বালি-জগাছা
দুর্মূল্য তৃষ্ণা
রম বাড়ছে। বাড়ছে জলের দামও। এক ব্যারেলের দাম ৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০ টাকা। এই অবস্থা বালির ছ’টি পঞ্চায়েতের।
অভিযোগ, এই অঞ্চলে সারা বছরই জল কিনে খেতে হয় বাসিন্দাদের। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যারেলের দাম বাড়ে। দীর্ঘ দিন এই অবস্থা চলছে। বার বার প্রশাসনকে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই হয়নি। মিলেছে শুধু প্রতিশ্রুতি।
সমস্যার কথা স্বীকার করেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “বালি-জগাছা ব্লকের জল সমস্যা মেটানোর জন্য জলপ্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও হয়েছে। দু’টি জায়গা দেখা হয়েছে। একটি রাজচন্দ্রপুরে। অন্যটি জয়পুর বিল এলাকায়।”
ঘোষপাড়া, নিশ্চিন্দা, সাঁপুইপাড়া-বসুকাটি, দুর্গাপুর-আনন্দনগর-১, দুর্গাপুর-আনন্দনগর-২ এবং চকপাড়া-আনন্দনগর বালি পুরসভা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে এই ছ’টি পঞ্চায়েত। অঞ্চলটি ডোমজুড় বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রতিটি পঞ্চায়েতে জল সরবরাহের জন্য কেএমডব্লিউএসএ-র পাম্প রয়েছে।
যাঁদের বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে তাঁদের প্রতি মাসে ৩০ টাকা কর দিতে হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেএমডব্লিউএসএ-র জলে লোহার পরিমাণ বেশি ও নোনতা বলে তা পানের অযোগ্য। বালতিতে কিছু ক্ষণ রাখলে জল লাল হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে গন্ধও বের হয়। বাসিন্দাদের কথায়: রাস্তার কল থেকে জল পড়ে না বললেই চলে। গরমে লোডশেডিং বেশি হয় বলে জল সরবরাহ মাঝেমধ্যেই বিঘ্নিত হয়।
ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের দাবি, বাধ্য হয়েই জল কিনে খেতে হয়। বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় কিছু যুবক ভ্যানে করে বালি পুর-এলাকা বা বেলুড় থেকে ব্যারেলে জল এনে বিক্রি করেন। কেউ জলের জন্য মাসিক খরচ দেন। ১০ লিটারের ব্যারেলের জন্য দিতে হয় আট টাকা। বেশি হলে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। যাঁরা কিনতে পারেন না তাঁরা কয়েক কিলোমিটার দূরে দক্ষিণেশ্বর বা বরাহনগর থেকে সাইকেলে বা ট্রেনে পানীয় জল নিয়ে আসেন।
বালি-জগাছা ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের চৈতালী দেবনাথ বলেন, “জলস্তর অনেক নেমে গিয়েছে। তাই জল তুলতে সমস্যা হচ্ছে। কেএমডব্লিউএসএ কিছু নতুন পাম্প বসাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাতে সমস্যা মিটবে না। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট একমাত্র সমাধানের পথ। কিন্তু জায়গার সমস্যা থাকায় কাজ শুরু করতে অসুবিধা হচ্ছে।”
কেএমডব্লিউএসএ সূত্রে খবর, বালি গ্রামাঞ্চলের জল সমস্যা মেটানোর জন্য নিশ্চিন্দা, ঘোষপাড়া, দুর্গাপুর-অভয়নগর ১ ও ২, আনন্দনগর এলাকায় গভীর নলকূপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাইপলাইনগুলিও পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিছু জায়গায় পাইপ লাইন বদলানো হচ্ছে। এ ছাড়াও চকপাড়া-আনন্দনগর এলাকায় নতুন পাম্প ও লাইন বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজীববাবু বলেন, “আপাতত এ ভাবে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। জমি নির্দিষ্ট হয়ে গেলে জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে। গঙ্গার জল পাইপের মাধ্যমে এখানে এনে পরিস্রুত করে সরবরাহ করা হবে।”

ছবি: রণজিৎ নন্দী




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.