বাগজোলা
সংস্কারের পথে
প্রতি বর্ষায় খাল ছাপিয়ে যায়। প্লাবিত হয় আশপাশের এলাকা। সমস্যায় পড়েন পানিহাটি, কামারহাটি, বরাহনগর, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, দমদম, রাজারহাট-গোপালপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা। তবে আশা, ছবিটা এ বছর কিছুটা বদলাবে। কারণ, শুরু হয়েছে আপার বাগজোলা খাল সংস্কারের কাজ।
বিটি রোডের বনহুগলির কাছ থেকে শুরু করে ভিআইপি রোডে কেষ্টপুর মোড় পর্যন্ত অংশ আপার বাগজোলা খাল। এর পরে শুরু হয় লোয়ার বাগজোলা। সেচ দফতর সূত্রে খবর, চলতি বছরের মার্চে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ পেতে দেরি হওয়ায় মে মাসে কাজ শুরু হল। কাজ শেষ হতে দেড় বছর লাগবে। মোট খরচ হবে ৫৯.১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে ৫১.১৩ কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বাকি ৩৫ শতাংশ দিচ্ছে কেন্দ্র। এ ছাড়া বাকি আট কোটি টাকাও দেবে রাজ্য।
মেট্রোপলিটন ড্রেনেজ ডিভিশন-২ সূত্রে খবর, তিনটি ধাপে সংস্কারের কাজ হবে। প্রথম ধাপে পলি তোলা ও পাড় বাধানো হবে। এর মধ্যে প্রথম ৪,৯০৭ মিটার খালপাড় প্রথম বার বাঁধানো হচ্ছে। বাকি অংশের পাড় শুধু মেরামত করা হবে। পলি তোলা ও পাড় বাধানোয় মোট খরচ হবে ১৭.৮৯ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে বরাহনগর পুরসভার নোয়াপাড়া থেকে বাগজোলা খালের একটি চ্যানেল বার করা হবে।
২৭২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই চ্যানেলটি শিয়ালদহ-ডানকুনি রেল লাইনের তলা দিয়ে চলে যাবে রাজীব নগরের উদয়পুর খালে। এতে খরচ হবে ২৯.৭৮ কোটি টাকা। এর জন্য রাজ্য সেচ দফতরকে পূর্ব রেলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে।
কেষ্টপুর মোড়ে ভিআইপি রোডের নীচে বাগজোলা খালের তৃতীয় ধাপের কাজ। এখানে ‘ভেন্ট’-এর সংখ্যা ছয় থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হবে। এর জন্য সেচ দফতরকে পূর্ত দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে। খরচ হবে ১১.৪৬ কোটি টাকা। বর্তমানে এই ভেন্ট দিয়ে ১২০০ কিউসেক জল যায়। ভেন্টের সংখ্যা বাড়ালে তা দাঁড়াবে ১৯০০ কিউসেক।
বরাহনগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, কাজ হলে জল জমার সমস্যা মিটবে। তবে খালে গরু-মোষের মৃতদেহ বা তোষক, প্লাস্টিকের মতো আবর্জনা ফেলা বন্ধ না হলে আবার সমস্যা হবে। মেট্রোপলিটন ড্রেনেজ ডিভিশন-২ এর নির্বাহী বাস্তুকার সোমনাথ দেব বলেন, “বাগজোলা খালের সংস্কারের ফলে বরাহনগর, দক্ষিণ দমদম, লেকটাউন, বাঙুর এলাকার জমা জলের সমস্যা দূর হবে। নাব্যতা বাড়বে। বাড়বে জলধারণ ক্ষমতা। তবে জনসচেতনতা বাড়াতে পুরসভাগুলিকে উদ্যোগী হতে হবে। তিনটি পুরসভার সঙ্গে কথা হয়েছে। অন্য পুরসভাগুলির সঙ্গেও কথা বলব।”
বরাহনগর পুরসভার পুরপ্রধান অপর্ণা মৌলিকের কথায়: “জনসচেতনতা বাড়ানো পুরসভার একার পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষকেও এই বিষয়টা বুঝতে হবে। সম্প্রতি সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বরাহনগর পুর এলাকায় এই কাজের ক্ষেত্রে বাধাস্বরূপ যে সব দখলদারি আছে তা উচ্ছেদ করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ের কাজের সঙ্গে সঙ্গে আরও আলোচনা হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা অনন্তকুমার রায় বলেন, ‘‘সচেতনতা বাড়াতে সময় লাগে। সেচ দফতর পুরো বাগজোলার দু’ধারে কাঁটা তারের উঁচু বেড়া দিলে আবর্জনা ফেলা অনেকটা আটকানো যাবে।”
এই প্রসঙ্গে সোমনাথবাবুর বক্তব্য, “বেড়া দেওয়ার প্রস্তাবটি ভাল। এ বিষয়ে আলোচনা হবে।” সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও। তাঁর দাবি, “বিলম্বে শুরু হয়েছে। তবে কাজ আটকাবে না। ঠিকমতো অর্থের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। ইতিমধ্যেই লোয়ার বাগজোলা খাল সংস্কার নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। পরিকল্পনা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি।”

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.