সবুজ-মেরুনে নতুন কোচ
মোহনবাগানে পুরনো আক্ষেপ মিটবে, বলছেন ‘মুম্বইয়ের কৃশানু’
তাঁর ফর্সা, সুদর্শন চেহারার পাশাপাশি বিখ্যাত ছিল বাঁ-পায়ের পাসিং এবং ফ্রি কিক। নয়ের দশকে অনেকেই খেলা দেখে বলতেন, ‘মুম্বইয়ের কৃশানু দে’। সুপার সকারে সাও পাওলোর বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে তাঁর ফুটবল অনেকের চোখে লেগে।
সেই সন্তোষ কাশ্যপের প্রায় বছর কুড়ির আক্ষেপ মিটতে চলেছে এতদিনে। “কলকাতায় খেলতে না পারার জন্য আমার আক্ষেপ ছিল। অনেক বার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু মহীন্দ্রায় চাকরির জন্য খেলতে পারিনি। এ বার সেই আক্ষেপ মিটতে চলেছে। কলকাতায় কোচিং করানো স্বপ্নের মতো।” মুম্বইয়ের কান্দিভেলির বাড়ি থেকে ফোনে বললেন মোহনবাগানের নতুন কোচ।
আদতে বাড়ি হিমাচল প্রদেশের সিমলায়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন দিল্লিতে। খেলতেন মুনলাইট আর গোয়ান ক্লাবে। ডেরিক ডি’সুজা নেহরু স্টেডিয়ামে এক প্রদর্শনী ম্যাচে তাঁর খেলা দেখে নিয়ে যান মহীন্দ্রা মহীন্দ্রায়। আপনার আদর্শ কোচ কি ডেরিক ডি’সুজাই? সন্তোষের মুখে অনেক বাঙালি কোচের নাম, “ডেরিক স্যরের সঙ্গে অনেকে আছেন। নইমদা, পিকেদা, অরুণদা, সুখবিন্দর স্যর। অনেককে কোচ পেয়েছি ভারতের হয়ে খেলার সময়। প্রত্যেকের কাছে আলাদা আলাদা করে অনেক শিখেছি। চেক কোচ কারেল, ব্রিটিশ কোচ ডেভিথ বুথের সহকারী হিসেবে মহীন্দ্রায় কাজ করেছি। তাঁদের কাছেও শিখেছি অনেক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে আগে প্রিয় কোচ ছিলেন ফার্গুসন। এখন গুয়ার্দিওলা। ওঁদের মতোই অনেক সিস্টেমে খেলানো আমার পছন্দ।”
মোহনবাগান কর্তারা তাঁকে বলে দিয়েছেন, সরকারি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কাউকে কিছু না বলতে। বন্ধুবান্ধবদেরও এখনও এ নিয়ে কিছু বলেননি। স্পষ্ট কথা, “এখনও সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি। এখনই আমি মোহনবাগান নিয়ে কিছু বলব না।” কিন্তু এর পরে বুঝিয়ে দিলেন, আত্মবিশ্বাসে কোনও কমতি নেই। “দেখুন, মহীন্দ্রায় আমি পাঁচ বছরে সহকারী কোচ হিসেবে ফেডারেশন কাপ, আই লিগ, মুম্বই লিগ সব জিতেছি। ২০০৬ থেকে মহীন্দ্রার জুনিয়র টিমগুলোর ডিরেক্টর ছিলাম। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড টুর্নামেন্টে দু’বার ভারতে রানার্স হয়েছি।”
আই লিগের নয় নম্বর কোচ মোহনবাগানের দায়িত্ব নেওয়ায় সমর্থকদের অনেকের দুশ্চিন্তা ফেসবুক, টুইটারে বেরিয়ে আসছে। সন্তোষের গলায় কিন্তু আত্মবিশ্বাস, “এয়ার ইন্ডিয়া লিগে এই প্রথম এত পয়েন্ট পেয়েছে। এই প্রথম অবনমনের আওতায় থাকেনি। একেবারে জুনিয়র দল, সুযোগ সুবিধে তেমন নেই। তারকা নেই। তা সত্ত্বেও আমরা ডেম্পোকে চার গোলে হারিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কিন্তু কোনও ভারতীয় দল ডেম্পোকে চার গোল দিতে পারেনি।” টোলগে-ওপারাকে সামলাতে পারবেন? সন্তোষ: “কারও নামে কিছু বলব না। মোহনবাগান নিয়ে তো নয়ই। তবে আমি চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি।”
কলকাতায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকা ‘মুম্বইয়ের কৃশানু’র প্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে সবাই প্রায় বঙ্গসন্তান। “কৃশানু দে, প্রসূনদা, মানসদা, বিদেশদা, শ্যাম থাপা...অনেকের খেলা ভাল লাগত। কৃশানুর সঙ্গে ভারতীয় দলে বেশি খেলতে পারিনি, তখন ওর চোট ছিল।” সন্তোষের গলায় বাড়তি আবেগ। মহীন্দ্রার সেই সাড়া ফেলা দলের গডফ্রে পেরিরা, আকিল আনসারি, মুস্তাক আলি কলকাতায় খেলে সফল। আপনি আসেননি কেন? সন্তোষের ব্যাখ্যা, “ওরা কেউ মহীন্দ্রায় স্থায়ী চাকরি পায়নি তখনও। আমি আর হেনরি মেনেজিস ছিলাম এক্সিকিউটিভ। তাই পাকা চাকরি ছেড়ে আসতে পারিনি। ১৯৮৯ সালে তো ইস্টবেঙ্গলে আসা প্রায় পাকা হয়ে গেছিল। পরে আসতে পারিনি।”
এই মরসুমে তাঁকে মোহনবাগান কোচ দেখে অনেকেই চূড়ান্ত বিস্মিত। আপনি নিজে কি প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়েছিলেন? নতুন মোহনবাগান কোচের গলায় আবার আত্মবিশ্বাস, “একেবারে নয়। আমি মহীন্দ্রার চাকরি ছেড়ে দিয়েছি পেশাদার কোচ হব বলে। এয়ার ইন্ডিয়ায় কোচিং করাই পেশাদার কোচ হিসেবে। গোয়া, মুম্বই দুটো জায়গার ক্লাবের প্রস্তাব ছিল। জানতাম, ভাল কাজ করলে বড় ক্লাবের ডাক আসবে।” পেশাদার কোচের তাগিদ থেকেই কলকাতা আসছেন স্ত্রী, দুই পুত্রকে মুম্বইতে রেখে।
এ বার জার্সি পরতে হবে সুব্রত-প্রশান্তর মতো তারকার। চাপের পরে চাপ। এ সব ভেবে এতটুকু চিন্তায় নেই মোহনবাগানের নতুন কোচ। তাঁর মুখে তাই ডেম্পোকে চার গোল দেওয়ার কথা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.