অর্থ বরাদ্দ হলেও জমা পড়েনি দরপত্র |
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ শিকেয় শালবনিতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শালবনি |
প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। নিয়ম মেনে আহ্বান করা হয়েছিল দরপত্রও। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষে দেখা গেল, একটি দরপত্রও জমা পড়েনি! অগত্যা, নতুন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির কাজ ঝুলেই রইল শালবনিতে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজ কবে শুরু হবে, কবেই বা শেষ হবে, কারও কাছেই উত্তর নেই। শালবনির বিডিও জয়ন্ত বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘নতুন করে ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে।”
একটা সময় ছিল যখন ‘মাওবাদী প্রভাবিত’ এলাকায় কাজ করতে চাইত না অধিকাংশ ঠিকাদার সংস্থা। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। তা সত্ত্বেও কেন কাজ করতে অনীহা? জানা গিয়েছে, প্রকল্পের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, সেই অর্থে কাজ হলে লাভ হবে না বলেই মনে করছে ঠিকাদার সংস্থাগুলি। তাই এই অবস্থা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি ‘পিছিয়ে পড়া’ এলাকা হিসাবেই চিহ্নিত। এখানে নতুন করে কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলে গ্রামবাসীরাই উপকৃত হবেন বলে মনে করছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শালবনিতে এখন সব মিলিয়ে ৩৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নতুন করে আরও ১০টি তৈরি হওয়ার কথা। এর মধ্যে ৯টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য গত মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।
এই এলাকায় সব মিলিয়ে ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ভীমপুর, পিরাকাটা আর গোদাপিয়াশাল। তবে সেখানে উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। চিকিৎসক, নার্স, কর্মীর অভাব। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরেই নির্ভর করেন। শালবনির বিএমওএইচ পূর্ণচন্দ্র হাঁসদা বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত অভাব রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।” সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “নতুন করে আরও কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হলে এলাকার মানুষই উপকৃত হবেন।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, বাঁকিবাঁধ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঢ্যাঙ্গাশোল ও হাতিমারি, বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর, দেবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবুইবাসা ও দেবগ্রাম, ভীমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রামেশ্বরপুর ও পিড়রাকুলি, গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথরকুমকুমি, কাশীজোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আড়াবাড়ি এই ৯টি এলাকায় নতুন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এক-একটি কেন্দ্র তৈরির জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ১১ লক্ষ ৯৪ হাজার ১৬৮ টাকা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট-কেন্দ্রে জল-সরবরাহ ও বিদ্যুতের কাজও করতে হবে। জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রে দরপত্রের জন্য আবেদন করার শেষ দিন ছিল ২৩ এপ্রিল। টেন্ডার-ফর্ম বিলির শেষ দিন ছিল ২৫ এপ্রিল। আর টেন্ডার-ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৭ এপ্রিল। কিন্তু কোনও ঠিকাদার সংস্থাই সেই কাজ করতে আগ্রহ দেখায়নি।
এই প্রথম নয়, এমন সমস্যা শালবনিতে এর আগেও হয়েছে। বছর তিনেক আগে এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছিল। পরে মাওবাদী-সমস্যার জেরে সেই কাজ ব্যাহত হয়। এখনও কয়েকটি প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “তখন মাওবাদী-সমস্যার জন্য অধিকাংশ ঠিকাদার সংস্থা মাঝপথে কাজ ছেড়ে দিত।” এখন মাওবাদী-সমস্যা নেই। তবু নতুন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি নিয়েও ফের জটিলতা দেখা দিল। |