|
|
|
|
অস্ত্র-সহ ৭ ‘মাওবাদী’র আত্মসমর্পণ ঝাড়গ্রামে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
ঝাড়গ্রামে সিআরপি-র দফতরে এসে বুধবার রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণ করলেন ৭ ‘সন্দেহভাজন মাওবাদী’।
ঝাড়গ্রাম শহরের কদমকাননে সিআরপি-র ১৮৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে এ দিন যাঁরা আত্মসমর্পণ করলেন তাঁরা জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেন বা সুচিত্রা মাহাতোর মতো মাওবাদীদের ‘প্রথম সারি’র কেউ নন। পুলিশ-সিআরপি’র দাবি অনুযায়ী, এক জন শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় অভিযুক্ত, বাকি ৬ জনই ‘মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য’। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী, ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা অবশ্য এই আত্মসমর্পণকে ‘সরকারের সাফল্য’ বলেই দাবি করেছেন।
রাজ্যে এক বছরের শাসন-পর্বে ‘জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো’ তাঁদের অন্যতম ‘সাফল্য’ বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। এ ক্ষেত্রে ‘সরকারি আহ্বানে সাড়া দিয়ে’ জাগরী-রাজারাম-সুচিত্রার মতো মাওবাদী নেতা-নেত্রীর আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গেরও উল্লেখ করা হয়। এ দিনও সুকুমারবাবু বলেন, “আমাদের সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েই ভুল পথে চলে যাওয়া লোকজন মূলস্রোতে ফিরছেন।” পক্ষান্তরে এ দিনই মেদিনীপুরে দলীয় বৈঠকে আসা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কটাক্ষ, “এক সময় তৃণমূলের লোকজনই জনগণের কমিটি করেছিল। ওই কমিটির সঙ্গে মাওবাদীদের যোগ রয়েছে। এখন তো আবার অনেকে কমিটি থেকে তৃণমূলেও ফেরত আসছে!” |
|
পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী ৭ মাওবাদী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
সিআরপি এবং পুলিশের দাবি, এ দিন আত্মসমর্পণকারী জগন্নাথ সোরেন ওরফে ‘হিরো’ মাওবাদীদের বিনপুর জোনাল কম্যান্ডার। শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলায় অভিযুক্ত। ইনসাস, ৫৬ রাউন্ড কার্তুজ, দু’টি ম্যাগাজিন ও একটি পাউচ জমা দেন জগন্নাথ। পুলিশ সূত্রের আরও দাবি, শিলদা-কাণ্ডে মাওবাদীরা যে পিক-আপ ভ্যানটি ব্যবহার করেছিল, সেটি জগন্নাথের বাবার নামেই কেনা হয়েছিল। পরে ভ্যানটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বাকি ৬ আত্মসমর্পণকারী হলেনবিনপুরের গোসাইবাঁধ গ্রামের শশধর মাহাতো ওরফে সুবল, বিনপুরেরই বলরামপুরের খগপতি মাহাতো, বাঘুয়াশোলের ললিত মাহাতো, বাঁদরবনির সুখেন্দ্রনাথ বাস্কে, ঝাড়গ্রামের পাঁচামি-র বুদ্ধেশ্বর হাঁসদা ও নিরঞ্জন নাগ। এই ৬ জনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট অভিযোগ বা কোন ঘটনায় তাঁরা বিশেষ ভাবে জড়িততা জানানো হয়নি প্রশাসনিক তরফে। তবে জঙ্গলমহলে খুন-নাশকতা-সন্ত্রাসের কয়েকশো অভিযোগের বিষয়টি মনে রাখলে অনেক ‘দুঁদে’ মাওবাদীই যে এখনও অধরা, তা মেনে নিয়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক কর্তা।
সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের সামনে ‘হিরো’ ও তাঁর ৬ সঙ্গীর কেউই মনে করতে পারেননি, অস্ত্রগুলি তাঁরা কবে ও কোথা থেকে পেয়েছিলেন। জগন্নাথের দাবি, তিনি মাওবাদী স্কোয়াডে থাকলেও নাশকতায় যোগ দেননি। তবে শশধর মাহাতোর সঙ্গে থাকতেন। অন্যদের বক্তব্য, “মাওবাদীদের কথায় ভুল পথে গিয়েছিলাম। সরকারের প্যাকেজে আকৃষ্ট হয়ে আত্মসমর্পণ করলাম।”
আত্মসমর্পণের এই পর্বে বিতর্কের মাত্রা জুড়েছে নিরঞ্জন নাগের স্ত্রী রিনা নাগের দাবি, “আমার স্বামীকে গ্রামবাসীদের কেউ কেউ মাওবাদী সাজিয়ে সিআরপি-র হাতে তুলে দিয়েছে।” কারা ওই গ্রামবাসী? রিনাদেবীর জবাব, “ওরা টিএমসি-র লোক।” বুদ্ধেশ্বর হাঁসদার মা ডোমনি হাঁসদাও দাবি করেন, “আমার ছেলে মাওবাদী নয়।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য পুরো বিষয়টি ‘প্রশাসনিক উদ্যোগের পরিণতি’ বলেই দাবি করেছেন।
যদিও সিআরপি-র একটি সূত্রের খবর, ‘তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ’ জনজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমেই গত বছরের শেষাশেষি হিরো-সহ কয়েক জন আত্মসমর্পণের জন্য সিআরপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের কয়েক জনকে কাজে লাগিয়েই গত নভেম্বরে মাওবাদী নেতা কিষেণজিকে ‘কোণঠাসা’ করে যৌথ বাহিনী।
আত্মসমর্পণকারীদের প্রত্যেককে এ দিন পুষ্পস্তবক দিয়ে ও উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান ডিজি। তিনি বলেন, “রাজ্যের বর্তমান সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে (মাওবাদীদের) মূলস্রোতে ফেরার প্রক্রিয়াটি অন্য মাত্রা পেল।” ডিজি জানান, আত্মসমর্পণকারীরা রাজ্য সরকার ঘোষিত আর্থিক প্যাকেজ (নগদ এককালীন ৫০ হাজার টাকা এবং ২ লক্ষ টাকার স্থায়ী আমানত, অস্ত্র-পিছু বাড়তি অর্থ) পাবেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাঁদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা হবে। |
|
|
|
|
|