কলকাতায় দাম ৭৭.৮৮ টাকা
দাম বৃদ্ধি পেট্রোলের, ক্ষুব্ধ মমতা
ক ধাক্কায় তেলের দাম লিটার পিছু সাড়ে সাত টাকা বাড়িয়ে দিল তেল সংস্থাগুলি। সরকারের যুক্তি, বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কায় ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিপুল ক্ষতি এড়াতেই তেল সংস্থাগুলিকে দাম বাড়াতে হয়েছে। অভূতপূর্ব এই মূল্যবৃদ্ধিকে ঘিরে সরগরম গোটা দেশ। বিরোধীরা তো বটেই, কেন্দ্রে সরকারের শরিক দলগুলিও আজ কড়া ভাষায় এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুর চড়িয়েছে ইউপিএ-র প্রধানতম শরিক তৃণমূল। তেলের দাম এক লাফে এতখানি বাড়ানোর সমর্থনে কেন্দ্র যে যুক্তি দিয়েছে, তা মানতে নারাজ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের বৃদ্ধির ফলে কর যোগ করে কলকাতায় পেট্রোলের দাম বেড়ে দাঁড়াল লিটার প্রতি ৭৭ টাকা ৮৮ পয়সা।
পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই মহাকরণে মমতা বলেন, “শরিকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই যে ভাবে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, তা অন্যায়।” বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়েই দায় চাপিয়ে তাঁর মন্তব্য, “শুধু দাম না বাড়িয়ে, জনগণের উপরে চাপ না বাড়িয়ে, পরিকল্পনা করা উচিত ছিল সরকারের।” এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকারান্তরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিকেই আঙুল তুলেছেন, তা নিয়ে অনেকটাই নিঃসংশয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, মমতা আজ যে ভাবে সরকারকে আক্রমণ করেছেন, তা কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘাত আরও তীব্র হওয়ারই ইঙ্গিত।
স্থায়িত্বের প্রশ্নে এখনই ইউপিএ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবেন না বলে জানিয়েছেন মমতা। তবে তিনি যে কেন্দ্রের ওপর চাপ ক্রমশ বাড়াবেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “বেরিয়ে আসছি না বলে আমাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা নয়।”
সূত্রের খবর, সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল ফোন করেন। শরিকদের সঙ্গে কথা না বলে কেন একতরফা তেলের দাম বাড়ানো হল, সে বিষয়ে আহমেদের কাছে ক্ষোভ জানান মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস নেতৃত্বকে এক রকম ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে তিনি আহমেদকে বলেন, ‘মুলায়ম-লালুকে সঙ্গে নিয়ে সরকার চালিয়ে যাবেন বলে যদি আশা করেন, তা হলে ভুল ভাবছেন। এ ভাবে জন-বিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের পাশে কেউই দাঁড়াতে চাইবে না। তৃণমূল তো নয়-ই’।
তৃণমূল-সহ শরিকদের তরফে যে এ রকম আক্রমণ আসবে, তা আঁচ করেছিল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্ররাও সরকারের সুরেই বলেন, “মানুষের উপর বোঝা বাড়ার জন্য কংগ্রেসও দুঃখিত। কিন্তু পরিস্থিতি সরকারের হাতে নেই। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে পড়ে কেন্দ্র বাধ্য হয়েই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পেট্রোলের দাম বাড়ার কথা ঘোষণা হতেই লম্বা লাইন কলকাতার একটি পাম্পে।
বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
সরকার তথা কংগ্রেস শুধু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ঘাড়ে দায় চাপালেও অর্থনীতিবিদদের একটা বড় অংশের মত আলাদা। তাঁদের বক্তব্য, শুধু টাকার অবমূল্যায়নই নয়, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতাও এক লাফে এতটা দাম বৃদ্ধির কারণ। পেট্রোলের দাম বিনিয়ন্ত্রণ করার পর এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে প্রতি ১৫ দিন অন্তর আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম অনুযায়ী এ দেশে দাম বাড়াবে-কমাবে তেল বিপণন সংস্থাগুলি। কিন্তু গত বার তেলের দাম বাড়ানোর পর শরিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করায় সেই প্রক্রিয়া সরকারই স্থগিত রাখে। গত নভেম্বরে শেষ বার পেট্রোলের দাম বাড়ার পরে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেন। চাপের মুখে পেট্রোলের দাম দু’দফায় কিছুটা কমানোও হয়। তার পরে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম যথেষ্ট বাড়লেও কখনও পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন, কখনও সংসদের বাজেট অধিবেশন নির্বিঘ্নে চালানোর তাগিদে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল সরকার। এখন সরকারের সেই দায় তুলনায় কম। কারণ সদ্য শেষ হয়েছে সংসদের অধিবেশন। তার উপর সামনে কোনও বিধানসভা ভোট নেই। তাই এখন দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নিল সরকার। কিন্তু এত দিন ধরে দাম না বাড়ানোর মাসুল এক ধাক্কায় চাপিয়ে দিল আম-আদমির ঘাড়ে।
এই অবস্থায় আজ স্বাভাবিক ভাবেই কোনও শরিক কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াতে রাজি হননি। তৃণমূলের সুরেই সরকারের সমালোচনা করেছে ডিএমকে, এনসিপি। এমনকী কাল ইউপিএ-র তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যে মুলায়মকে আপ্যায়ন করে কেন্দ্রে স্থায়িত্বের বার্তা দিতে চেয়েছিল কংগ্রেস, তাঁর দলও বলেছে, এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা আজ বলেন, “এ হল অর্থনীতি ও রাজনীতির চিরন্তন লড়াই। এখন আর একদলীয় সরকার নেই যে কেন্দ্র যা সিদ্ধান্ত নেবে, তার সপক্ষে সরকারের সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়াবেন। এখন সব কঠিন সিদ্ধান্তের দায় জোটের প্রধান দলকেই ঘাড়ে নিতে হয়।” কংগ্রেসের ওই নেতার বক্তব্য, নিজস্ব রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় কোনও শরিক দলই যে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের অংশীদার হতে চাইবে না, তা জানাই ছিল। দু’বছর বাদে লোকসভা ভোট। সে দিকে তাকিয়ে সকলেই এখন দামবৃদ্ধির সমালোচনা করবে। তার মানে এই নয় যে এরা সমর্থন প্রত্যাহার করবে। বরং কংগ্রেসের এখন বড় চিন্তা নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কারণ, মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এর পর সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেস বিরোধিতার হাওয়া আরও জোরদার হবে।
ঐতিহাসিক পতন-উত্থান
 
যে ভাবে পড়ছে টাকা আপনার উদ্বেগ
বাড়বে খরচ
ক্ষোভের বার্তা
• যে ভাবে একতরফা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেটা অন্যায়
• এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কেন শরিকদের সঙ্গে কথা বলা হল না
• এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগে আরও ভাল করে হাল ধরা উচিত ছিল
• আমরা স্থায়িত্বের পক্ষে, তাই বেরিয়ে আসছি না
• প্রতিবাদ-প্রতিরোধের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা নয়
তথ্যসূত্র: স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ও সরকারি পরিসংখ্যান

পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির যে সম্পর্কের কথা কেন্দ্রের তরফে যুক্তি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে, তা মানতে নারাজ মমতা। তিনি বলেন, “আগে বলা হত আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে এখানেও পেট্রোলের দাম বাড়বে। কমলে কমবে। তা হলে এই সময়ে দাম বাড়ানো হল কেন?” মমতার কথায়, গত মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১২৫ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা কমে হয়েছে ১০৮ ডলার। তা সত্ত্বেও পেট্রোলের দাম বাড়ল কেন? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কারণটা মনে হচ্ছে, স্টক মার্কেটে যাঁরা বিনিয়োগ করেন, তাঁরা অর্থ তুলে নিচ্ছেন। সাঙ্ঘাতিক ভাবে টাকার মূল্য কমে গিয়েছে। তাঁরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। এটা দেশের পক্ষে বিপদ বলে মনে করি। দেশের আর্থিক ব্যবস্থা যে ভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আমি চিন্তিত।” এই পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রের আর্থিক নীতিকেই দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.