ভাঙা রাস্তায় পড়ে যেতে পারে দু’বছরের মেয়ে। তাকে রেললাইনে দাঁড় করিয়ে রেখে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে মোটরবাইক পার করছিলেন বাবা। কাটোয়া-হাওড়া লোকাল তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল।
বুধবার সকালে কাটোয়া শহরের কাছেই বেড়া ঘোষপাড়ার লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়। মেয়ের নাম দেবাঞ্জনা চক্রবর্তী (২)। বাড়ি শহরেরই ঘোষহাট চাঁপাপুকুর পাড়ায়। ট্রেনের ধাক্কায় বহু দূরে ছিটকে গিয়েছিল তার দলা পাকানো দেহ। সেখান থেকে দেহটি তুলে বাইকে চাপিয়ে প্রথমে পাঁচঘরা মোড়, সেখান থেকে রিকশায় কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবা আদিত্য চক্রবর্তী।
|
দেবাঞ্জনা |
কাটোয়া রেল পুলিশের ওসি তুষার সর্দার বলেন, “কাটোয়া স্টেশন থেকে আমাদের নিয়মমাফিক বিষয়টি জানানো হয়নি। তবে ঘটনার কথা শুনেছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিত্যবাবু স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনি ও তাঁর স্ত্রী মুনমুনের একমাত্র সন্তান দেবাঞ্জনা। রোজ সকালে মোটরবাইকে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরোতেন আদিত্য। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ তেমনই বেরিয়েছিলেন। আদিত্যবাবু জানান, প্রথমে তাঁরা যান পানুহাট। মেয়ে লিচু খেতে চেয়েছিল। পানুহাট বাজারে লিচু না পেয়ে তাঁরা কাটোয়া শহরে ফিরছিলেন। দাঁইহাটে যাওয়ার রাস্তা দিয়ে ঘুরে একটি আশ্রম পেরিয়ে বেড়া ঘোষপাড়া লেভেলক্রসিং হয়ে শহরে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
আদিত্যবাবু বলেন, “লেভেলক্রসিংয়ের জায়গাটা ঢালু। নীচে ভাঙাচোরা রাস্তা। মেয়ে বাইক থেকে পড়ে যেতে পারে ভেবে রেললাইনে ওকে দাঁড় করিয়ে বাইক পার করাতে যাই। হঠাৎ শুনি ট্রেনের আওয়াজ। মেয়েকে বাঁচাতে ছুটি। কিন্তু তার আগেই ট্রেন ওকে ধাক্কা মারে। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ক্ষতবিক্ষত দেহ ছিটকে পড়ে।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ব্যান্ডেল শাখায় ডবল লাইনের কাজ চলছে। বেড়া ঘোষপাড়ায় ওই কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পুরনো লাইন দিয়ে এখনও ট্রেন চলচল করে। নতুন লাইনটি এখনও ব্যবহার হয়নি। আদিত্যবাবু তাঁর মেয়েকে পুরনো লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেই মোটরবাইক পার করছিলেন। |
মেয়ে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন মুনমুন। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। আত্মীয়স্বজন সকলেই আদিত্যকে দায়ী করছেন। আদিত্যও দায়ী করছেন নিজেকেই। তাঁর কথায়, “মুহূর্তের নির্বুদ্ধিতায় আমার এত বড় সবর্নাশ হল।” তবে তাঁর অভিযোগ, বেড়া ঘোষপাড়ায় বাঁকের মুখে লেভেলক্রসিং। গোটা এলাকা গাছপালায় ঢাকা। সে কারণেই লেভেলক্রসিংয়ে ওঠার সময়ে ট্রেন দেখতে পাননি তিনি। তাঁর সঙ্গে একমত অন্য বাসিন্দারাও। তাঁদের দাবি, ওই লেভেলক্রসিংয়ে রক্ষীর ব্যবস্থা করা হোক। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই জায়গায় নতুন স্টেশন করার পরিকল্পনা রয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে লেভেলক্রসিংয়ে প্রহরার ব্যবস্থা করা হবে।
|