ন্যায্যতা ও প্রাসঙ্গিকতা উপলব্ধি করার ক্ষমতাই তাহাদের নাই।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্বের দায় আছে। কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না-করার কূটনীতির চেয়ে নিপীড়িত নিরস্ত্র জনসাধারণের প্রতিকার পাওয়ার মানবাধিকার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত দেশে-দেশে এ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিক ও উপর্যুপরি পরম্পরা উচ্ছেদ করার জন্যই রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সংগঠনের জন্ম। নিরাপত্তা পরিষদের ‘ভেটো ক্ষমতা’র অপব্যবহার করিয়া কোনও দেশ নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়াইবার সেই আন্তর্জাতিক দায় এড়াইতে পারে না। ইতিপূর্বে লিবিয়ায় গদ্দাফির স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সে-দেশের বিদ্রোহী জনতার সংগ্রামে ব্রিটেন, ফ্রান্স সহ আন্তর্জাতিক বিশ্ব সহমর্মী হইয়াছিল। অন্যথায় গদ্দাফি-জমানাকে উৎখাত করা সম্ভব ছিল না। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের জমানা সামরিক ভাবে আরও শক্তিধর। সে জন্যই কি সিরীয় জনতার উপর আসাদের সকল অন্যায় মুখ বুজিয়া সহ্য করা হইবে?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.