বিয়ের কথাবার্তা শুরু হয়েছিল বাড়িতে। সে কথাই পৌঁছে গেল প্রশাসনের কানে। প্রশাসনও ব্যবস্থা নিয়ে আরও এক নাবালিকার বিয়ের উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
নিয়মিত প্রচারের ফলে নাবালিকা বিয়ে নিয়ে যে সচেতনতা বেড়েছে, তার ফের একবার প্রমাণ মিলল নদিয়ার পলাশিতে। কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, “ওই নাবালিকার বিয়ের উদ্যোগ হচ্ছে বলে লিখিত অভিযোগ এসেছিল আমাদের দফতরে। তারপরেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।” কালীগঞ্জের বিডিও তনুশ্রী বটব্যাল বুধবার সন্ধ্যায় পলাশিতে রিঙ্কু হালদার নামে ওই নাবালিকার বাড়ি যান। তিনি বলেন, “অভিযোগ যে ঠিক ছিল, তা আমরা ওই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বুঝতে পেরেছি। খুবই দরিদ্র ওই পরিবার ওই নাবালিকার বিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছিল। তবে তাঁরা শেষ পর্যন্ত আমাদের কথা বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা কথা দিয়েছেন, আঠারো বছর হওয়ার আগে রিঙ্কুর বিয়ে দেবেন না।” সম্প্রতি বাঁকুড়ার তালড্যাংড়ায় এক নাবালিকার
|
রিঙ্কু হালদার |
বিয়ে এ ভাবেই বন্ধ হয়েছে। ওই নাবালিকার এক পরিচিত প্রশাসনকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন। তারপরেই প্রশাসন পদক্ষেপ করে।
বছর পনেরোর রিঙ্কু ষষ্ঠ শ্রেণি পেরিয়েছে। তারপরে আর পড়াশোনা করেনি। তারা দুই ভাই এক বোন। রিঙ্কুই বড়। বাবা জয়গুরু হালদার ভ্যানচালক। তিনি বলেন, “বেশি লেখাপড়া জানি না। ১৮ বছরের আগে যে মেয়ের বিয়ে দিতে নেই তা-ও জানতাম না। ভেবেছিলাম এই অভাবের সংসারে তাড়াতাড়ি যদি মেয়ের বিয়েটা দিতে পারি। তবে বিডিওর কথা মতো এখন আর মেয়ের বিয়ের কথা ভাবছি না।” রিঙ্কুও বলে, “আমি এখনই বিয়ে করতে চাই না। পরে বাড়ির লোক যা ঠিক করবে তাই হবে।” রিঙ্কুর বিয়ের কথা চলছে বলে যিনি অভিযোগ করেছিলেন, প্রশাসন তাঁর নাম পরিচয় গোপন রেখেছে।
কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আলতাব হোসেন বলেন, “এই এলাকায় অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তা দূর করতে প্রচার দরকার। আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি।” তবে পলাশি স্টেশনের কাছে ওই এলাকায় সাক্ষরতার হার ৬০ শতাংশের বেশি। এলাকায় বিদ্যুৎ ও পাকা সড়ক রয়েছে। রয়েছে ছাত্রীদের হাইস্কুল সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। তবু কেন এখানে নাবালিকা বিয়ের হার বেশি? মহকুমাশাসক পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “এলাকায় যে সচেতনতা রয়েছে, তার প্রমাণ রিঙ্কুর বিয়ের কথা শুরু হতেই তা আমরা জানতে পারি। তবে একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে, এখনও নাবালিকাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ওই এলাকাতে হয়। আমরা তাই প্রচারে আরও জোর দেব, তবে সাধারণ মানুষের শুভবুদ্ধির উপরেও ভরসা রাখছি।” |