ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজে যে পদ্ধতিতে একটি সুড়ঙ্গ কাটা হয়েছে, তা পূর্ব ভারতে প্রথম বলে দাবি করলেন কর্তৃপক্ষ। পশ্চিমমুখী ভূগর্ভস্থ লাইনে প্রথম ওই সুড়ঙ্গ কাটতে ব্যবহার করা হয়েছে একশো কোটি টাকা দামের জার্মান যন্ত্র। সুড়ঙ্গ কাটার পাশাপাশি দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সুড়ঙ্গ অটুট রাখতে ভিতরে গোলাকার কংক্রিটের কাঠামো বা ‘রিং’ বসাতে বসাতে এগিয়েছে সেই যন্ত্র। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পূর্ব-পশ্চিম মেট্রো রেলের মোট ছ’টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনের মধ্যে প্রথম ওই সুড়ঙ্গ কাটার কাজের সূচনা হয়েছিল সুভাষ সরোবর থেকে। প্রস্তাবিত ফুলবাগান স্টেশনে পৌঁছে কাজ শেষ হয় মঙ্গলবার।
বড় কোনও দুর্বিপাক না-ঘটিয়ে সুভাষ সরোবর থেকে ফুলবাগান স্টেশন পর্যন্ত দোতলা বাড়ির সমান উঁচু সুড়ঙ্গ কাটার কাজ তিন মাসের আগেই শেষ করে ফেলাটা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের পক্ষে রীতিমতো আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছে সরকারি মহল। এর পরে যন্ত্রটি ফুলবাগান থেকে ফের সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে এগোবে শিয়ালদহ স্টেশনের দিকে। একই সঙ্গে পূর্বমুখী লাইনের জন্য সুভাষ সরোবর থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আর একটি জার্মান যন্ত্র। মাসখানেকের মধ্যে ওই অংশের দ্বিতীয় লাইনটির জন্যও সুড়ঙ্গ তৈরি হয়ে যাবে।
এই আধুনিক জার্মান যন্ত্রগুলি দিনে ১০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কাটার ক্ষমতা রাখে। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, প্রথম কাজ হওয়ায় সুভাষ সরোবর থেকে ফুলবাগান পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কাটতে মাস তিনেক সময় লাগলেও এর পরে একটি ভূগর্ভস্থ স্টেশন থেকে পরের স্টেশন পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খুঁড়তে দু’মাসের বেশি সময় লাগবে না ওই যন্ত্রের।
সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে হাওড়া ময়দান সংযোগকারী ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেল সল্টলেকের দিকের ছ’টি স্টেশনে প্রায় ছ’কিলোমিটার পথ চলবে মাটির উপর দিয়ে। মাটির উপরের বাকি পাঁচটি স্টেশন হবে করুণাময়ী, সেন্ট্রাল পার্ক, সিটি সেন্টার, বেঙ্গল কেমিক্যালস এবং সল্টলেক স্টেডিয়াম।
তার পরেই ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ স্টেশন, সেন্ট্রাল, মহাকরণ, হাওড়া স্টেশন হয়ে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ পথ মেট্রো যাবে মাটির নীচ দিয়ে। মাঝখানে হুগলি নদীর নীচ দিয়েও যাবে সুড়ঙ্গপথে।
হুগলি নদীর নীচ দিয়ে হাওড়া স্টেশন এবং তার পরে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত ভূগর্ভে লাইন পাতার জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পুরো কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে আশা। সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে তার ভিতরে লাইন পাতার জন্যও আন্তর্জাতিক দরপত্র ডাকা হয়েছে। জুনের মধ্যে সেই বরাত চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষের আশা। |