সিরিয়ায় গণহত্যার কাহিনি
বাঁচার তাগিদে ভাইয়ের রক্ত গায়ে মেখেছিল আলি
মাঝরাতে বাড়ির মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েছিল জনা এগারো বন্দুকধারী। বাড়ির সকলকে যখন একে একে তারা খুন করছে, ভয়ে সিঁটিয়ে ছিল ১১ বছরের ছেলেটি। চোখের সামনে বাবা-মাকে খুন করল ওরা। বাদ পড়েনি তার চার ভাইবোনও। বাঁচার তাগিদে গুলিবিদ্ধ ভাইয়ের জামা থেকে খানিকটা রক্ত মেখে নিয়েছিল ছেলেটি। আর তার পরে চুপচাপ মরার ভান করে শুয়ে থেকেছিল কিছু ক্ষণ। কয়েক মিনিট ধরে তাণ্ডব চালিয়ে বন্দুকধারীরা চলে যায়। তার পরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়েছিল সে। প্রিয়জনদের লাশ তখন বাড়ির চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
ছেলেটির নাম আলি-এল-সায়েদ। বাড়ি সিরিয়ার হোমস প্রদেশের হাউলায়। গত কাল সংবাদসংস্থা এপিকে ইন্টারনেটে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নিজের বেঁচে ফেরার অবিশ্বাস্য কাহিনি শুনিয়েছে আলি।
গত বছর মার্চ থেকে অশান্ত সিরিয়া। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সেনা ও বিরোধীদের সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই নিহত হয়েছেন প্রায় তেরো হাজার মানুষ। তবে গত কয়েক মাস ধরেই অশান্তিটা উত্তরোত্তর বাড়ছে। এর মধ্যেই গত শুক্রবার থেকে হাউলায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ শুরু করে সিরিয়ার সেনাবহিনী। মারা যান শতাধিক মানুষ।
অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছে আলি। ছবি: এপি
সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-বিরতি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। জানা যায় শুধু গোলাবর্ষণই নয়, সে রাতে হাউলায় বাড়ি বাড়ি ঢুকে গুলি চালিয়েছিল এক দল বন্দুকধারী। আর সন্দেহ, সে দিনের গণহত্যার পিছনে রয়েছে আসাদ সরকারের মদতপুষ্ট ‘শাবিহা’ গোষ্ঠীই।
সিরিয়ার হোমস প্রদেশের হাউলায় মূলত গরিব চাষিদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। তারই একটি গ্রামে বাবা-মা আর চার ভাইবোনকে নিয়ে থাকত আলি। এপিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সে জানিয়েছে, সে রাতে বন্দুকধারীরা ঢুকে পড়ায় ঘুম ভেঙে যায় তার। সে দেখে, বাবা আর তার বড় ভাইকে বাড়ি থেকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বন্দুকধারীরা। “মা হঠাৎ চিৎকার করে উঠল। বলল, ‘তোমরা ওদের কেন নিয়ে যাচ্ছ?’ কোনও উত্তর না দিয়েই ওরা বাবা আর দাদাকে মেরে ফেলল। তার পর সাদা পোশাকের একটা লোক মাকে শোওয়ার ঘরে নিয়ে গেল। পর পর পাঁচটা গুলি। মাথায় আর ঘাড়ে।” অস্ফুট স্বরে বলে উঠল আলি।
কিছু ক্ষণ চুপ থেকে আলি আবার বলতে শুরু করল। “মাকে মেরে লোকটা ঘর থেকে বেরিয়ে এল। হল ঘরে যখন সে আমার বোন রাশাকে দেখল, মাথায় গুলি করল। ছ’বছরের ভাই নাদের আর আট বছরের ভাই আদেনের পিছনে আমি লুকিয়ে ছিলাম। ওরা ওদেরকেও সঙ্গে সঙ্গে গুলি করল। আমাকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলিটা আমার গায়ে লাগেনি। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তখনই এক ভাইয়ের জামা থেকে খানিকটা রক্ত নিজের গায়ে লাগিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ি। ভিতরে ভিতরে আমি তখন কাঁপছি। কিন্তু তবু ওরা ভাবল, আমিও মরে গিয়েছি। চলে গেল।” কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে শেষ করল আলি। আপাতত এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে তার।
হাউলা এখন শোকস্তব্ধ। কোনও কোনও বাড়িতে যদিও শোক জানানোর লোকও অবশিষ্ট নেই। নির্বিচারে শিশু আর মহিলাকে মেরেছে বন্দুকধারীরা। সে দিনের গণহত্যার পরে স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। সেই দলে রয়েছেন ৩৫ বছরের আহমেদ-আল-কাসেম। “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরেই বুঝতে পারি কী ভাবে ওখানে মানুষ মারা হয়েছে। এক বছরেরও কম বয়সী শিশুর মাথায় ছুরি মেরে খুন করেছে ওরা। মৃত্যুর গন্ধ ওখানে বড্ড ভারী।”
সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্ব জুড়ে। অথচ আসাদ সরকার হাউলা-গণহত্যার দায় নেয়নি। বরং উল্টে সে দায় চাপিয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসবাসীদের উপরে। কিন্তু সেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার? উত্তর জানা নেই কারও।
শুধু জানা গিয়েছে, আলির ছ’বছরের ভাই নাদেরই ছিল তাদের পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য। তার দেহে মাত্র দু’টি গুলির চিহ্ন আছে। একটা মাথায়। আর একটা পিঠে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.