|
|
|
|
পরিষেবা-পরিচয়ে পুরসভা/৩ |
বেহাল পথ, বাতিও জ্বলে না শিল্পশহরে |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
বিস্তীর্ণ হলদিয়া পুর-এলাকার পথঘাট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ। রাস্তা বেহাল আর পথবাতির অভাবের কথা পুরবাসীর মুখেমুখে। যদিও বিদায়ী পুরবোর্ডের উপ-প্রধান নারায়ণ প্রামাণিকের দাবি, “আমাদের পুরসভার মতো পথঘাট ও পথবাতি অন্য কোনও পুর-এলাকায় নেই।” অন্য দিকে, পুরসভার বিরোধী দলনেতা সুধাংশু মণ্ডলের অভিযোগ, “গ্রামীণ এলাকা এবং তৃণমূলের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলি বরাবরই রয়ে গিয়েছে বঞ্চিত।”
পুরভোটের কিছু দিন আগে অবশ্য পথ সারাতে এবং পথবাতি লাগানোর কাজে কিছুটা উদ্যোগী হয়েছে বাম-পুরবোর্ড। কিন্তু সেটা ভোটের কথা ভেবে বলেই কটাক্ষ বিরোধীদের। একই মত একাংশ নাগরিকেরও। মাটির বা মোরামের রাস্তাও রয়ে গিয়েছে অনেকাংশেই। সেখানে পথবাতিরও বালাই নেই। নতুন নির্মিত ৪ থেকে ৫ ফুটের ঢালাই রাস্তার সংকীণর্র্তা নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। পাশাপাশি দু’টি মোটরবাইক চলারও অযোগ্য। পুর-এলাকার ১, ২, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তার দশা এমনই। এখানে বেশিরভাগ রাস্তাতেই নেই পথবাতিও। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এমদাদুল ইসলামের কথায়, “রাস্তা এতটাই সরু যে হেঁটে চলা ছাড়া উপায় নেই। পূর্ব রামনগরের সংকীণর্র্ রাস্তা দিয়ে একটা ভ্যানও যেতে পারে না ঠিক ভাবে।” পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠের অবশ্য যুক্তি, “রাস্তার জন্য যেমন জায়গা ছিল তেমনই করতে হয়েছে।” ওই ওয়ার্ডেরই তৃণমূল কাউন্সিলর সুধাংশুবাবুর আবার অভিযোগ, “আমাদের দলের দখলে থাকা ওয়ার্ড বলেই বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।” |
|
সিটি সেন্টার-দুর্গাচকের রাস্তায় পথবাতি বসিয়েছে এইচডিএ। নিজস্ব চিত্র |
পুর-নাগরিক হয়েও কেন পথবাতি থেকে তাঁরা বঞ্চিত, সে প্রশ্ন রয়েছে পুর-এলাকার ৭, ১১, ১২, ১৪, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক ছাড়া কোথাও সে ভাবে পথবাতি নেই। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রানিচক-চিরঞ্জীবপুরের মূল-রাস্তায় আগে পথবাতি থাকলেও এখন সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আর জ্বলে না। ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা, পেশায় ঠিকাদার রঙ্গলাল মান্নার কথায়, “আমাদের এলাকার কাউন্সিলর এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পথবাতি কবে থেকে খারাপ। বহু রাস্তা বেহাল। কিন্তু কারও হেলদোল নেই।” কাউন্সিলর সৌমি দাসের সাফাই, “এলাকায় ঢুকলেই আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।” তাঁর অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। অন্য দিকে টাউনশিপেও ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোয়ার্টার’ এলাকাগুলি ছাড়া বাকি অংশে পথবাতির দশা একই। কোথাও পথবাতি নেই, কোথাও আবার অধিকাংশই খারাপ। যেমন ২৩, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আইওসি, কাস্টমস কোয়ার্টার এলাকায়। সংস্থার উদ্যোগেই উন্নয়ন হয়েছে বেশিরভাগ অংশে। আর বাদবাকি এলাকায় পথবাতির অভাব রয়ে গিয়েছে। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আবার অভিযোগ, রাস্তায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ কেউ পথবাতি লাগিয়েছেন। তবে বেশিরভাগই জ্বলে না। এলাকার তৃণমূল নেতা তপন মাইতির অভিযোগ, “রাস্তা বন্ধ করে সিপিএমের লোকেরা ব্যক্তিগত পাঁচিল তুলেছে। পথবাতি তো নেই বললেই চলে। যা আছে তা এলাকাবাসীর নিজস্ব।” যদিও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদর্শন হাজরা বলেন, “আসলে যে সব রাস্তা নিয়ে ব্যক্তিগত পাঁচিলের অভিযোগ তা পুরসভার নকশায় ঠিকই আছে।” তবে পথবাতির যে অভাব রয়েছে, তা প্রকারান্তরে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
রাস্তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পুরসভার অধিকাংশ এলাকাতেই। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, পুর-এলাকায় থেকেও তাঁদের এত দিনেও মাটির, বড়জোর মোরামের রাস্তায় চলতে হচ্ছে। ১২, ১৪, ১৬, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তাই মোরাম বা মাটির। পাকা রাস্তাও সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। এ নিয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সুভাষ করণের অবশ্য দাবি, “সব সমস্যার সমাধান একসাথে করা যায় না। রাস্তার ক্ষেত্রে যে যে জায়গায় সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করেছি।” ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিটি কোয়ার্টার এলাকা বাদ দিলে অধিকাংশ এলাকায় পথবাতিও নেই। রাস্তাও বেশিরভাগ অংশেই মোরামের। এমনকী এলাকার বিষ্ণুরামচক ও সাওতানচক গ্রামে পথবাতি তো দূরের কথা, বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। তা হলে পুরসভা হয়ে কী লাভ হল, সে প্রশ্ন ঘুরছে হলদিয়ায়।
পরিষেবার প্রশ্নে পুর-কৃর্তপক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ গুরুতর। বিরোধী দলনেতা সুধাংশু মণ্ডলের যেমন অভিযোগ, “সিপিএমের ওয়ার্ডে বেছে বেছে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আমার নিজের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিল্প-কারখানাগুলি থেকে পুরসভা বছরে ৩০ কোটি টাকা কর আদায় করে। সেই আয়ের ছিটেফোঁটাও আমাদের ওয়ার্ডের উন্নয়নে খরচ করে না।” ইন্দিরা আবাস প্রকল্প, বাধর্র্ক্য ভাতার উপভোক্তা তালিকা নিয়েও একই রকম পক্ষপাত, প্রকৃত গরিবকে বঞ্চিত করে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে সুবিধা বিলির অভিযোগ। বিনোদনের ক্ষেত্রেও পরিকাঠামো নির্মাণে পুর-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যর্থতার নালিশ। কয়েকটি এলাকায় পার্ক থাকলেও প্রায় কোনও ওয়ার্ডেই খেলার মাঠ নেই। আবার যে এলাকায় পার্কগুলি আছে, সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠটি পুরসভার নিজস্ব নয়। তা এইচএফসি কর্তৃপক্ষের। এইচএফসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ওই মাঠ ও পরিত্যক্ত কোয়ার্টার--কিছুরই সংস্কার হয় না। দায় এড়িয়ে চলেছে পুরসভাও।
পুরভোট আসে যায়, অবস্থা বদলায় না। এ বারও কি তাই হবেপ্রশ্ন পুরবাসীর। |
|
|
|
|
|