গত নয় বছরে দেশের করুণতম আর্থিক পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে আজ সরকারি ব্যয়সঙ্কোচের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
এর আগে দু’বার যে পথে ব্যয়সঙ্কোচের চেষ্টা হয়েছে, অনেকটা সেই পথেই হেঁটে আজ পাঁচতারা হোটেলে সরকারি অনুষ্ঠান, নতুন গাড়ি কেনা, নতুন পদ তৈরি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং বিদেশ সফরে নিয়ন্ত্রণের মতো একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, জনমোহিনী নীতি নিতে গিয়ে নতুন আর্থিক ঘোষণাও করা চলবে না।
সব থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ব্যয়ের যে হিসেব বাজেটে ঠিক হয়েছিল, তার ১০ শতাংশ কমানোর সংকল্প করেছেন তিনি। কী ভাবে তা সম্ভব হবে, তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রকের অন্দরমহলেই অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। এ সবের ফাঁকে এ বার একটাই তাৎপর্যপূর্ণ দিক। তা হল, আগের বারের মতো এ বার বিমানের ইকনমি ক্লাসে ভ্রমণের নির্দেশ জারি হয়নি।
আবার যে ব্যয়সঙ্কোচ করা হতে পারে, সপ্তাহ দুয়েক আগেই সংসদে তার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়ন এবং শেয়ার সূচক ১৬ হাজারের কোঠায় নেমে আসতেই প্রণববাবুর মুখে ফের ব্যয়সঙ্কোচের কথা শোনা গিয়েছিল। সরকার রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে চাইছে, বিনিয়োগকারীদের প্রতি এই বার্তা দেওয়ার প্রয়োজনও ছিল। আজ অর্থ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, রাজকোষের উপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খরচ বাস্তবসম্মত করা এবং সরকারি অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবহার করা আশু প্রয়োজন।
অন্যান্য মন্ত্রকের কাছে আজ যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে সবাইকেই যোজনা বহির্ভূত খাতে ব্যয় ১০ শতাংশ কমাতে হবে। প্রণববাবু নিজের বাজেটেই হিসেব কষেছেন, চলতি অর্থবর্ষে এই খাতে প্রায় ৯ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে বকেয়া ঋণ ও সুদ মেটানো, প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়, রাজ্যের জন্য অনুদান, বেতন-পেনশন বাবদ বরাদ্দে ব্যয় কমানো হবে না বলেই জানানো হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিদেশ সফর, বিদেশে সভা, প্রদর্শনীর মতো খরচ বাদ দিলে বাকি থাকে খাদ্য, সার ও জ্বালানিতে ভর্তুকি। সরকার যখন খাদ্য সুরক্ষা বিল আনতে চাইছে এবং ডিজেল-রান্নার গ্যাসেও ভর্তুকি কমাতে পারছে না, সেখানে এ ক্ষেত্রেও কতখানি ব্যয় কমানো সম্ভব হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তবে সব মন্ত্রককে বলা হয়েছে, রাজ্যগুলির জন্য অনুদান মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে আরও কড়া হতে হবে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রক অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে এসে অধিকাংশ টাকা খরচ করছে। ব্যয়ের লক্ষ্যপূরণ করতে গিয়ে বাজে খরচ হয়। তাই নির্দেশ জারি হয়েছে, শেষ তিন মাসে ৩৩ শতাংশের বেশি বাজেট বরাদ্দ ব্যয় করা চলবে না।
গত অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৫ শতাংশে নেমে এসেছে বলে আজই সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। বছরের শেষ তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হালও করুণ। তবে রাজকোষ ঘাটতি ও রাজস্ব ঘাটতির যে প্রাথমিক অঙ্ক প্রকাশিত হয়েছে, তা সরকারের হিসেবের মধ্যেই রয়েছে।
কিন্তু প্রণব যে রাজকোষ ঘাটতি আগামি বছর ৫.১%-এ নামিয়ে আনতে চাইছেন, তা সম্ভব হবে কি না, এবং এই কৃচ্ছ্রসাধন লগ্নিকারীদের কতখানি আস্থা ফেরাতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, যোজনা বহির্ভূত খাতে ১০ শতাংশ ছাঁটাই বাদ দিলে অন্যান্য ‘প্রতীকী ব্যয়সঙ্কোচ’-এ ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হবে না। তবে টানাটানির সংসারে সেটাও কম নয়। |