পাল্টাচ্ছে বনধ-‘পার্বণের’ মেজাজ
মমতার নির্দেশ পালন করতেই কর্মচঞ্চল মহাকরণ
নধের দিন এমনটা ঘটতে পারে, ভাবতেই পারতেন না তাঁরা। হঠাৎ পাওয়া ‘ছুটি’ বাড়িতে শুয়ে-বসে কাটানোই ছিল দস্তুর। মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশই রাজ্য প্রশাসনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বাড়িটাকে পাল্টে দিয়েছে।
এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ফেব্রুয়ারিতে বামেদের ডাকা বনধ থেকেই শুরু হয়েছিল। বলা হয়েছিল, বনধে অফিসে না-এলে দিনের মাইনে কাটা হবে। চাকরির মেয়াদও এক দিন কমে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা কার্যকরও করা হয়েছে। তারই জেরে এনডিএ-র ডাকা বনধে মহাকরণ একটি ব্যতিক্রমী ছবি হয়ে থাকল। দূর মফস্সল থেকে কলকাতা বনধ রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া অবস্থানই কর্মীদের মহাকরণে টেনে আনল। বনধ সফল করতে বাম জমানায় রাজ্যের শাসক দলকেই বহু বার পথে নামতে দেখা গিয়েছে। বিরোধীদের বনধেও মহাকরণে আসতেন না অনেক মন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মহাকরণে সেই দফতরগুলোই বেলা এগারোটা বাজতে না-বাজতে গমগম করছে।
‘নির্ভয়ে কাজে বেরোন’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা সরকারি কর্মীদের বাড়তি সাহসও জুগিয়েছে। তিন মাস আগে বামেদের বনধে অনেকেই দূর থেকে আসার ঝুঁকি না-নিয়ে কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে মহাকরণে বা অন্য সরকারি অফিসগুলোতেও রান্নাবান্না করে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেক বার অফিসে বা অন্যের বাড়ি থেকে যাওয়াটা যে কোনও স্থায়ী বন্দোবস্ত নয়, সেটা বুঝেই এ বার দিনের দিনই অফিসে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সকলে। আর ইচ্ছে থাকলে উপায় যে হয়, এ দিনের হাজিরাই তার প্রমাণ। সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন মহাকরণের সামগ্রিক হাজিরার হার ছিল ৯১ শতাংশ। সাধারণ কাজের দিন তো বটেই, ফেব্রুয়ারিতে বামেদের বনধের দিনের থেকেও বেশি। কারা অধিকর্তার দফতরে যেমন, ৭১ জনের মধ্যে অনুপস্থিত চার জন কর্মী। এঁদের মধ্যে এক জন দীর্ঘদিনই অসুস্থ। আর এক জন ছুটিতে কাশ্মীরে।
পাঁশকুড়ার মনোশিস সামন্ত বা বাগনানের কল্যাণ রায়চৌধুরী কিংবা তমলুকের রথীন্দ্রনাথ সামন্তের মতো অনেকেই অবরোধের ‘চোখ-রাঙানি’ উপেক্ষা করে এই প্রথম বনধে ট্রেনে করে কলকাতায় আসার সাহস পেয়েছেন। ঠাকুরপুকুরের হরিশঙ্কর বর্মনের মতো কাউকে বাসের জন্য বাড়তি ৪০-৪৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবু বাড়ির দিকে পিঠটান দেননি তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরে মেচেদার কাছে বাস তুলনায় অনেক কম ছিল এ দিন। তবু ৫৪ বছরের রথীনবাবু ফকিরগঞ্জে গ্রামের বাড়ি থেকে এক ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে পাঁশকুড়া স্টেশনে পৌঁছেছেন। বাসের অভাবে তমলুকের মনশিসবাবুর ভরসা ছিল আদি-অকৃত্রিম পা-গাড়ি। দেড় কিলোমিটার হেঁটে মাতঙ্গিনী হল্ট স্টেশনে পৌঁছন পঞ্চাশোত্তীর্ণ প্রৌঢ়। তার পর হলদিয়া লোকাল। ভোগপুর স্টেশনে অবরোধে এক ঘণ্টা গরমে সেদ্ধ হতে হয়েছে। ঘাটশিলা প্যাসেঞ্জারে ওই ভোগপুর স্টেশনেই আটকে ছিলেন রথীনবাবুও। তবে দু’জনেই সাড়ে ১০টার মধ্যে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতে পেরেছেন।
লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট কল্যাণ রায়চৌধুরীকে অফিসে আসতে দেখেও কিছুটা তাজ্জব সহকর্মীরা। বাগনান স্টেশন থেকে ছ’কিলোমিটার ভিতরে মুগকল্যাণ গ্রামের কল্যাণবাবুর বাবা গত কালই ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে কেমো নিয়েছেন। কল্যাণবাবুর কথায়, “টেনশন আছেই। তবে বাবাকে ওষুধপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চলে এসেছি।” ৮টা ৫০ মিনিটের লোকাল এ দিন সময় মতো পাননি কল্যাণ। দিঘা-সাঁতরাগাছি প্যাসেঞ্জার অবরোধে চেঙ্গাইলে থমকে ছিল। ওই ট্রেনে সাঁতরাগাছি হয়েই হাওড়ায় নামেন কল্যাণবাবু।
হিঙ্গলগঞ্জ থেকে এসেছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাবিব গাজি। হাসনাবাদে অবরোধের ফলে মহাকরণে ঢুকতে বেলা সওয়া ১২টা বেজে যায়। তাঁকে ‘হাফ-ছুটি’ নেওয়ার কথা বললে কিন্তু কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন দফতরের অতিরিক্ত সচিব দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মীদের অবশ্য অভিযোগ, দেবাশিসবাবু নিজেই বেলা ১১টার পরে অফিসে এসেছেন। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। ওই কর্মীও শেষ পর্যন্ত ‘ছাড়’ পান।
কারও কারও মত, ফেব্রুয়ারির বনধে ট্রেন-অবরোধ ঠেকানোর ব্যাপারে প্রশাসন আরও তৎপর ছিল। এ বার অনেক জায়গাতেই কলা গাছ ফেলে ‘রেল-রোকো’ হয়েছে। ফলে ভালয়-ভালয় বাড়ি ফেরার চিন্তায় অনেকে বিকেল চারটের মধ্যে ফিরতি ট্রেন ধরেছেন। পাঁশকুড়ার বাসিন্দা ফিনান্স অডিট-এর রত্নেশ্বর দাস বা কর্ড লাইনে গুড়াপ থেকে আসা দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়রা তবু মনে করেন, “যা দেখা যাচ্ছে তা ইতিবাচক। বাম আমলে বনধের দিনে অফিস যাওয়ার ভাবনাটাই তো স্পর্ধার ব্যাপার ছিল।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.